Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দরকার বহুমাত্রিক কৃষি

মাটি নেড়েচেড়ে সোনার ফসল ফলাচ্ছে কর্মবীর কৃষকরা

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে কৃষি। আদিকাল থেকেই কর্মবীর কৃষকরা নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির ব্যবহার করে আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল। মাটি ওলোট-পালোট করে সোনার ফসল ফলিয়ে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন কর্মবীর কৃষকরা। কৃষির ওপর নির্ভরশীল মানুষ দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। মাঠের আবাদী জমিই কৃষকদের বড় সম্পদ। বেঁচে থাকার অবলম্বন। স্বাচ্ছন্দ্য, অনায়াস উদ্দীপনা, উদ্যম ও শক্তি নিয়ে দিনরাত মাঠে পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের একটি বিশেষ পরিচয় রয়েছে। বাংলাদেশে অল্প জমিতে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় বিশ্ব অর্থনীতিবিদদের অবাক করে দিয়েছে। 

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদের কথা, বহুমুখী সমস্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় উপেক্ষা করে ক্রমাগতভাবে স্বচ্ছলতার সোপানে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া ও কোরিয়াসহ উন্নত দেশের অনুকরণে বাংলাদেশে ছাদ
কৃষি এবং ‘বটমআপ’ পদ্ধতি অর্থাৎ আবহাওয়ার ভিত্তিতে যে এলাকায় যে ফসল প্রযোজ্য ও ‘মাল্টিস্ট্রাটা’ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন সর্বোপরি বহুমাত্রিক কৃষির দিকে জোর দিতে হবে। এছাড়াও ‘হাইড্রোপনিক’ পদ্ধতি যা মাটিবিহীন পানিতে সারাবছরই সবজি ও ফল উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। এসব বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে কৃষি নতুন এক বিপ্লব ঘটবে। তাছাড়া মান ও ফুড প্রসেসিং ব্যবস্থা উন্নত হলে কৃষিপণ্য রফতানীও আরো বাড়বে। কৃষি শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির বুনিয়াদ। পৃথিবীর কৃষি উন্নত দেশগুলো খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থেই কৃষির জন্য আধুনিক প্রযুক্তি, কলাকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। বিশ্বে কৃষি অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ চীনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সামগ্রিক কৃষির উন্নয়ন ঘটানোর পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট সুত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের হার বেড়েছে। মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ এবং শ্রমশক্তির ৬০ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। দারিদ্র্য বিমোচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় খাদ্য উৎপাদন ও কৃষিশিল্পের উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ৮শ’৪টি। তাদের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। এক ফসলি জমি ২৩লাখ ৫৪ হাজার ৮শ’২১ দশমিক ৭৪ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৩৮লাখ ৪৭ হাজার ২শ’ ৮৫ দশমিক ৪৯ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ১৭লাখ ১৫হাজার ৪শ’৩০ দশমিক ৩৮ হেক্টর। মোট ফসলি জমি ১ কোটি ৫২ লাখ ৪৫হাজার ৮শ’৪১ দশমিক ৯৩ হেক্টর। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৪ দশমিক ৭৫%। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, মাঠপর্যায়ে কৃষি স¤প্রসারণ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও মূল্যায়ন, কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচী প্রণয়ন, উপকরণের চাহিদা পুরণ ও মনিটরিং আরো জোরদার করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের। দেশের ৬৪টি জেলা, ৪শ’৮৫টি উপজেলা ও ১২হাজার ৬শ’৪০টি বøক রয়েছে। স¤প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করা হলে কৃষি উৎপাদনের হার আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে। সুত্র জানায়, সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িতরা আবাদ ও উৎপাদনে যেন মার না খায় সেদিকে নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। কখন কি ফসল কোন জমিতে কিভাবে আবাদ করতে হবে, কোনটা লাভজনক, সারের মাত্রা কি হবে, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেই বা কি ব্যবস্থা, মাঠের দাম আর বাজার দাম কি, কোন সময়ে ফসল বিক্রি করলে কৃষকরা লাভবান হবেন, কৃষিপণ্য কোন এলাকা থেকে রফতানী করা যায়, কী কী সমস্যা কোথায় এবং তা কিভাবে সমাধান করা যায়-এসব বিষয় যথাযথভাবে দেখার ব্যাপারে আরো যতœবান হওয়ার তাগিদ দিয়েছে কৃষকরা সংশ্লিষ্ট মাঠ কর্মকর্তাদের। সুত্রমতে, কৃষি উন্নয়নে অবিলম্বে ‘জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০’ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১০’ কার্যকর করা প্রয়োজন।
সুত্র জানায়, কর্মবীর কৃষকদের স্বার্থে দেশে কৃষি সম্প্রসারণ, মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউট, বীজবর্ধন খামার, কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, ধান গবেষণা এবং বিএডিসিসহ অসংখ্য বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলোর উদ্দেশ্য স্বল্প জমিতে আধুনিক প্রযুক্তিতে বেশী আবাদ ও উৎপাদন করে বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকারী নির্দেশনা সকলক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না যথাযথভাবে। আগামীর সামগ্রিক কৃষি নিয়ে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হলে নিঃসন্দেহে বাংলার কৃষি উন্নয়ন হবে দৃষ্টান্তমূলক। সারাদেশে মোট ১৪টি কৃষি অঞ্চল রয়েছে। এছাড়া স্থাপন করা হয়েছে সারাদেশে ১০টি কৃষি অঞ্চলে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র। কৃষি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে এসবগুলোকে গতিশীল করতে হবে। প্রতিটি ফসল উৎপাদন মৌসুমে চাষী মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের হাতে থাকে জিম্মি। কষ্ট করে কৃষক, ফল ভোগ করে অন্যরা। তাই, কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত, বাজার বিশৃঙ্খলারোধ, মুনাফালোভীদের অপ্রতিরোধ্য দাপট বন্ধ করা জরুরি।#



 

Show all comments
  • kasem ১৭ এপ্রিল, ২০১৮, ৬:০২ এএম says : 0
    কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত, বাজার বিশৃঙ্খলারোধ, মুনাফালোভীদের অপ্রতিরোধ্য দাপট বন্ধ করা জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • Prince Rasel ১৭ এপ্রিল, ২০১৮, ৬:০২ এএম says : 0
    Nice report
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষি

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ