পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজিবুল হক পার্থ : বেপরোয়া কেন্দ্র দখল, জাল ভোটের মহোৎসব ও সহিংসতায় নিহতদের রক্তে মøান হচ্ছে তৃণমুলের ভোটউৎসব। তৃণমূলের এই ভোটে শুরু থেকে ছিল ভিন্ন আমেজ। বিশেষ করে গ্রামের মানুষের ভোটের রাজনীতির বাইরেও ভিন্ন আমেজ দিয়েছিল ভোটে। তাই গ্রাম-গঞ্জের এই ভোট আয়োজনের এক বছরেরও বেশি সময় আগ থেকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল ভোটের মাঠে। কিন্তু ভোটের সামনে এসে সেই উৎসব মাটি হচ্ছে। ভোটের আগ্রহ নেই তৃণমূলের ভোটারের প্রথম দুই ধাপের ভোটের পর অনেকেই প্রার্থী হতে চাচ্ছে না। প্রার্থীরাও আবার ভোটার কাছে গিয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে না।
দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ইউপি ভোটে প্রথম ধাপে ব্যাপক সহিংসতা ও কারচুপির অভিযোগ উত্থাপিত হয়। গত ২২ মার্চ ৭১২টি ইউপির ভোটকে কেন্দ্র করে নিহত হন ২৭ জন। আহত হন তিন সহস্রাধিক। গত ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯টি ইউপির ভোটে ১৫ জন নিহত হয়েছ। দুই ধাপে নির্বাচনে সারাদেশে ৪২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ঢাবি ছাত্র, শিশু, নারী, বৃদ্ধ, দোকানি, ফেরিওয়ালা ও সাধারণ সমর্থক। এছাড়াও ইউপিতে এপর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় কমপক্ষে চার হাজার হাজার ব্যক্তি আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে শতাধিক। প্রথম ধাপের তফসিলের পর থেকেই চলছে সংঘাত-সংঘর্ষ। শুধু ভোটের আগেই নয় ভোট পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। প্রথম ধাপের ভোটের পরে ২ জন দ্বিতীয় ধাপের ভোট পরবর্তী সহিংসতায় ৪ জন নিহত হয়েছে।
প্রথম দুই ধাপের ভোটে রক্তপাত-খুনোখুনির ঘটনায় ভোট থেকে সরে আসছে তৃণমূলের ভোটাররা। এরইমধ্যে দুই ধাপের নিহত হয়েছে ৪২ জন। আহত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার। আরো বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে ভোটের মাধ্যমে স্থায়ী দ্বন্দ্ব-বিবাদ বাড়ছে। ভোটের পর প্রার্থী, এজেন্ট, প্রিজাইডিং অফিসারের বাড়ীতে হামলা, মামলা, গ্রেফতারের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। অনেক প্রার্থী-সমর্থকের সম্পদ দখল করে নিচ্ছে প্রতিপক্ষ। শুধু পরজয়ী প্রার্থী নয় বিজয়ীরা হামলার শিকার হচ্ছে। সেই সাথে বাদ যাচ্ছে না তাদের সমর্থক-স্বজনরা। এহেন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আনন্দ মাটি হচ্ছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, চার হাজার দুই ইউনিয়নে ৪২ হাজার জন প্রতিনিধি নির্বাচনের লক্ষ্যে শুরু হয় ইউপি নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শেষে মোট ৬ ধাপে এ নির্বাচনের আয়োজন করে। ইতোমধ্যে প্রথম দুই ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে আরো দুই ধাপের বাকি দুই ধাপের ভোটের প্রাথমিক দিন ধার্য থাকলেও তা চূড়ান্ত হয়নি।
ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে গ্রামে-গঞ্জে চলছে উৎসবের আমেজ। গত বছরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনের পর থেকেই এই উৎসব শুরু হয়। গ্রামে-গঞ্জে ইউপির চেয়ারম্যানও মেম্বার প্রার্থীরা টানিয়েছেন ব্যানার-ফেস্টুন। সামাজিক এবং ধর্মী অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি বেড়ে যায় প্রার্থীদের। নিজ এলাকার উন্নয়নে সম্পৃক্ত থাকা, সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সমাধানের প্রতিশ্রুতিও দেন তারা। এসবের মাঝেই হারিয়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক কলহ। সামাজিক অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রার্থীর সাথে সৌজন্যতা এবং ভোটের পরে এক সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ছিল নিত্যদিনের।
ভোটের মাঠের উৎসবের ভাটা পড়তে থাকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের ঘোষণায়। এর মাধ্যমে তৃণমূল থেকে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা কিছুটা সরে এসে ভিড় জমাতে থাকে দলীয় কার্যালয়ে। অর্থ ও পেশি শক্তি দিয়ে মনোনয়ন কেনায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। সেই থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থীর পারস্পারিক সম্প্রীতি নষ্ট এবং যেকোন মূল্যে জেতার মনোভাব তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দলীয় প্রতীকের কারণে এবার ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা বেড়েছে। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে বেশি।
নির্বাচনে আগেই আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে রক্তপাতের আশঙ্কা করে প্রতিবেদন দিয়েছিল কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। তারা প্রতিবেদনে বলেন, বিএনপির পাশাপাশি সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের রক্তপাতের আশঙ্কা রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করা হয়।
কিন্তু প্রথম দুই ধাপের অবস্থাতে দেখা গেছে গোয়ান্দা সংস্থা কোন সুপারিশই আমলে নেয়নি ইসি। সুপারিশ কার্যকর করতে তেমন ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। ফলে গত দুই ধাপের নির্বাচনেই ইচ্ছেমতো তা-ব চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গুলি, বোমা, সংঘর্ষ, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে ব্যাপক হারে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চেয়ারম্যান প্রতীকের ভোট আগের দিন রাতেই হয়েছে। পরের দিন শুধুমাত্র মেম্বর পদে ভোট হয়েছে। এতে করে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে যাচ্ছে।
শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনের জন্য কমিশনের অগাধ ক্ষমতার কথা তাদের বিভিন্ন পক্ষ থেকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হলেও তারা তা প্রয়োগ করছে না।
নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে সাংবিধানিকভাবেই অনেক ক্ষমতা দেয়া হলেও তার ব্যবহার দেখা যায় না। আর এ কারণে প্রাণহানি বাড়ছে। বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে ভোট ও গণতন্ত্র। জনগণের আস্থা হারাচ্ছে ইসি। মাঠে ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও কাগজে ৭৪ থেকে বাড়ি এখন ৭৮ ভাগ উপস্থিতি দেখিয়েছে। ব্যর্থতার দায়ভার নিতেও নারাজ ইসি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কমিশনের হাতে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কঠোর না হওয়ার ফলে সহিংসতা এবং অনিয়ম বাড়ছে। ইসি তার ক্ষমতা ব্যবহার করলে ভোটগ্রহণ আরও অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হতো। সংঘাত-সহিংসতাও এড়ানো যেত। যদিও ইসি কর্মকর্তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তাদের কোনো দায় নেই।
অতীতের সব রেকর্ডে ভেঙ্গে সংবিধানের ১২৬ ও ১১৮ নং ধারা ভূলে সহিংসতার দায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাধে দিয়েছে ইসি। সংঘাত-সহিংসতার দায় তারা নেবেন না। অথচ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণের সব ক্ষমতা রয়েছে ইসির।
প্রসঙ্গত: সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবলই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।
ভোটের প্রার্থীদের অনেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ইসিকে অবহিত করলেও তারা তা আমলে নেননি। এদিকে সংঘাত-সহিংসতা ও ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে পরবর্তী ধাপের ভোট বর্জনের হুমকি দিয়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। তা সত্ত্বেও ইসির দাবি, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
ইসির বক্তব্যে খোদ শাসক দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, নির্বাচনে বিনিময় বাণিজ্য হচ্ছেÑ জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে টিকে থাকা কষ্টকর। আমরা আশা করবো, শেষ পর্যন্ত তাদের (ইসি) যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তারা সেটা প্রয়োগ করবেন।
তিনি বলেন, প্রার্থীকে মেরে ভুট্টা খেতে ফেলে রাখা হয়েছে। কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটছে চোখের সামনে। আমরা এ ব্যাপারে ইসিকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আমাদেরকে যদি আপনারা আশ্বস্ত করতে না পারেন, তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের আর কোনো আস্থা থাকবে না। এর আগে আরেক শরীক জাসদ নির্বাচন বর্জন করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।