পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : বরাবরের মত চলতি অর্থবছরেও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন প্রাক্কলন ফের বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সরকারের হিসাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাত দশমিক চার শতাংশ। অর্থবছরের তিন মাস বাকি থাকতেই প্রবৃদ্ধির ওই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেটের এই প্রত্যাশা ছাড়িয়ে রেকর্ড সাত দশমিক ৬৫ শতাংশ হবে দাবি করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। কিন্তু এই হিসাবের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ছয় দশমিক পাঁচ অথবা ছয় দশমিক ছয় শতাংশ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) হিসাবে, এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ অর্জিত হতে পারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, সাত দশমিক এক শতাংশের কথা।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি হিসেবের সময় রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে বিশ্ব বাজারের এক ধরনের প্রভাব থাকায় হিসেবে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। একই সঙ্গে পরিসংখ্যান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন না হওয়ায় রাজনীতিকরনের মাধ্যমে তথ্যের গড়মিল করা হচ্ছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণত সরকারের যে প্রাক্কলন করা হয় সেখানে বিভিন্ন মাধ্যমে আসলেও ধারণা করা হচ্ছে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। যা যুক্তিসঙ্গত নয়। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন নয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা যায়। তাই তথ্যের গড়মিল থাকে। আর এ কারণেই আস্থার অভাব দেখা দিচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি হিসেব নিয়েও তাই পার্থক্য দেখা দিচ্ছে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালোর দিকে থাকলেও অনেক খাতেই দূর্বলতা রয়েছে। আর এসব স্থানে জবাবদিহীতা থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সিনিয়র সচিব এবং সদস্য জিইডি পরিকল্পনা কমিশন ড. শামসুল আলম বলেন, সরকারি হিসাবের ভিত্তি ব্যাপক তথ্যভিত্তিক। সরকার সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। অন্যসব প্রতিষ্ঠান নিজেরে দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রক্ষেপন করে। সব সময়ই এদেরটার সঙ্গে সরকারের পার্থক্য হয়। তিনি জানান, দীর্ঘ দিন আমি দেখেছি সরকার যেটা করে সেটাই ঠিক ঠিক থাকে। কিন্তু দেখা যায়, ওই সব প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রক্ষেপন স্থির থাকে না। এক সময়ে এসে তারা সরকারের সাথে সমন্বিত হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চেয়ে সরকারিভাবে যে হিসেব করা হয় সেটিই বেশী নির্ভরযোগ্য বলে দাবী সরকারি পক্ষের।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাত দশমিক চার শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। নয় মাসের প্রাক্কলন সেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছর শেযে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দিয়ে দাঁড়াবে সাত দশমিক ৬৫ শতাংশ; গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নতুন এই প্রাক্কলন করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার দাঁড়াবে প্রায় ২৭৫ বিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ২৪৮ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। মূলত রফতানি বাণিজ্য, রেমিটেন্স আর রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি বাড়িয়েছে। সহায়ক সকল খাতের অবস্থা ভালো হওয়ায় প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন খাতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের অর্থনীতির অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে।
কিন্ত গত সোমবার বিশ্বব্যাংক বিবিএসের এই প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংস্থাটি বলছে, প্রবৃদ্ধি নিয়ে সংশয় আছে, যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন। বছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ অথবা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলেও জানানো হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে আয়ের প্রবৃদ্ধি দুই দশমিক সাত এবং কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি দুই দশমিক দুই শতাংশ। আয় ও কর্মসস্থানের প্রবৃদ্ধির চিত্র যদি এমন হয়, তবে বছর শেষে সাড়ে ছয় শতাংশের বেশি হবে না। বিশ^ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবীদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, বিশ্বের যে কয়টি দেশে প্রবৃদ্ধির হার সাত শতাংশের বেশি হয়েছে, তাদের জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ অথবা রফতানি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুটিই বেড়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেননা বাংলাদেশে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির। কমেছে রফতানি আয়। এক্ষেত্রে শুধু ভোগের উপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, যা বিশ্বে একেবারেই ব্যতিক্রম।
এর একদিন পরে অর্থাৎ গতকাল বুধবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তার এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউট লুকে পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে সাত শতাংশ। আগারগাঁওয়ে এডিবি কার্যালয়ে আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া সংস্থাটি আরও বলেছে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাড়াবে সাত দশমিক দুই শতাংশ। সাংবাদিক সম্মেলনে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ইকনোমিস্ট সুন চ্যান হং।
স্বল্পোন্নত দেশের এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণে প্রাথমিক মূল্যায়নে যোগ্যতা অর্জন করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান মনমোহন প্রকাশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যারা তিন শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। অর্থাৎ মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ও মানব সম্পদ উন্নয়নের শর্ত পূরণ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারসাম্যের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও শক্ত অবস্থানে। রাজস্ব ঘাটতিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। তবে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে দুই দশমিক তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি। গত বছর তিন খাতে পূর্বাভাস ছিল তিন শতাংশ। এবার শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১০ দশমিক চার শতাংশ। রফতানি বেড়ে যাওয়ার কারণে শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সেবা খাতে এ সময়ে ছয় দশমিক সাত শতাংশ থেকে কমে প্রবৃদ্ধি দাড়াবে ছয় দশমিক চার শতাংশ। এডিবির মতে চলতি অর্থবছরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ছয় দশমিক এক শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল পাঁচ দশমিক চার শতাংশ।
তবে প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে গত সোমবার বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের কড়া সমালোচনা করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক কি বললো তাতে কিছু আসে যায় না। তারা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তথ্য দেয়। এদিকে গতকাল বুধবার নিজ দফতরে প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিশ্বব্যাংককে ‘আল্টিমেটাম’ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংককে মে মাস পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। তারা এ সময়ের মধ্যে যেসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ও সংশয় প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে আলোচনা করবে। এরপর নিজেদের রিপোর্ট আবার রিভিউ করবে। বিশ্বব্যাংককে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী আরও বলেন, জিডিপি নিয়ে আমরা যে ফিগার দিয়েছি এটাই সঠিক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সহায়তায় আমরা এ ফিগার দিয়েছি।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক ছয় শতাংশের কথা বলা হয়েছে। বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে আমদানি বাড়ছে। আর এই ধরনের আমদানি প্রবৃদ্ধি কমাতে সহায়ক হয়। এছাড়া এটা নির্বাচনি বছরও। রফতানি প্রবৃদ্ধি মোটেও যথেষ্ট ছিল না। এটা অব্যাহত থাকবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। তবে রেমিটেন্স এখন ভালো। এই রেমিটেন্স আগামী দিনগুলোতেও ভালো হবে কিনা, তা দেখতে হবে। কারণ, সৌদি আরবে ইদানিং নানা ধরনের সমস্যা চলছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের জিডিপির পূর্বাভাসকে পাত্তা দিতে চান না বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক জিডিপির পূর্বাভাস সব সময়ই কম করে বলে থাকে। আমার মনে হয় না, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ঠিক আছে। তারা কিন্তু তাদের পূর্বাভাস পরিবর্তন করে। গত কয়েক বছর ধরে তারা প্রথমে একটা বলে, পরে আরেকটা বলে। শেষে গিয়ে সরকার যেটা বলে, সেটাই তারা নেয়। তিনি উল্লেখ করেন, গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক ছয় দশমিক আট শতাংশের কথা বলেছিল। প্রথমে তারা ছয় দশমিক তিন শতাংশ বলেছিল। এরপর বলেছিল, ছয় দশমিক ছয় শতাংশ, এরপর তারা ছয় দশমিক আট শতাংশের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এ কারণে তাদের এই পূর্বাভাসে কোনও কিছু আসে-যায় না। মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাসে যা-ই বলুক না কেন, বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির কারণে আমাদের হয়তো একটু রিকভার করতে হবে। তবে সাধারণত বন্যায় পলিমাটি আসার কারণে বন্যার পরে উৎপাদন বাড়ে। এ জন্য আমাদের ভয়ের কোনও কারণ নেই। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে সাত দশমিক ২৮ শতাংশ, যা দেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন। সরকার ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সাত দশমিক দুই শতাংশ। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শূণ্য দশমিক আট শতাংশ বেশি অর্জিত হয়েছে। গত অর্থবছর চূড়ান্ত হিসাবে বাংলাদেশের মোট জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৯৮৬ কোটি ডলার বা ২০ লাখ ৮৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।
বিবিএস’র কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় একদশক ধরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের বৃত্তে আটকে ছিল। প্রথমবারের মতো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের বৃত্ত ভেঙে সাত শতাংশ অর্জিত হয়। ওই বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় সাত দশমিক ১১ শতাংশ। আর গত অর্থবছর তা বেড়ে হয় সাত দশমিক ২৮ শতাংশ।#####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।