Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না -বিএনপি

সিলেটের সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন, ফয়সাল আমীন, ও খলিলুর রহমান সিলেট থেকে : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুশিয়ারী করে দিয়েছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলেন, সরকার বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে আবারও ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্যে বলে দিতে চাই দেশে বিএনপি এবং খালেদা জিয়া ছাড়া আগামীতে আর কোন নির্বাচন হবে না। গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে সিলেট জেলা রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার ভেবেছিল বেগম খালেদা জিয়াকে জেল খানায় বন্দি রেখে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশা ব্যুমেরাং হয়েছে।
তিনি সরকারকে অবিলম্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের ‘এক দফা এক দাবি, স্বৈরাচার তুই কবে যাবি?’ ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি?’ ‘শেখ হাসিনার সময় শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ’। দলের নেতাকর্মীদেরকে আগামী দিনে আন্দোলনের জন্য আবারো প্রস্তুত থাকার আহŸান জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম খালেদ জিয়াকে মুক্ত করা হবে এবং তার নেতৃত্বেই বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তাকে ছাড়া দেশে নির্বাচন হতে দেয়া হবেনা। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ করছে বিএনপি। ধারাবাহিক এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে গতকাল জনতার ঢল নেমেছিল। পুলিশি বাধা, হামলা গ্রেফতার উপেক্ষা করে জনসভায় যোগ দেয় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী। সিলেট মহানগর ও জেলা, হবিগঞ্জ, মৌলভী বাজার, সুনামগঞ্জ জেলা থেকে জনগণ দুপুরের আগেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। অনেকে আবার আগের দিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেও সিলেট শহরে অবস্থান নেন। আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়া সকলেই ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দি থাকতে দিবো না’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে। আগন্তুকদের হাতে ছিল ধানের শীষ এবং জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ফ্যাস্টুন।
সরকার ফের একদলীয় নির্বাচন করতে চায় মন্তব্য করে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার বিএনপি এবং খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ওই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সুতরাং বর্তমান সরকার অনির্বাচিত এবং সংসদ অবৈধ। কেননা এই সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম ও সংবিধান রক্ষার নির্বাচন বলে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। বিদেশী বন্ধুদের সাথেও প্রতারণা করেছে। এজন্যই সরকার জনগণকে ভয় পায়। কিন্তু জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগের পাত্তা থাকবেনা। তাদেরকে জনগণ বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সরকার ভেবেছে খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ব্যুমেরাং হয়েছে। খালেদা জিয়া আজকে দেশনেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী উপাধি পেয়েছেন। আজকে তাকে নিয়ে শুধু দেশবাসী নয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দও উদ্বিগ্ন। আমরা নেতৃবৃন্দ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ ও নির্দেশে দল পরিচালনা করছি।
তিনি বলেন, সরকার বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও প্রশাসনকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এই সরকার গুম, খুন, অপহরণ এবং টাকা লুট করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরাচারের স্বীকৃতি পেয়েছে। সিলেটের কৃতি সন্তান বিএনপির নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর সন্ধান নেই। তিনি বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলন করবো।
কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আজকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। আক্রমণ করা হচ্ছে। দেশকে মেধাশূন্য করা হচ্ছে। আসলে কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক। এ ব্যাপারে আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুই বছর আগে ‘ভিশন-২০৩০’ তে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ কমূসচিতে বাধা দিচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভয় পায় বলে তাকে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। কয়েকদিন আগে তাকে পিজি হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তার চেহারা দেখে মনে হয় বিন্দু মাত্র মনোবল ভাঙ্গেনি। ম্যাডাম খালেদা জিয়া বলেছেন , গণতন্ত্র উদ্ধার করতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে। তিনি বলেন, স্বৈারচার আর গণতন্ত্র এক সাথে চলতে পারে না। দুর্নীতি করেছে তার জবাব দিতে হবে। এই সরকারের অত্যাচার হিটলারকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়া বন্দি মানে গণতন্ত্র বন্দি। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আইনীভাবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে দুই মাস আগেই মুক্তি পেতেন। তাকে মুক্তি করতে হলে যারা তাকে বন্দি করে রেখেছে তাদের পতন ঘটাতে হবে। এরশাদকে যেভাবে পতন ঘটানো হয়েছিল শেখ হাসিনাকে হটাতে সে পথে যেতে হবে। অন্যথায় গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এই সরকারের ভিত্তি নাই। তারা অবৈধ পন্থায় সরকার গঠন করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে হারানো গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবো। আওয়ামী লীগকে বলবো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাদ দিয়ে রাজপথে আসুন, আমরা আপনাদের রাজপথে মোকাবেলা করবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের মা কে আজকে সরকার বন্দি করে রেখেছে। গণতন্ত্রের মা কি কারাগারে থাকে পারে? গণতন্ত্র সাগরের মতো সাগরকে কেউ বাধ দিয়ে আটকিয়ে রাখতে পারে না। সাগর আজকে জেগে উঠেছে। সাগরের এই পানি দুর্নীতিবাজ আর খুনিদের ভাসিয়ে দিবে। ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান বলেন, খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে সরকার আমাদের সমাবেশে বাধা দিচ্ছে। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট থেকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু হবে। এরমাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা হবে। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখার মতো কারাগার দেশে তৈরি হয়নি।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইনের সভাপতিত্বে এবং সিলেট মহানগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুল হক আসপিয়া, ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরফত আলী সপু, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, শাম্মী আক্তার, এম নাসের রহমান, আলহাজ্ব সুফিয়ান, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নি, সিলেট বিএনপির নেতা এম নুরুল হক, কায়সার আহমেদ ঝন্টু, আব্দুল গফফার, সুনামগঞ্জের নুরুল ইসলাম, মৌলভীবাজারের মিজানুর রহমান, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউছ, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, জেলা বিএনপির এটিএম বেলায়েত হোসেন মোহন, যুবদলের নূরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম সাজু, সিলেট যুবদলের ইকবাল বাহার চৌধুরী, সিলেট ছাত্রদলের সভাপতি সাঈদ আহমেদ, ছাত্রনেতা ইকবাল হোসেন আসিফসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ