পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর ওয়ারীতে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত কিশোর রাকিব হাওলাদারে মা বলেছেন, ‘আমার ছেলেকে থানায় পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছে। থানায় যখন পুলিশ রাকিবকে মারধর করে তখন আমি থানায় ছিলাম। আমার ছেলের চিৎকার শুনে সহ্য করতে পারিনি। কারণ আমি তো মা। তাই থানার ওসি তদন্ত সেলিম স্যারকে বার বার অনুরোধ করেছি ছেলেকে মারধর না করতে। এসআই জোতি স্যারকে বলেছি ছেলে অপরাধ করলে প্রয়োজনে কারাগারে পাঠান। তবে পুলিশ আমার অনুরোধ রাখেনি। উল্টো আমাকে থানা থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে ওসি তদন্ত সেলিম স্যার। সেলিম স্যার আমেকে বলেন, ‘এই বেটি থানা থেকে বের হ, না হয় তোরেও ক্রসফায়ারে দিব।’
গতকাল শনিবার কাঁদতে কাঁদতে এ কথাগুলো বলছিলেন নিহত রাকিবের মা রিতা বেগম।
রিতা বেগম অভিযোগ করেন, বুধবার রাতে ওয়ারী থানার এসআই জ্যোতিষ চন্দ্র তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার তিনি খাবার নিয়ে থানায় গেলে তাকে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
রিতা বেগম বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আজ রবিবার আমি আদালতে মামলা করব। তিনি দাবী করেন,তার ছেলের নামে নামে অন্য কেউ হয়তো ছিনতাই মামলার আসামী হতে পারে। ওই ছিনতাই মামলার যিনি বাদী তিনিও বলেছেন আমার ছেলে নয় অন্য একজন ছিনতাই করার সময় ওই বাদির ছেলেকে মেরে ফেলেছে।
অন্যদিকে নিহত রাকিবের রাকিবের বাবা মহসীন হাওলাদার ছেলেকে নির্দোষ দাবি করেন। নিজেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে রাকিবের জন্ম হয়। সে এখনও কোমলমতি শিশু। কিছুটা দুষ্ঠ প্রকৃতির হলেও সে কোন অপরাধমুলক কাজে জড়িদ নয়। রাকিব পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। মহসিন আরো জানান, রাকিব শিশুশল্পী হিসাবে অভিনয় করেছে ‘›ভালো আমাকে বাসতেই হবে› নামে একটি চলচ্চিত্রে।
মহসীন হাওলাদার আরো জানান, তার প্রযোজিত এ সিনেমাটি ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। তার প্রযোজিত ও রাকিব অভিনীত ‹এসো না প্রেম করি› নামে আরেকটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
মহসীন জানান, প্রথম সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে সফল না হওয়ায় তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তখন তিনি তিনটি চায়ের দোকান দেন। ব্যবসায়িক দ্ব›েদ্বর কারণে পরে তিনি দোকানগুলো ভাড়া দিয়ে ‹মদীনা ডিজিটাল সাইন› নামে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা চাঁদা আদায় করে পুলিশ। মঙ্গলবার তিনি টাকা না দেওয়ায় বুধবার পুলিশ তার ছেলেকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন।
পুলিশের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাকিব নামে অন্য কেউ হয়ত হত্যা-ছিনতাইয়ে জড়িত। কিন্তু পুলিশ তার ছেলেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‹বন্দুকযুদ্ধে› রাকিব হাওলাদার নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। পুলিশের দাবি, ১৯ বছর বয়সী রাকিব পেশাদার ছিনতাইকারী। সে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র খন্দকার আবু তালহা হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন। এ ছাড়া একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনায় সে অভিযুক্ত ছিল। এদিকে নিহতের স্বজনরা বলছেন, রাকিবের বয়স মাত্র ১৪ বছর।
নিহত রাকিবের মা রিতা বেগম বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রাকিব বাসায় রাতের খাবারে জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় পুলিশের এসআই জোতি স্যার তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর বৃহস্প্রতিবার জানতে পারি রাকিবের লাশ হাসপাতাল আছে। আমার ছেলে ওই রাতের খাবারটাও বাসায় খেতে পারেনি।
রিতা বেগম বলেন, ক্রসফায়ারের নামে মৃত অবস্থায় ছেলের বুকে গুলি করেছে পুলিশ। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলেই তা প্রমাণ হবে। তিনি বলেন, ছেলে অপরাধ করলে আদালত আছে, বিচার আছে, এভাবে থানা নিয়ে পিঠিয়ে মেরে ফেলার কারণ কি। আমি এর সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।
নিহত রাকিবের নানা আবদুল লতিফ বলেন, রাকিব কিছুটা দুষ্টু হলেও কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। শিশুশিল্পী হিসেবে সে চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছে। রাকিবকে ‹হত্যা›র অভিযোগে আজ রবিবার আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানিয়েছে তার নানা আবদুল লতিফ।
এদিকে পুলিশ জানায়, ডাকাত-ছিনতাইকারীদের একটি দল ওয়ারীর টয়েনবি সার্কুলার রোডের ফেনী হোমিও হলের সামনে অবস্থান করছে- এমন খবর পেয়ে রাত ৩টার দিকে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তারা গুলি ছুড়তে শুরু করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তদের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধার করে ভোর ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট ও হাফহাতা গেঞ্জি। তখনও তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে তাকে ছোট রাকিব বলে শনাক্ত করা হয়। তার বাড়ি ওয়ারীর বনগ্রাম লেন এলাকায়। ঘটনাস্থল থেকে জাকির হোসেন ও শাহেদ হোসেন সীমান্ত ওরফে ধলা নামে তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার এবং দুটি চাপাতি, দুটি ছোরা ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। তারা হলেন- এএসআই নুরুল ইসলাম ও কনস্টেবল জুয়েল শিকদার।
পুলিশ আরও জানায়, ড্যাফোডিলের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র তালহা গত বছরের ৮ অক্টোবর সকালে ওয়ারীর বাসা থেকে রিকশায় যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। ছুরিকাঘাতে আহত হলে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বেলাল হোসেন সবুজ ও আবদুর রহমান মিলন নামের দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তালহা হত্যাকাে রাকিবের জড়িত থাকার তথ্য জানায়।
স্বজনদের অভিযোগের জবাবে ওয়ারী থানার ওসি জানান, আবু তালহা হত্যাকাÐ ছাড়াও একাধিক হত্যা-ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত ছিল রাকিব। তালহাকে ছুরিকাঘাত করার দু›দিন পর ১০ অক্টোবর ছিনতাই করতে গিয়ে সে ধরা পড়ে। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। তিন মাস তাকে কারাগারে থাকতে হয়। সর্বশেষ ২ এপ্রিল জয়কালী মন্দির এলাকায় মোক্তার হোসেন নামে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সে।
ওয়ারী থানা এলাকার ৩৫ নম্বর বনগ্রাম লেনে রাকিবের বাবার বাসায় গিয়ে দেখা গেছে আত্মী স্বজনেরা রাকিবের মা রিতা বেগমকে শান্তনা দিচ্ছেন। আর রিতা বেগম কিছু সময় পর পর চিৎকার করে কাঁদছে। রাকিবের বাসায় তার ভাই বোন ও স্বজনেরও কান্না করছেন। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে রাকিব তৃতীয়।
পুলিশ মামলায় রাকিবের বয়স ১৯ বছর এবং হাসপাতালে সুরতহালে ২২ বছর বলে উল্লেখ করেছে। তবে জন্মনিবন্ধনে রাকিবের বয়স ১৫ বছর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।