দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে হক্কানী উলামা-মাশায়েখের অবদান ঃ
হক্বানী উলামা-মাশায়েখ সর্বদাই স্বাধীনচেতা ও সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় অম্লান হয়ে রয়েছেন। যুগে যুগে দেশ ও জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে হক্কানী উলামায়ে কেরাম আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অত্যন্ত নিঃস্বার্থভাবে তারা দেশ ও জাতির কল্যাণের নিমিত্তে নিজেদের মূল্যবান সময় ও জীবন উৎসর্গিত করেছেন। ১৮৩১ সালের বালাকোটের যুদ্ধ, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকের রেশমী রুমাল আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনসহ ১৯৪৭ সালের ইংরেজ খেদাও আন্দোলন এরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অবৈধ দখলকার ইংরেজ রাজশক্তির বিরোদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সফল নায়ক শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. কে ভারত সরকার মন্ত্রী বানাতে চেয়েছিলো কিন্তু মাদানী রাহ. এ লোভনীয় পদকেও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ উলামায়ে কেরাম দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য বরাবরই নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন ও করে থাকেন। দুনিয়াবী যশ:খ্যাতি ও পদ-পদবীর জন্য তাঁরা কখনো লালায়িত নন। তাই বলা হয়ে থাকে-হক্কানী উলামায়ে কেরাম দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব অর্জন ও রক্ষার জন্য অকোতভয় সৈনিক এবং তাঁরাই সত্যিকারের সেবক ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক। বেনিয়া ইংরেজ শক্তির হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে এবং এ দেশবাসীকে বিদেশীদের গোলামী থেকে মুক্ত করতে ১৮৫৭ সালের ঐতিহাসিক ‘সিপাহী বিপ্লব’ বা ‘আজাদী আন্দোলন’ এর নেতৃত্বও দিয়েছিলেন এদেশের সংগ্রামী উলামায়ে কেরাম। ইংরেজ খেদাও আন্দোলনের সর্বশেষ ও সফল অভিযান ১৯৪৭ সালের ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও উলামায়ে কেরামের অবদান অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও হক্কানী উলামায়ে কেরামের অবদান কোনক্রমেই ন্যূন ছিল না। হক্কানী উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইসলামী রাজনৈতিক দল ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’ ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। জমিয়ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলো। স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছিলো। যার ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালিন বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’ নিষিদ্ধ হয়নি। তৎকালীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন উপ-মহাদেশের বরেণ্য আলেমে দ্বীন ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান (সীমান্ত প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী) আল্লামা মুফতী মাহমুদ রাহ.। তাঁর বাড়ি পশ্চিম পাকিস্তানে হলেও তিনি তৎকালীন পূর্ব-পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের উলামায়ে কেরাম ও ধর্মপ্রাণ জনগণের ছিলেন অতি আপনজন এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। তিনি পাকিস্তান সরকারের তান্ডবলীলার বিরুদ্ধে ছিলেন জ্বলন্ত অঙ্গারের মতো প্রজ্বলিত। ছিলেন সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও বজ্রকন্ঠ। তাই তিনি বাঙ্গালী উলামায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন:- ‘আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলুন, দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করুন।’ মুফতী মাহমুদ রাহ. এর এরূপ আহ্বানের ফলশ্রুতিতে এদেশের হক্কানী উলামায়ে কেরাম বিশেষত: জমিয়ত নেতৃবৃন্দ জায়গায় জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলতে শুরু করেন এবং মুক্তিযুদ্ধাদেরকে সম্ভাব্য সবধরণের সহযোগিতা করতে থাকেন। জমিয়ত নেতা আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী রাহ. সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হবার অনুরোধ জানিয়ে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সমালোচনা করে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়ার অপরাধে (?) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। অবশেষে মাওলানার ঈমানী জয্বার কাছে সেনা কমান্ডার হার মানলো। মহান আল্লাহপাকের অপার মহিমায় তিনি মুক্তিলাভ করেন।-[দ্রষ্টব্য: আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে]।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বদলীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি। তিনি ছিলেন উপ-মহাদেশের শ্রেষ্ট ইসলামী বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দের সূর্যসন্তান। শুধু তিনিই নন, বাংলাদেশের খ্যাতিমান বুযুর্গ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. এর দিকনির্দেশনায় মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী রাহ. আড়াইহাজার থানার কমান্ডার হয়ে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধকে ‘জালিমের বিরোদ্ধে মজলুমের সংগ্রাম’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘জামেয়া হুসাইনিয়া আরজাবাদ মাদ্রাসা’র প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর কেন্দ্রীয় নেতা আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী রাহ., জমিয়ত নেতা আল্লামা মোস্তফা আজাদ দা. বা., মাওলানা উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী ও মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী ভ্রাতৃদ্বয়, ‘জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ’ এর সাবেক মোহতামিম ও শায়খুল হাদীছ আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রাহ. এবং আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ রাহ. প্রমূখ অসংখ্য উলামায়ে কেরাম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলিষ্ঠ অবদান রেখেছিলেন। খলীফায়ে মাদানী আল্লামা লুৎফুর রহমান শায়খে বর্ণভী রাহ. এর বাড়িতে অনেক মুক্তিযুদ্ধারা রাত্রীযাপন করেছিলেন এবং অনেক হিন্দু পরিবারকে বরুণার পীরসাহেব রাহ.আশ্রয় দিয়েছিলেন। -(সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব, ২১ মার্চ ২০১৭, ‘ইসলামী জীবন’পাতা)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।