পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় বেড়েছে উঠতি মাস্তানদের উৎপাত। তুচ্ছ ঘটনায় দলেবলে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজির হয় উঠতি বয়সী তরুণরা। খুনের ঘটনাও ঘটছে। কোথাও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আবার কোথাও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগী অনুচর হিসেবে সক্রিয় কিশোর অপরাধীরা। তাদের হাতেই উঠে আসছে ঝকঝকে চকচকে অস্ত্রশস্ত্র। মহল্লা পর্যায়ে তৈরি হয়েছে ছোট বড় অপরাধী গ্রুপ। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি থেকে শুরু করে ছিনতাই রাহাজানির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে এরা। পুলিশের হিসাবে গত তিন মাসে শুধু রাজধানীর থানাগুলোতে দেড়শতাধিক কিশোর অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। এদের যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীতে যেসব নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগের সাথেই জড়িত রয়েছে উঠতি মাস্তানেরা। বিশেষ করে সরাসরি যারা কিলিং মিশনগুলোতে উঠতি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। গত দশ বছরে রাজধানীর আলোচিত হত্যাকা-ের বেশিরভাগই ঘটিয়েছে উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা। এর মধ্যে আগারগাঁও এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক হত্যা, জুরাইন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ হত্যা, কদমতলীর বাবু, জনি ও হাসান, পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল হক, মগবাজারের ট্রিপল মার্ডার, ভাসানটেকে নাসির হত্যা এবং মিরপুরে ইমন হত্যাসহ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনায় জড়িতদের বেশিরভাগই উঠতি মাস্তানদের দ্বারা সংঘটিত। ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী এসব মাস্তানদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। এসব অস্ত্রের মূল নিয়ন্ত্রক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই দেশের বাইরে বা কারাগারে। তাদের অস্ত্রগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে উঠতি মাস্তানদের কাছে। গত ২৮ মার্চ সোমবার রাজধানীর কদমতলী থানার দক্ষিণ দনিয়াতে বাসায় ঢুকে স্বাধীন (১৭) নামে এক যুবককে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ জানায়, এই হত্যাকা-ের সাথে উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা জড়িত। ঘটনার দিন পুলিশ এ হত্যাকা-ের জড়িত সন্দেহে দুই কিশোরকে আটক করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, উঠতি সন্ত্রাসীদের মধ্যে অনেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অপরিচিত মুখ। এতে তাদের গ্রেফতারে সফল হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীতে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন এমন কয়েক ব্যক্তির সাথে আলাপ করে জানা যায়, যারা তাদের টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের বেশির ভাগের বয়সই ১৪ থেকে ১৮ এর মধ্যে। তিন বছর আগে পাড়া-মহল্লায় সক্রিয় উঠতি সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা তৈরী করেছিল পুলিশ। তালিকায় ৫১৬ জনের নাম আছে। তবে তারা কি মাত্রার অপরাধী তা নিশ্চিত করা যায়নি। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কিশোর অপরাধীদের অভিভাবকদের ডেকে সতর্ক করে দিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে উঠতি সন্ত্রাসীদের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। এর বাইরে পাড়ায় পাড়ায় মাস্তানের সংখ্যা হবে এর কয়েকগুণ বেশি।
দায়িত্বশীল পুলিশ এবং র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ধরনের অপরাধ সংঘটনের আগে উঠতি সন্ত্রাসীদের তালিকাভুক্ত করাও কঠিন কাজ। একটি গোয়েন্দা সংস্থা ঢাকার এলাকাভিত্তিক ১১০০ সন্ত্রাসীর একটি তালিকা তৈরি করেছে। ওই তালিকার একটি বড় অংশজুড়ে আছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং তরুণ বখাটেরা। আলাপকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, টিনএজ বা কম বয়সের অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে এটা ঠিক। তারা যেমন পাড়া-মহল্লায় অপরিচিত, তেমন পুলিশের কাছেও। এতে অপরাধ করে সহজেই গা-ঢাকা দিচ্ছে তারা। ঘটনার পরই তদন্তে তাদের খোঁজ মেলে। তবে ওই কর্মকর্তা জানান, অপরাধীদের ডাটাবেজে উঠতি বয়সীদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরান ঢাকা, ওয়ারী, মিরপুর ও গুলশান জোনেই সবচেয়ে বেশি কিশোর অপরাধীর দৌরাত্ম্য। পুরান ঢাকায় ডাকাত শহীদ, কমিশনার শহিদ গ্রুপ ভিন্নপন্থায় এখন উঠতি বয়সীদের সন্ত্রাসী হিসাবে ব্যবহার করছে। এছাড়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জুরাইনের সানাউল্লাহ, গেন্ডারিয়ার কচি গ্রুপ উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে। গত ঈদুল আযহার আগের দিন র্যাব কদমতলীর মুরাদপুর থেকে অস্ত্রসহ দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে। উঠতি বয়সী ওই দুই সন্ত্রাসীর নেপথ্যে রয়েছে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। অন্যদিকে, বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে তিন শতাধিক উঠতি সন্ত্রাসী গোটা মিরপুর, পল্লবী, রুপনগর, ভাসানটেক, শাহআলী থানা এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু ভাসানটেক এলাকাতেই ৬টি গ্রুপের অর্ধশতাধিক উঠতি সন্ত্রাসী এখন অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে। উঠতি সন্ত্রাসীদের মুখগুলোর মধ্যে সোহেল, মামুন, সালাম, বাবলু, আলতাফ, কালু, কানা আলম, দাঁতভাঙা খোকন, ছক্কা শরীফ, হাবীব, তমাল, জাহান শরীফ, সুজন, নবী, মালেক, জাকির, সামসুদ্দীন, আমির, দুলু, কানা কালু, রাসেল, হিমেল, দুলাল, কুদ্দুস, ল্যাংড়া বাদল, সজীব, হানিফ এবং ইমামের নাম অনেকেরই জানা। মিরপুর জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, উঠতি সন্ত্রাসীদের ভয়ে অনেকে থানায় কোনো অভিযোগ করতেও সাহস পান না। কিন্তু অভিযোগ না করলে অপরাধীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়।
গুলশান বিভাগের বনানী থানাভুক্ত মহাখালী, দক্ষিণপাড়া, সাততলা বস্তি, কড়াইল বস্তি ও আশপাশ এলাকায় শতাধিক উঠতি মাস্তানের ব্যাপক দৌরাত্ম্যে বাসিন্দারা আতংকিত জীবনযাপন করছেন। তারা পাড়ায় পাড়ায় তরুণীদের উৎপাত করাসহ নানারকম নেশায় মত্ত থাকে। চাঁদাবাজি, দখলবাজিতেও তারা বেপরোয়া। যে কোনো বাসা-বাড়িতে যখন তখন চড়াও হওয়া, নানা ছলেবলে চাঁদা আদায়, যাকে খুশি আটক করে হয়রানি করা এখন উঠতি মাস্তানদের ওয়ান-টু ব্যাপার। রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলগেট এলাকায় সোর্স আজিজের নেতৃত্বেও ৩০/৪০ জন উঠতি সন্ত্রাসীর বড় গ্রুপ নানারকম অপরাধে লিপ্ত। ভুক্তভোগিরা জানান, রেললাইন সংলগ্ন বাটা শোরুমের পেছনের গলিতেই একটি ক্লাবের আদলে পাকা আস্তানা বানিয়ে উঠতি সন্ত্রাসীরা নেশা থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ ঘটিয়ে চলছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, এসব মাস্তানরাই সন্ধ্যার পর ছিনতাইকারী সেজে মানুষজনের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই গ্রুপে শতাধিক বখাটে কিশোর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মিরপুরের ১০, ২, ৬, ১১ এবং ১৩ নাম্বার এলাকা। স্কুলপড়ুয়া এসব কিশোর মিরপুরের বেশ কয়েকটি নামিদামি স্কুলের সামনে নিয়মিত মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। তাদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। এলাকাবাসী জানান, ভাসানটেক এলাকায় সন্ধ্যা হলেই উঠতি সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে আবার ঘুরে ঘুরে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বিক্রি করে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী উঠতি এসব অপরাধীকে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহার করে। কিশোর অপরাধীদের তারা মাসোয়ারা দিয়ে থাকে। মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্ব নিয়ে উঠতি সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতেও জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর অনেক দাগি অপরাধী দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। তাদের কেউ কেউ উঠতি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে ‘সাম্রাজ্য’ রক্ষার চেষ্টা করছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের সামনে কোনো মডেল বা আদর্শ রাখতে পারছি না। ওরা অন্যায়, অনাচার, দুর্নীতি, অনিয়ম, হত্যা, ধর্ষণ দেখে দেখে বড় হচ্ছে। উঠতি বয়সীদের সন্ত্রাসের সাথে জড়িয়ে পড়ার এটা একটা কারণ। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই প্রবণতা রোধ করতে হলে সমাজে আইনের শাসন কায়েম করতে হবে। অন্যায়ের বিচার হতে হবে। আজকে যারা কিশোর তারা তো ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছে এদেশে অপরাধ করলে কিছু হয় না। এজন্য বয়সের কারণে তারা আগ্রহবশত কিছু অপরাধ করে। এরপর তা পেশা হয়ে যায়। প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান বলেন, এখনও সময় আছে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আইনের শাসন কায়েম করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের সামনে মডেল বা আদর্শ যেনো থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।