পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার চাংলা ড্যাংগিরকুল গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন। গত বছরের শুরুর দিকে চিটাগাং বিল্ডার্স কোম্পানির ডিলারদের নিকট থেকে সাইফেং কোম্পানির একটি পাওয়ার টিলার ক্রয় করেন। কেনার সময় কোন ওয়ারেন্টি দেওয়া না হলেও ডিলার জানান- তারা সবসময়ই সার্ভিস দিবেন। অথচ পরবর্তীতে সেই সার্ভিস আর পাননি দেলোয়ার হোসেন। এখন পর্যন্ত দুইবার চেইন ও গিয়ার বক্স পরিবর্তন করেছেন বাইরে থেকে। তাছাড়া অনেক সময় যন্ত্রাংশ খোলা বাজারে ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এখন এ গাড়িটি নিয়ে বেশ বিপদেই আছেন তিনি।
একই অবস্থা বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার শালুকগাড়ি গ্রামের আমিনুল হক দুলালের। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ডংফিং কোম্পানির নামে এই পাওয়ার টিলারটি এক বছর আগে ক্রয় করেন। এ গাড়িটি হালকা হওয়ায় জমি চাষ করতে অনেক সুবিধা হয়। তবে দাম কম হলেও গাড়ি খুব তেল খায় এবং এর খারা চেইনটি খুব দ্রæত নষ্ট হয়ে যায়। এ পর্যন্ত দুইবার খারা চেইন পরিবর্তন করেছি। এছাড়া এ গাড়িটির চেসিস খুব হালকা, কিনেই চেসিসটি পরিবর্তন করতে হয়েছে। ডিলাররা গাড়িটি বিক্রির পর আর কোন দায়িত্ব নেয় না এবং ইঞ্জিনে কোন সমস্যা হলে এর যন্ত্রাংশও পাওয়া যাচ্ছে না বলেন দুলাল। প্রায় সারা দেশের কৃষকরাই একই অবস্থায় মধ্যে রয়েছে। পাওয়ার টিলার বিক্রয়ের পর কোম্পানিগুলো আর বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছে না। কৃষকরাও এর যন্ত্রপাতি পাচ্ছে না। ফলে মুনাফার চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের যৌথ জরিপের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ব্যবহার্য পাওয়ার টিলারের সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ। গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার পাওয়ার টিলার আমদানি করা হচ্ছে। পাওয়ার টিলারের বাজারে ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রন করছে চিটাগাং বিল্ডার্স লিমিটেড।
এ বাজারটি গত কয়েক বছর ধরেই ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। ২০১১ সালে ৪২০ কোটি টাকার পাওয়ার টিলার বিক্রি হলেও পরের বছরে তা ৪০২ কোটি, ২০১৩ সালে ৩০০ কোটি, ২০১৪ সালে ৪২০ কোটি এবং ২০১৫ সালে ৪৩৭ কোটি টাকার পাওয়ার লিটার বিক্রি হয়। ২০১৬ সালে ৪২০ কোটি এবং ২০১৭ সালে সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার পাওয়ার টিলার বিক্রি হয়েছে। আর দেশের বাজারে ৭০ শতাংশের বেশি দখল রয়েছে চিটাগাং বিল্ডার্স এ্যান্ড মেশিনারী লিমিটেডের। এর বাইরে কয়েক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার টিলার আমদানি করে থাকে।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের প্রফেসর ও জরিপের সমন্বয়ক মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রয় করবে তাদের অবশ্যই সঠিক বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে কৃষকরা এসব যন্ত্রপাতি থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফলবে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে দক্ষ কারিগর তৈরিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সরকারকেও এ বিষয়ে একটি সমন্বিত নীতিমালার মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চিটাগাং বিল্ডার্স এ্যান্ড মেশিনারী লিমিটেডের মহাব্যস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার টিলারের এক বছরের ওয়ারেন্টি আছে। কোন ক্রেতা যদি আমাদের ডিলার পয়েন্ট এসে অভিযোগ করে তবে সেই মেশিনের সেবা সেখানেই দেওয়া হচ্ছে। সম্ভব হলে বাড়িতেও দেওয়া হচ্ছে। তবে পাওয়ার টিলারের অন্য কোন কোম্পানির মেশিনে বিক্রয়োত্তর সেবা দেওয়া হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।