পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উদযাপিত হয়েছে। আয়োজনের কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা থাকলেও এবার রাজধানীতে হাতিরঝিলসহ অনেক যায়গায় বেশ জাকজমক ভাবে বর্ষবরণ উদযাপন করতে দেখা গেছে। গত শনিবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান দিয়ে বাংলা নতুন বছর বরণ শুরু হয়। এরপর চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। দিনভর প্রচÐ গরমে বিকেলবেলা বৃষ্টিতে স্বস্তি পায় রাজধানীবাসী। যোগ করে আনন্দের নতুন মাত্রা।
দেশের গ্রামাঞ্চলও পিছিয়ে ছিল না বাংলা নববর্ষ বরণে। যেখানে সেখানে জায়গায় জায়গায় বসে মেলা। সাজিয়েছিল হরেক রকম জিনিসের পসরা। বাড়ি বাড়ি বিলানো হয় ঘরে তৈরি মিষ্টি, নতুন চালের পায়েস ইত্যাদি। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে শুক্রবার ১৪২৪ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হল নতুন বছর ১৪২৫। জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করল বাঙালি জাতি। পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতেছে দেশ। সকালে ভোরের কিরণ রাঙিয়ে দিয়েছে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানীসহ দেশজুড়ে চলছে বর্ষবরণের নানা আনুষ্ঠানিকতা।
রাজধানী ঢাকায় পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহ্বান জানান হয়। পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের পর পর ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। নতুন বর্ষ বরণের সবচেয়ে বড় আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় চারুকলা থেকে। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাজির হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। বাংলার চিরায়ত সাজে নববর্ষ বরণ করছে সবাই। শনিবার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ ছাড়া শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যরা।
অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ নেওয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপদ ও আনন্দঘন পরিবেশে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েুছল। উৎসবের মূল কেন্দ্র রমনা পার্ক ও মঙ্গল শোভাযাত্রার সময় হেলিকপ্টারসহ অন্যান্য মাধ্যমে আকাশ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ছিল এলিট ফোর্স র্যাব। এছাড়া নারীদের হয়রানিরোধে রমনা পার্ক ও হাতিরঝিল এলাকায় প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পালন করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
ইংরেজ আমলেও খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডারের পাশাপাশি বাঙালী সমাজে বাংলাসন ও বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রচলন ও প্রভাব অক্ষুন্ন ছিল। মুঘল আমলে প্রবর্তিত বাংলা বর্ষপুঞ্জিতেও কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা বর্ষপঞ্জিতে কিছু সংস্কার আনেন। তার সংস্কার অনুসারে এখন প্রতিবছর ১৪ এপ্রিলে বাংলাদেশে ১লা বৈশাখে বর্ষবরণের উৎসব হয়ে থাকে। ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং হাজার বছরের রাজনৈতিক বিবর্তনে বাঙালী সংস্কৃতিতে যে বৈচিত্র এসেছে সেখানে সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলা, হিজরী এবং ইংরেজি বর্ষপুঞ্জি ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় সমভাবে গুরুত্ব বহন করছে। আমাদের ভাষার ঐতিহ্য ও ইতিহাস যেমন স্বকীয় অনুপ্রেরণায় দীপ্যমান, তেমনি আমাদের রয়েছে একটি নিজস্ব ক্যালেন্ডার, যা জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধ ও গর্বিত করেছে। এ কারণেও আমাদের জাতীয় জীবনে বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এখনো আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। আমাদের ঋতুবৈচিত্র, খাদ্যসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রভাব স্বমহিমায় বিদ্যমান রয়েছে এবং থাকবে। বিশ্বায়নের যুগে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি ক্রমে বৈদেশিক বাণিজ্যনির্ভর হয়ে উঠলেও ১লা বৈশাখের সংস্কৃতির গুরুত্ব এবং উৎসবমুখর আবাহন বাড়তি জৌলুস লাভ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।