পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মধ্যরাতে অনুমোদন পাওয়া শণিবার বিএনপি’র বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ আরেকবার জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে জনসমর্থন প্রমান করেছে। শণিবারের ঐ সমাবেশের জন্য দিন পনের আগে আবেদন করার পরেও অনুমোদন মেলে শুক্রবার রাত ১১টার পরে। তবে বরিশাল মহানগর পুলিশ শেষ মূহুর্তের ঐ অনুমোদন দেয় নগরীর ফজলুল হক এভেনিউর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। এর আগের কয়েক দিন ধরেই বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে বরিশাল মহানগরীতে ছিল এক ধরনের চাপা উৎকন্ঠা। এমনকি সমগ্র দক্ষিনাঞ্চল জুড়েই বিষয়টি ছিল আলোচিত। পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেয়া-না দেয়া নিয়ে এক ধরনের নিরবতা পালনের মধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে যেকোন উপায়ে সমাবেশ করার ব্যপারে অনড় অবস্থানের কথা জানান হয়। এমনকি শণিবারের ঐ সমাবেশে যোগদানের লক্ষে শুক্রবার সন্ধায়ই ঢাকা থেকে মহাসচিবসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ নৌপথে রওয়ানা হন। রাত ১১টার দিকে ভিন্নস্থানে সমাবেশের অনুমোদনের কথা জানায় পুলিশ।
রাতেই নতুনস্থানে মঞ্চ তৈরীসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়। তবে এলক্ষে কোন প্রচারনা ছিলনা। এমনকি সমাবেশস্থলের কথা জানিয়ে শণিবার নগরীতে কোন মাইকিং পর্যন্ত করা হয়নি । এরপরেও বিভাগীয় ঐ সমাবেশে বিশাল জনসমাগম রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলকে অনেকটাই হতবাক করে দিয়েছে। দুপুর ১২টা থেকেই মহানগরীসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্নস্থান থেকে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে পৌছতে শুরু করেন। চৈত্রর প্রখর রোদের মধ্যেই নেতা-কর্মীসহ সাধারন মানুষও শণিবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনেছেন।
শণিবার বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মুক্ত খালেদা জিয়াকে সাথে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে। দেশ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে, স্বৈরাচারের কালিমা থেকে মুক্তি পাবে। আমরা ক্ষমতার জন্য নয়, জনগনের ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম কারো গোলামী করার জন্য নয়, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্যই পাকিস্তানী জিঞ্জির থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু জনগনের স্বাধিকার আজ ভুলুন্ঠিত। তাই স্বৈরাচারমুক্ত গণতন্ত্র কায়েমের জন্য, জনগনের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা জনগনের সরকার কায়েমের জন্য আন্দোলন করছি। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগনের ভোটের অধিকার আদায় করেই ছাড়ব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছে। ভোটার বিহীন সেই নির্বাচনে শতকরা ৫জন মানুষও ভোট দেয়নি। বর্তমান সংসদের ১৫৪টি আসনেই কোন ভোট হয়নি। এ সরকার গায়ের জোরে, বন্দুক-পিস্তল আর সকলকে ধমক দিয়ে জোর করে ক্ষমতা আকড়ে বসে আছে।
দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর সভাপতি সাবেক এমপি মুজিবর রহমান সারোয়ারের সভাপতিত্বে শণিবারের ঐ বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, ড.মঈন খান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিষ্টার শাহজহান ওমর ও সিটি মেয়র আহসান হাবীব কামালসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার আমি ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে দেশনেত্রীর সাথে দেখা করেছিলাম। তিনি বরিশালবাসীকে অত্যন্ত সাহসী ও জাতীয়তাবাদের স্বপক্ষের শক্তি বলে সালাম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বরিশালের মানুষ আজীবন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন। অতীতেও তারা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন বলে উল্লেখ করে বেগম জিয়া আপনাদের অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম জিয়া দেশের প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারপার্সন, তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাকে পরিত্যক্ত কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে রাখা হয়েছে। বেগম জিয়া অসুস্থ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে দেখতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা তাকে কোন বেসরকারি হাসপাতালে দেখাতে বলেছিলাম। কিন্তু তা না করে সরকার তাকে পিজি হাসপাতালে নিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের জন্য বেগম জিয়া তার স্বামী সন্তানকে হারিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য কারো সাথে আপোষ করেন নাই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এখন অত্যন্ত দুঃসময় পার করছি। যখন গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য বেগম জিয়ার নেতৃত্বে থাকার কথা, তখন তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে।
মহাসচিব বলেন, আজ সারা দেশে বিরোধী দলের হাজার-হাজার নেতা-কর্মীকে মামলা দিয়ে আটক করা হচ্ছে। একের পর এক গুম হচ্ছে। বরিশালের জনসভায় আসার পথেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের তাড়া করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পরে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়া মারা হল ঢাকার ছাত্র নেতাকে। ইলিয়াস আলীর ছয় বছরের শিশু এখনো দরজার দিকে তাকিয়ে পিতার অপেক্ষায় আছে।
মির্জা ফখরুল যুব ও তরুণ সমাজের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, এদেশে ’৫২, ’৭১ ও ’৯০-এর আন্দোলন-সংগ্রামে আপনারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন, আজ আবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগনের ভোটের অধিকার আদায়ে আমাদের শৃংখলার মাধ্যমে আন্দোলন-সংগ্রামে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে জজ আদালতে খালাস দেয়ার পরে হাইকোর্ট থেকে আবার সাজা দেয়া হয়েছে। যে জজ তাকে খালাস দিয়েছিল, তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন দেশে আজ বুলেটের শাসন চলছে। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, দেশের ব্যাংক ও শেয়ার বাজার লুট করা হয়েছে। অথচ আমরা নাকি উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হচ্ছি। তিনি বলেন, এ উন্নয়ন ক্ষমতাসীনদের, জনগনের নয়। জনগণ এখন দশ টাকার চাল ৫০ টাকায় কিনছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলেন, এখন জনগনের ‘এক দফা-এক দাবী’। এ সময় উপস্থিত জনতা তার প্রতি উত্তর করেও শ্লোগান দেন।
শণিবারে বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ কেন্দ্র করে গোটা মহানগরীকে নিরাপত্তার চাঁদরে মুড়ে ফেলে পুলিশ। নগরীর প্রতিটি রাস্তার মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ ছাড়াও সাদা পোষাকে আইন-শৃংখলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। এমনকি গোয়েন্দা পুলিশেরও ব্যাপক তৎপরতা লক্ষনীয় ছিল। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের ঐ সমাবেশস্থলে আসতে বাধা দেয়ারও অভিযোগ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।