পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আনোয়ারুল হক আনোয়ার : অপার সম্ভবনাময় মেঘনা উপকূলবর্তী নোয়াখালী অঞ্চলে ঘটছে কৃষি বিপ্লব । ধান, সূর্যমুখী, তরমুজ, তরিতরকারী, শাক সবজী, রবিশস্য ও ফলমূল উৎপাদনে একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি করে কৃষিতে হচ্ছে সমৃদ্ধ। উপকূলীয় অঞ্চল ঘিরে আরো নিত্যনতুন চমক অপেক্ষমান।
আর এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সরকারী উদ্যোগে এখানে কৃষিনির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অপরদিকে বঙ্গোপসাগরের পলিমাটি বিধৌত নোয়াখালী অঞ্চল কৃষি সেক্টরকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলছে। আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করছে। যার ধারাবাহিকতায় সরকার দেশের কৃষি সেক্টরকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও কৃষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুফল পেতে শুরু করেছে নোয়াখালী অঞ্চলের ২০ লক্ষাধিক অধিবাসী। বিশ্বের বিশাল জনসংখ্যা অধ্যূষিত চীন কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার সুফল পাচ্ছে।
তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশও কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পথে রয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশকে বলা হয় শস্য ভান্ডার। তেমনিভাবে নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাকে বলা হয় শস্য ও মৎস ভান্ডার। আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নোয়াখালী কৃষি সেক্টরে একের পর এক সফলতা অর্জিত হচ্ছে ।
নোয়াখালীতে কৃষি জমির পরিমাণ ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর । মেঘনার বদৌলতে প্রতি বছর এখানে আরো দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর ফসলী জমি যুক্ত হচ্ছে । চলতি বছর এ জেলায় ১ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর আমন, ৬০ হাজার হেক্টর বোরো, ৪০ হাজার হেক্টর আউশ এবং ৫ হাজার হেক্টর মৌসুমী ফসল অর্থাৎ রবিশস্য চাষ হয়েছে। এরমধ্যে নোয়াখালী উত্তরাঞ্চল যথাক্রমে বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায় বোরো চাষ এবং দক্ষিণাঞ্চল যথাক্রমে নোয়াখালী সদর, সূবর্ণচর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়া উপজেলাকে আমন চাষ অঞ্চল চিহিৃত করা হয়েছে । উত্তরাঞ্চলে ৪৫ হাজার হেক্টর বোরো নির্ভর হলেও দক্ষিণাঞ্চলে আমনের পাশাপাশি অন্যান্য অর্থকরী ফসলের জন্য বিখ্যাত । চলতি বছর দক্ষিণাঞ্চলে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী, ১২ হাজার ৫’শত হেক্টরে চিনাবাদাম, ৫ হাজার হেক্টরে তরমুজ, ২৫’শ হেক্টরে ফেলন ডাল ও ৫হাজার হেক্টরে শাক সবজী চাষ হয়েছে । এরমধ্যে সূর্যমুখী চাষ লাভজনক বিধায় কৃষকরা আরো অধিক পরিমাণ ভূমিতে সয়াবিন চাষে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে । সূর্যমুখী সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আগামীতে উপকূলীয় এলাকায় সূর্যমুখী চাষ বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা করছে।
গত বছর নোয়াখালীতে ৬০ হাজার হেক্টরে বোরো চাষ হলেও চলতি বছর ৭৩ হাজার হেক্টরে চাষ হয়েছে। গত বছর ১ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদিত হলেও চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জনের আশা করছে কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ। অপরদিকে গত কয়েক বছর নতুন ফসল হিসেবে সূর্যমুখী, বিটবেগুন, তরমুজ, আখ, সরিষা চাষ হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের তত্বাবধানে। এব্যাপারে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রযুক্তিগত এবং কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে আসছে । তাছাড়া কৃষি কাজ জোরদারের লক্ষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী কার্যক্রম, কৃষকদের উদ্ভুদ্বকরন, ভ্রমনের লক্ষে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারন, বাতায়ন, কৃষি প্রযুক্তি ভান্ডার, কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা, কৃষকের জানালা, এ্যাবসের মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির আওতায় আনা হয়েছে । এতে কৃষক কিষাণীরা দলীয় ও সমষ্টিগত সেবার পাশাপাশি ঘরে বসে কৃষি প্রযুক্তি গ্রহন করে ফসলের বাড়তি উৎপাদনের প্রতি মনযোগী ও উপকৃত হচ্ছে। নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে লবনাক্ত এলাকায় লবনসহিষ্ণু ধান, সূর্যমুখী, মুগডাল আবাদের ফলে পতিত জমিগুলো ক্রমান্বয়ে আবাদের আওতায় চলে আসছে । ফলে প্রতি বছর এ জেলায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এধারা অব্যাহত থাকবে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও নোয়াখালীতে প্রতি বছর কৃষি জমির পরিমাণ দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর বৃদ্ধি পাচ্ছে । ভূমি পূণঃরুদ্ধার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি বছর যে পরিমাণ ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে - তার অন্তত দশগুণ ভূমি নদীগর্ভে জেগে উঠছে ।
এক সময় চীনের দুঃখ হোয়াং হো নদী এখন আশির্বাদে পরিণত হয়েছে তেমনিভাবে নোয়াখালীবাসীর দুঃখ নোয়াখালী খাল ২০২২ সাল থেকে আশির্বাদে পরিণত হবে । দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের তত্বাবধানে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫ কিলোমিটার খালের সংস্কার কাজ চলছে । উক্ত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে ২৫ হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে। এছাড়া শুস্ক মৌসুমে নোয়াখালী খালের পানি ব্যবহারের মাধ্যমে শীতকালীন শাক সবজী, ভূট্রা ও অন্যান্য ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাবে। মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলার বর্তমান আয়তন ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার । প্রতি বছর আরো নতুন চর জেগে উঠায় এর আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে । হাতিয়া দ্বীপের চর্তূদিকে ৫০টি চরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১৮টি চরে ধান, তরিতরকারী ও রবিশস্য উৎপাদন হচ্ছে। হাতিয়া উপজেলার ১ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের স্বর্ণদ্বীপ। অর্থাৎ দুইটি বৃহৎ উপজেলা আয়তনের সমান । সেনা বাহিনীর তত্বাবধানে এখানে কৃষি বিপ্লব ঘটেছে। এছাড়া হরনী, চাঁনন্দী, নিঝুমদ্বীপ, দমারচর, কালিরচর, মৌলভীর ও ঢালচরসহ ১৩টি চরে চাষাবাদ চলছে । হাতিয়া উপজেলায় উৎপাদিত ধান, চাল, তরিতরকারী ও রবিশস্য বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। মূলতঃ বঙ্গোপসাগরের পলিমাটি সমৃদ্ধ হাতিয়া দ্বীপাঞ্চল ও চরাঞ্চল চাষাবাদের জন্য সহায়ক বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
অপার সম্ভাবনাময় নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে সরকারী উদ্যোগে কৃষি নির্ভর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এরমধ্যে সুগার ক্রপস গবেষণা উপকেন্দ্র , বিএডিসি খামার, কৃষি গবেষণা আঞ্চলিক কার্যালয় ও বাংলাদেশ আনবিক কৃষি গবেষনা (বিনা) উপকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে হাইব্রীড তরিতরকারী ও ফলমূল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে । এখানে খাটো জাতের নারিকেল (ভিয়েতনাম) ও বারী মাল্টা চাষ হচ্ছে । অপরদিকে কৃষি সম্প্রসারনে লবনাক্ততা, জলাবদ্ধতা, জলমগ্নতা, জলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কৃষি শ্রমিকের স্বল্পতা, বর্গাচাষী দিয়ে জমি চাষ এবং জমি যতেœর প্রতি বর্গাচাষীদের অনীহা অন্তরায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ নোয়াখালীর উপ পরিচালক ড. মো. আবুল হোসেন ইনকিলাবকে জানান, উল্লেখিত সমস্যা লাঘব হলে কৃষি বিপ্লবে নোয়াখালী জেলা মডেল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করবে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।