পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি জটিলতা নিয়ে বাঁশখালীর প্রত্যন্ত উপকূলীয় গ-ামারা ইউনিয়নে গতকাল (সোমবার) ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভরত গ্রামবাসীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩ গ্রামবাসী মারা গেছে। ১০ পুলিশ, আনসার সদস্যসহ আহত হয়েছে ৩০ জন। তাদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে ১৩ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক আনসার সদস্যসহ ৩ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে গ-ামারা গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে মরতুজা আলী (৫২), তার ভাই আংকুর আলী (৪৫), একই এলাকার নুর আহমদের ছেলে জাকের আহমদ (৩৫) মারা যান। রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) হাবিবুর রহমান ৩ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তাদের মধ্যে জাকের আহমদের লাশ চমেক হাসপাতালে আনা হয়েছে। বাকি ২ জনের লাশ গ্রাম থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছে পুলিশ। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুজ্জামানও রাতে সংঘর্ষে অন্তত ৩ জন গ্রামবাসী নিহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি কেনা, দালালি ও দখলবাজি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ ও উত্তেজনা চলে আসছিল। গতকাল দুপুরে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে এ ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। স্থানীয়রা ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ ও মিছিল করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ বেধে গেলে পুলিশ গুলি ছোড়ে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে, নির্বিচারে গুলি করেছে পুলিশ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল্লাহ জানান, দুই দিন আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করতে গিয়ে গ্রামবাসীর হামলার কবলে পড়েন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। দায়েরকৃত মামলায় গতকাল ভোরে ৭ জন এলাকাবাসীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এর প্রতিবাদে সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীর নেতৃত্বে গতকাল হাজীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ‘বসতবাড়ি রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে সমাবেশ আহ্বান করা হয়। একই স্থানে পাল্টা সমাবেশ আহ্বান করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা।
পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘটনায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে গ্রামবাসীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার জানান, গ্রামবাসী পুলিশকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করলেই সেখানে সংঘর্ষ হয়। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) মো. হাবিবুর রহমান জানান, এস আলমের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে দুই গ্রুপ একই জায়গায় সমাবেশ আহ্বান করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই জায়গায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ১৪৪ ধারা জারি করেন। এক পর্যায়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে একটি পক্ষ সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের ওপর আক্রমণ করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও গ্রামবাসী আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থল গন্ডামারা উপকূলীয় এলাকায় এখনো তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাঁশখালী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার জানান, একই স্থানে দুটি পক্ষ সমাবেশ আহবান করলে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু কয়লা প্রকল্পের বিরোধীরা পুলিশের উপর হামলা চালালে পুলিশ পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। স্থানীয় আবদুর রহমান, আবুল বশর, আলী নবী জানান, পুলিশ বিনা উস্কানিতে নিরস্ত্র জনতার উপর গুলি চালিয়েছে। এতে এক পরিবারের ২ জনসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বেশকিছুদিন ধরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, সমাবেশ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছিল। পরিবেশ বিপর্যয় ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারাবে এমন আশঙ্কা থেকে স্থানীয় একটি পক্ষ শুরু থেকে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। এলাকায় এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি দেখা দিলে গত ২৩ মার্চ পুলিশের উদ্যোগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, ইউএনও শামসুজ্জামান ও ওসি স্বপন কুমার মজুমদারের উপস্থিতিতে গন্ডামারা ইউনিয়নের সকাল বাজারে এক শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ওই সমাবেশ থেকে স্থানীয় জনগণ বাঁশখালীর লোকালয়ে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প না করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানালে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জনমত উপেক্ষা করে এখানে কয়লা প্রকল্প না করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হবে বলে জনগনকে আশ্বস্ত করেন। এরপর এলাকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ হয়ে এলেও গত শনিবার বিকেলে ব্যবসায়ী শহিদের নেতৃত্বে কয়লা প্রকল্পের লোকজন এলাকা পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তাদের বহনকারী দু’টি অটোরিক্সা ও ৩টি মোটরসাইকেল। এ নিয়ে মামলা হলে পুলিশ গতকাল ভোরে অভিযান চালিয়ে গন্ডামারা থেকে আসত আলী, হুমায়ুন কবির, শাহ আলম, বখতেয়ার ও লোকমানসহ ৭ জনকে আটক করে। তাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিকাল ৩টায় সমাবেশের ডাক দেয় বসতভিটা রক্ষা কমিটি।
উল্লেখ্য, চায়না সেবকো এইচটিজির সঙ্গে যৌথভাবে ৬০০ একর জমির ওপর ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম তথা দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী কোম্পানি এস আলম গ্রুপ। কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৭০ শতাংশের মালিকানা চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের, ৩০ শতাংশের মালিকানা থাকবে দুটি চীনা প্রতিষ্ঠানের। বিনিয়োগ করা ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার মালিকানা ও ঋণ দিচ্ছে চীনের প্রতিষ্ঠান দুটি। জার্মান ও আমেরিকান প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে জাহাজ থেকে কয়লা নামানোর জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে তৈরি করা হবে বেসরকারি বন্দরের মতো একটি জেটি। প্রকল্প চলাকালীন এখানে কাজ করবে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।