Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নওয়াজ শরিফ আজীবনের জন্য অযোগ্য

আজীবন অযোগ্য ঘোষণার রায় ‘তামাশা’ : নওয়াজের দল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের জারিকৃত এক রুলের মধ্য দিয়ে যাবতীয় সরকারি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আজীবনের জন্য অযোগ্য হলেন সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। গতকাল শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে জারি করা এক রুলে জানায়, পাকিস্তানে সংবিধানের ৬২ (১) (এফ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেউ অযোগ্য ঘোষিত হলে তাকে আজীবনের জন্য অযোগ্য বিবেচনা করতে হবে। এই রুলের কারণে নওয়াজের পাশাপাশি তেহরিক ই ইনসাফ নেতা জাহাঙ্গীর তারিনও আজীবনের জন্য অযোগ্য হলেন। পনামা পেপারস-এর মামলায় ২০১৭ সালে ওই ৬২ ধারাতেই নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছিল তাকে। তবে ওই ধারায় অযোগ্যতার মেয়াদ নিয়ে অস্পষ্টতা থাকায় নওয়াজ আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন কিনা, তা নিয়ে বিভক্ত মতামত দিয়েছিলেন আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের জারিকৃত রুলের কারণে সেই বিভক্তি দূর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো। রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে প্রভাবশালী পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন আশঙ্কা জানিয়েছে, এই রুলের কারণে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের পট পরিবর্তন হতে পারে।
সংবিধানের ৬২ (১) (এফ) অনুচ্ছেদ অনুসারে পাকিস্তান পার্লামেন্টের সদস্য হতে গেলে কোনও ব্যক্তিকে ‘সাদিক এবং আমিন’ (সৎ এবং ন্যায়নিষ্ঠ) হতে হবে। ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই এই অনুচ্ছেদের আওতায় বিচারপতি আসিফ সাইদ খোসার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ পানামা পেপারস মামলায় নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। তবে এই অযোগ্যতার মেয়াদ নিয়ে বিভক্ত মতামত দিয়েছিলেন আইন বিশ্লেষকরা। শুক্রবার (১৩ এপ্রিল)পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের রুলে বলা হয়, ৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদের আওতায় যারাই অযোগ্য ঘোষিত হবে তারা আজীবনের জন্য সরকারি কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবেন। প্রধান বিচারপতি মিঞা সাকিব নিসারের নেতৃত্বে বিচারপতি শেখ আজমত সাইদ, বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল, বিচারপতি ইজাজুল আহসান এবং বিচারপতি সাজ্জাদ আলি শাহকে নিয়ে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এই আদেশ জারি করেন।।
৬২(১)(এফ) অনুযায়ী, অযোগ্য ঘোষিতরা কতদিন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা ছিল না। তবে ৬৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে একটি সময়সীমা পার হওয়ার পর তিনি আবার যোগ্য বিবেচিত হতে পারেন। সে কারণেই ২০১২ সালের ১৯ জুন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে ৬৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই অনুচ্ছেদের আওতায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল।
৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদের আওতায় অযোগ্য ঘোষণার মেয়াদকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা ১৭টি আপিল ও পিটিশনের শুনানি শেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি রায় অপেক্ষমান রাখে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। সর্বশেষ শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আশতার বেঞ্চকে বলেন, ৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অযোগ্য ঘোষিতরা আজীবনের জন্য অযোগ্য হবেন কিনা তা বলা কিংবা সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আদালতের কাজ নয়। তিনি যুক্তি দেন, এ সিদ্ধান্ত পার্লামেন্টে নেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেছিলেন, ওই অনুচ্ছেদে অযোগ্য ঘোষণার মেয়াদ নেই। ভিন্ন ভিন্ন মামলা অনুযায়ী আদালত আলাদা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
শুক্রবার পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের নতুন আদেশে ৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদের মূল চেতনা তুলে আনেন বিচারকরা। তারা বলেন, অযোগ্য ঘোষিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমার উল্লেখ না থাকার মানেই হলো ওই অযোগ্যতার সময়সীমা অনির্দিষ্ট, অনন্ত। বিচারকরা নতুন আদেশে জানান, সংবিধানের সেই মূল চেতনার ভিত্তিতেই তারা ওই ধারায় অযোগ্য ঘোষিত কাউকে আজীবনের জন্য অযোগ্য বিবেচনার আদেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ পড়ে শোনাতে গিয়ে বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেন, ভবিষ্যতে ৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনও পার্লামেন্ট সদস্য কিংবা সরকারি চাকরিজীবীকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে তা স্থায়ী বলে বিবেচনা করা হবে। এসব ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না কিংবা পার্লামেন্ট সদস্য হতে পারবেন না। ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) নেতা জাহাঙ্গীর তারিনকে অযোগ্য ঘোষণা করে শীর্ষ আদালতের আলাদা আরেকটি বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের নতুন এই আদেশে নওয়াজের মতো তিনিও আজীবনের জন্য অযোগ্য হলেন। রায় ঘোষণার আগে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিঞা সাকিব নিসার বলেন, জনগণের জন্য ‘ভালো বৈশিষ্ট্যের নেতা’ প্রয়োজন।
আজীবন অযোগ্য ঘোষণার রায় ‘তামাশা’ : নওয়াজের দল
সুপ্রিম কোর্টের রুল জারির কিছুক্ষণ পরই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব। তিনি বলেন, ‘এটি সে একই ধরনের সিদ্ধান্ত যেগুলোকে কেন্দ্র করে জুলফিকার আলি ভুট্টোকে মৃত্যুদন্ড পেতে হয়েছিল, বেনজির ভুট্টোকে হত্যার শিকার হতে হয়েছিল এবং তারপর নির্বাচিত এক প্রধানমন্ত্রীকে (নওয়াজ) অযোগ্য ঘোষণা করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত আলি বাবা ও চল্লিশ চোরের ষড়যন্ত্রের ফলাফল।’
আদালতের রায়ের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তি যারা মনে করেন অযোগ্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়া যায়; তাদেরকে ‘নিষ্পাপ এবং ভীরুচিত্তের’ বলে উল্লেখ করেন আওরঙ্গজেব। পিএমএল-এন সংঘাতে যাবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আওরঙ্গজেব বলেন, ‘নওয়াজ এবং পিএমএল-এন সবসময় বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করেছে।’
আওরঙ্গজেব আরও বলেন, যতদিন নওয়াজ শরিফ জনগণের হৃদয়ে থাকবেন ততোদিন এ অযোগ্য ঘোষণার কোনও অর্থ থাকবে না। পাকিস্তানের সুশীল সমাজ, জনতা এবং গণমাধ্যম এখন সজাগ এবং দেশে কী ঘটছে ও এর কারণ কী তা সবাই দেখতে পাচ্ছে। মাইনাস ওয়ান সেøাগান আবারও তোলা হচ্ছে। যে প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ ও লোডশেডিং দূর করেছেন তাকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হলো।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল দুনিয়ার প্রভাবশালী রাষ্ট’ ও সরকারপ্রধান এবং রাঘববোয়ালদের আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করে সাড়া ফেলে দেয় আলোচিত ‘পানামা পেপারস’। ফাঁস হওয়া ওই গোপন নথিতে অর্থ পাচারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলের নাম উঠে আসায় নিজ দেশে চাপের মুখে পড়েন তিনি। বিরোধী দলগুলো থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে অবৈধ বিনিয়োগের অভিযোগ তদন্তে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পানামা পেপারস প্রকাশের পর বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াতে ইসলামিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত দেয় আদালত। ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর পদত্যাগ করেন নওয়াজ শরিফ। সূত্র : ওয়েবসাইট।

 



 

Show all comments
  • AI ১৪ এপ্রিল, ২০১৮, ২:২৪ এএম says : 0
    Will India do something to help Nawaz?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নওয়াজের দল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ