Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকার ৫ খাল খনন করা হবে

0 অবৈধ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর ষ সারা দেশে প্রচার হবে সরকারের উন্নয়ন ষ একনেকে ৩৪১৫ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম


আর কয়েকদিন পরেই বর্ষাকাল। আবার একটু বৃষ্টিতেই পানিবদ্ধতা। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়া। মানুষের দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে পড়া। তবে ঢাকার পানিবদ্ধতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে ৪৬টি খালের মধ্যে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি খাল খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মান্ডা ও বেগুনবাড়ি খাল খননের পাশাপাশি পুনঃখননের শিরোনামের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ৬০৭ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকা যোগান দেওয়া হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
পাঁচটি সরকারি খাল দখল করে যারা অবৈধভাবে বাসাবাড়ি করেছে, তাদের বাসাবাড়ি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় তিনি বলেন, খালের জায়গায় দখল করে কেউ যদি ২০ তলা ভবনও করে থাকে, সেটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা জানান। ২০১৯ সালের মধ্যেই খাল খননের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঢাকা ওয়াসা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের আওতায় ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এরমধ্যে মান্ডা খাল খনন করতে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ১৩ একর। বাইশটেকী ও সাংবাদিক কলোনী খাল খননে ৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এছাড়া হাজারীবাগ খালে চার একর, কুর্মিটোলা খালে ৫ একর, বেগুনবাড়ি খালে দুই একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। অবশ্য এই ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ ও অবৈধদের উচ্ছেদ করা নিয়ে নিজের সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, কাজটি করতে পারলে ভালো। তবে করাটা বেশ চ্যালেঞ্জ হবে।
ঢাকা ওয়াসার দেওয়া তথ্য মতে, রাজধানীর ৪৬টি খালের মধ্যে ওয়াসার নথিতে ২০টি বিলীন ও ২৬টির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ আছে। ২৬টি খালও বাস্তবে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। সেখান থেকে ৫টি খাল উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিল সরকার।
ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের আওতায় ১৪ কিলোমিটার এলাকা খাল খনন ও পাড় উন্নয়ন করা হবে। দুই হাজার ২০০ ডিমারকেশন পিলার দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও রেখেছে সরকার। প্রকল্পটি নেওয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে ওয়াসা জানিয়েছে, বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির সময় পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রেখে পানিবদ্ধতা দূর করতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত মান্ডা, সবুজবাগ ও বাসাবো এলাকা এবং উত্তরের অধিভুক্ত মিরপুর, পল্লবী,বাড্ডা ও রামপুরা এলাকা।
ওয়াসা সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সোয়া এক কিলোমিটার বাইশটেকি খালটি ৪০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। এছাড়া ১৮০ মিটারের সাংবাদিক কলোনির খালটি ৩০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে ওয়াসাকে। কারণ, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার কিছু খাল বর্তমানে নগরবাসীর ব্যক্তিগত জমির মাধ্যমে ব্যবহƒত হচ্ছে। যেখানে ওয়াসার কোনো আইনগত কর্তৃত্ব নেই। এতে করে জমির মালিকরা যেকোনো সময় তাদের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে নগরীর সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা বজায় রাখা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা ঢাকা ওয়াসার। অবশ্য একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, এই পাঁচটি খাল খনন ও উদ্ধার করতে পারলে ঢাকার জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে আসবে।
এদিকে গতকালের একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া দশটি বিশেষ উদ্যোগ প্রচারে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৬০ কোটি টাকা। ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ’ শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তথ্যমন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ অধিদপ্তর।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া দশটি উদ্যোগের কারণে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মানের উন্নতি ঘটেছে। আয় বেড়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের মানদন্ড অনুসরণ করে নিæ আয়ের দেশ থেকে নিæ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আর জাতিসংঘের দেওয়া স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পেয়েছে। উদ্যোগ গুলো হলো একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি. নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। এই প্রকল্পের আওতায় স্বল্প দৈর্ঘের চলচ্চিত্র নির্মাণ হবে ৫টি। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে ২১ হাজার ৯৬০টি। সঙ্গীতানুষ্ঠান হবে প্রায় দশ হাজার। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ শীর্ষক আউটরিচ প্রোগ্রাম হবে সাড়ে চার হাজার। নারী সমাবেশ হবে দেড় হাজার। শিল্পীদের সম্মানী দেওয়া হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সভায় তিন হাজার ৪১৫ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরো টাকাই আসবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। গতকাল একনেকে অনুমোদন পেয়েছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৫৫১ কোটি টাকা। সারা দেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এই প্রকল্পের আওতায় চার হাজার ৮৮৩টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হবে। কিশোর কিশোরীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। খেলাধুলার উপকরণ কিনে দেবে সরকার। মাদক ও বাল্যবিয়ে রুখতে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন, জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ, আশুগঞ্জ ১৩২ কেভি পুরাতন এআইএস উপকেন্দ্রকে ১৩২ কেভি নতুন জিআইএস উপকেন্দ্র দ্বারা প্রতিস্থাপন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম)-কে শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, বরগুনা জেলার উপক‚লীয় পোল্ডারসমূহে সেচ কাজের জন্য খাল পুনঃখনন এবং এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪) প্রশস্তকরণ প্রকল্প।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একনেক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ