Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঙ্কটে উন্নয়ন আবাসন শিল্প

চট্টগ্রামে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

হঠাৎ করে রড সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়ির কাজ বন্ধ রেখেছেন নগরীর পতেঙ্গা বিজয় নগরের বাসিন্দা আবুল কাশেম। প্রবাসে আয়ের জমানো টাকায় দোতলা ভবন করার পরিকল্পনা ছিল তার। একতলা শেষ হওয়ার আগেই কাজ বন্ধ করে দেন তিনি। নগরীর দেওয়ান বাজারের আনোয়ারুল হাসানও বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে অপেক্ষা করছেন কখন নির্মাণ সামগ্রীর দাম কমবে। ওই দু’জনের মতো নগরীর বাড়ির মালিকদের অনেকেই নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন।
রড, সিমেন্ট, পাথর, বালি ও ইটের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে নির্মাণ কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ব্যাহত হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নও। নির্মাণ সামগ্রীর অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে আবাসন খাত। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা না গেলে এ খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উন্নয়ন থমকে গেছে। এ কারণে বেচা-বিক্রিও কমে গেছে রড, সিমেন্টের দোকানে। এসব ব্যবসার সাথে জড়িতরাও রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাÐ চলছে। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন আবাসিক এলাকা সুউচ্চ ভবন। নগরায়নের ফলে দ্রæত সম্প্রসারিত হচ্ছে মহানগরী। সরকারি উদ্যোগে স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণ চলছে। শিল্পোদ্যোক্তারা নির্মাণ করছেন কারখানা ভবন। এ সময়টা নির্মাণ কাজের পিক সিজন হওয়ায় চারিদিকে চোখে পড়ে উন্নয়ন কর্মকাÐ। তবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব উন্নয়ন ও নির্মাণ কর্মকাÐে স্থবিরতা নেমে এসেছে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামেও উন্নয়ন ও আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হঠাৎ করে রডের দাম বেড়ে যায়। ৩ মাসের ব্যবধানে টন প্রতি রডের দাম ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক মাস আগে গ্রেড ভেদে টন প্রতি রডের মূল্য ছিল ৫৮ হাজার টাকা। এখন তা ৬৯ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের সিমেন্টের বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। কোন কারণ ছাড়াই বেড়ে গেছে পাথর ও ইট, বালির দাম। ইট প্রতি দাম বেড়েছে এক টাকা করে।
রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার, পরিবহন ভাড়া ও বন্দরের খরচ বৃদ্ধির কারণে রডের দাম বাড়ছে। এছাড়া পণ্য পরিবহনে ওজনসীমা নির্দিষ্ট করে সরকারের এক্সেল লোড আইন প্রবর্তন, গ্যাসের সংকট, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সেইসাথে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ার কারণেই রডের দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন তারা। অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ববাজারে রডের প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের মূল্য ৩১২ ডলার থেকে বেড়ে ৩২৭ ডলারে উঠেছে। এ কারণে উৎপাদন খরচ প্রতি টনে ৯ হাজার ৮৯২ টাকা বেড়ে গেছে। আবার ডলারে বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে প্রতি টন রডে এক হাজার ৭০৮ টাকা খরচ বেড়েছে। এছাড়া স্পঞ্জ আয়রন ও রাসায়নিকের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও রডের দাম বাড়ছে।
রডের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোন কারণ ছাড়াই বেড়ে গেছে সিমেন্ট, বালি ও ইটের দাম। নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব ব্র্যান্ডের সিমেন্টের দাম এক মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এ মূল্যবৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে ক্লিংকারের মূল্যবৃদ্ধি, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিকে দুষছেন সিমেন্ট ব্যবসায়ীরা। নগরীর চকবাজার এলাকার ব্যবসায়ী মঈনুল হোসেন বলেন, রড, সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেচা-বিক্রিও কমে গেছে। এক মাসে রড, সিমেন্ট বিক্রির প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এদিকে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিতে সঙ্কটের মুখে পড়েছে চট্টগ্রামের আবাসন শিল্প। দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে এ খাত কিছুটা গতিশীল হয়েছিল। বিক্রি বেড়েছিল ফ্ল্যাট ও প্লটের। উদ্যোক্তারা নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব প্রকল্প থমকে গেছে। রিহ্যাবের ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির চেয়ারম্যান কৈয়ুম চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রামের আবাসন খাত চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এর পাশাপাশি গৃহ ঋণে ব্যাংক সুদের হার দুই অংকের ঘরে উঠে যাওয়ায় এ খাতে বিনিয়োগকারীরা এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। আবাসন খাতে চট্টগ্রামে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা না গেলে এ খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের উচিত এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদারক করা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর আবাসন খাত বিপর্যয় কেটে উঠছিল। কিন্তু আবার অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে এ খাত।
নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। মহানগরী ও জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাÐ চলছে। রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নয়নমূলক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কয়েজন ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূল্যবৃদ্ধির কারণে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে। তবে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে না। এতে করে ঠিকাদাররা লোকসানের মুখে পড়ছেন। আবার কোথাও লোকসান এড়াতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকাদাররা বলছেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত করা যাবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবাসন

২৮ ডিসেম্বর, ২০২১
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ