Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কূল-কিনারা হচ্ছে না তনু হত্যার তদন্তে

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্য সোহাগী জাহান তনু হত্যাকা-ের দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তনু হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি’র সামনে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তনুকে কোথায় এবং কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ প্রশ্নের উত্তর মিললেই বেরিয়ে আসবে ঘটনার সময় খুনিদের অবস্থান এবং হত্যার উদ্দেশ্য কি ছিল। তবে হত্যাকা-টি যে পূর্বপরিকল্পিত এবিষয়ে নিশ্চিত সিআইডি। এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে গতকাল সারাদেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়েছে।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেনের একমাত্র মেয়ে তনুর লাশ মিলেছে সেনানিবাসের আবাসিক এলাকায়। কিন্তু যেখানে লাশ মিলেছে সেখানে তনুকে হত্যা করা হয়নি। এটা নিশ্চিত মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। তাহলে তনুকে কোথায় হত্যা করা হয়েছে ? আর কারা হত্যা করতে পারে তনুকে ? সিআইডির তদন্ত দল মনে করছে হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা এ মুহূর্তে এমন বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখন সবচে বেশি জরুরি হত্যার স্থান নির্ণয় করা। আর হত্যার স্থান চিহ্নিত হলেই খুনিদের অবস্থানসহ তাদের শনাক্ত করার কাজটি অনেকটা সহজ হয়ে উঠবে। সিআইডির হাতে তদন্তভার ন্যস্ত হবার পর থেকে তাদের কাছে তনু হত্যাকা- নিয়ে অনেক তথ্যই আসছে। সিআইডি এসব তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করছেন। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, হত্যার আগে তনুর শরীরে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করেছিল খুনিরা। লাশ উদ্ধার স্থানের ঘাস ও মাটি পরীক্ষায় অস্তিত্ব মিলেছে চেতনানাশক ওষুধের। আর এ থেকে বুঝা যায় হত্যাকা-টি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তাহলে তনু কাদের টার্গেট ছিল ?
জানা গেছে, সোহাগী জাহান তনু কোন ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত না থাকলেও নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের একজন অন্যতম সদস্য ছিলেন। নাটক, সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে ছিল তার সরব উপস্থিতি। তবে তনুর চালচলনে শালীনতা, আচার-আচরণে নম্রতা ও পোশাক পরিচ্ছদে ছিল সে পর্দাশীল নারীর মতো। তনুর পরিবারের ভাষ্য, তার কারো সাথে বিরোধ বা গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। সংসারের অসচ্ছলতার বিষয়টি নিয়ে সে ভাবতো। নিজের পড়ালেখা ও ব্যক্তিগত খরচ বহন করতো দুইটি টিউশনির অর্থ দিয়ে। তা থেকে সংসারেও সহযোগিতা করতো। তনুকে কেউ হত্যার পরিকল্পনা করতে পারে এমনটি ভাবতেই পারছে না তার পরিবারসহ কলেজ সহপাঠীরা। আবার অনেকের ধারণা, তনু যদি পরিকল্পিত হত্যার শিকার হবে তাহলে তো আরও আগেও হতো পারতো। সিলেট থেকে কলেজ থিয়েটারের পিকনিক সেরে ২০ তারিখ কুমিল্লায় ফিরে আসার পরদিন কেন খুন হলো। তাহলে সিলেটে অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল তনু ? এমন প্রশ্নও ঘুরপাক পাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। যদিও আগের তদন্ত সংস্থা ডিবি ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্যদের সাথে তনুর বিষয়ে কথা বলেছেন।
এদিকে দেশব্যাপী আলোচিত তনু হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে সিআইডির তদন্ত দল। গতকাল রোববার তনু হত্যা মামলা নিয়ে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে বৈঠক করেছে তদন্ত দল। ঢাকা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহহার আকন্দের নেতৃত্বে সকাল ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ওই বৈঠক। ঘটনার দিন ১২ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টারে সার্জেন্ট জাহিদ হোসেনের বাসায় দ্বিতীয় টিউশনি সেরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তনু বের হয়ে যায়। সেই বাসা থেকে বেরিয়ে তনু কোথায় গিয়েছিল কিংবা কেউ তার সাথে দেখা করেছিল কিনা, কেউ তাকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিল কিনা এমন সব প্রশ্নের উত্তর হত্যার ১৪দিনেও বের হয়ে আসেনি। তবে সিআইডি এসব প্রশ্নের আগে বের করতে চাইছে তনুকে কোন জায়গাটিতে হত্যা করা হয়েছে। জায়গাটি নির্ণয় হলেই খুনি বা খুনিদের কোন না কোন চিহ্ন পাওয়া যেতে পারে। আর এরি মধ্যদিয়ে হয়তো উদঘাটন হতে পারে তনু হত্যার প্রকৃত রহস্য।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে দ্রুত বিচারের দাবীতে রোববার নাটোরে মানববন্ধন করেছে নাটোর সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শহরের হাফরাস্তা এলাকায় নাটোর সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয়ের সামনে নাটোর-রাজশাহী মহা সড়কের দুই ধারে ব্যানারে হাতে দাঁড়িয়ে এই মানববন্ধন করে। এসময় ছাত্রদের সাথে শিক্ষকরাও মানববন্ধনে অংশ নেন।
শাবি সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ‘সোহাগী জাহান তনু’ হত্যার বিচার দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই ধর্মঘট পালন করা হয়। ধর্মঘট পালনের কারণে বিশ^বিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগেরই ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে তনু হত্যার বিচারের দাবিতে বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে থেকে প্রগতিশীল ছাত্রজোট একটি বিভোক্ষ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কূল-কিনারা হচ্ছে না তনু হত্যার তদন্তে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ