Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধান বিচারপতির মূল্যায়ন - আইন প্রণেতারা অজ্ঞ

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩২ পিএম, ২ এপ্রিল, ২০১৬

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : আইন প্রণয়নে আইন প্রণেতাদের অজ্ঞতা রয়েছেন এ অভিমত ব্যক্ত করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আইনসভায় আইনের চর্চা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কারণ আইন প্রণেতারা আইনের ব্যাপারে অজ্ঞ। বাংলাদেশে আইন প্রণয়নের সময় সংসদে আইনের খুঁটিনাটি আলোচনা না হওয়ায় তাতে ত্রুটি থেকে যায়। এর চাপ পড়ে বিচার বিভাগের ওপর। আর ভোগান্তিতে পড়ছেন জনগণ। দেশের প্রশাসন ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি; সে তাপ দেশের বিচার বিভাগে লাগবে না? গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে আইন কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. এম. শাহ আলমের লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের আইনের সংস্কার ও আইন কমিশন’ এবং ‘সিলেক্টেড রাইটিং অন ইন্টারন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল ল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামের দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রফেসর ড. রহমত উল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালেয়ের আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর সরকার আলী আক্কাস। অনুষ্ঠানে গ্রন্থ দুটির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন লেখক প্রফেসর ড. এম. শাহ আলম।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হল আমরা যখন পার্লামেন্টারি ডিবেট নিয়ে আসি আইনের উদ্দেশ্য অনুধাবন করা জন্য। আমরা কি কিছু পাই? আমাদের আইন প্রণেতাদের আইন সমন্ধে অজ্ঞতা আছে।
বাংলাদেশে প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ আইনের অধিকাংশই ১৮৯৮ সালের উল্লেখ করে বিচারপতি সিনহা বলেন, দেখা যায়, প্রয়োগিকভাবে এই আইনগুলোতে খুব কম কার্যকারিতা আসে। এই প্রসঙ্গে পুরানো আইন দিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্ত কতটা ফলপ্রসূ হবে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, কুমিল্লাতে একটি অপরাধ হয়েছে। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোর্ট দিয়ে তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব নয়। এটা থেকে উত্তরণে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে নতুন পন্থায় তদন্তের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আমাদের পুলিশ কর্মকর্তাদের যে মানসিকতা তা দিয়ে এই রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব নয়। যেভাবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এতে বেশ কিছু বৈষম্য হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাজার হাজার মামলা পড়ে থাকে। এই মামলাগুলো নিয়ে আমরা হিমশিম খেয়ে যাই।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের দেশের বেশির ভাগ আইন অচল হয়ে গেছে। এসব আইনের ব্যবহারের কার্যকারিতা অনেক কম। এগুলোর ব্যাপক সংস্কার করা করতে হবে। এই সময় বিচার ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা জরুরি। এর মধ্যে বিচার ব্যবস্থা বাণিজ্যিক হয়ে যাওয়াটা প্রধান। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে প্রচলিত আইনের মিল নেই। একে ঢেলে সাজাতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের দায়িত্ব ভুলে যাওয়াটাও অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।
নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত রায় কেনা-বেচা হয়- ড.আবুল বারকাতের এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, উনাকে আমি প্রশ্ন করছি, আপনি একটা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। আপনি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন, আপনি যেগুলো লোন দিয়েছেন, সেগুলো ন্যায়মতো দিয়েছেন। আপনি পারেন নাই, আপনাকে কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে। উপায় নেই, আপনাকে বাধ্য হতে হয়েছে।
এক মেয়াদে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বারকাত প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে গেলে বিচারপতি সিনহা বলেন, আই নো... আমি জানি, একটাতে আপনাকে বাধ্য হতে হয়েছে। সর্বত্র দুর্নীতির প্রভাব থেকে বিচার বিভাগ বিচ্ছিন্ন নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সব জায়গায় অনিয়ম থাকবে, বিচার বিভাগের একবারেই ফেরেশতা হয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। হয়, কিছু অনিয়ম হয়। এখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আরও কিছু ইনস্টিটিউশনকে আরও জবাবদিহিতা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, কিছুদিন আগে কুমিল্লার একটি স্পর্শকাতর জায়গায় তনু নামে এক মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে অনেকেই আন্দোলন করছে, বিষয়টি ইতিবাচক। কিন্তু ঢাকা শহরের অনেক জায়গায় প্রতিনিয়তই অনেক গৃহকর্মী নির্যাতিত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। কই এসব বিষয় নিয়ে কেউতো কোনদিন আন্দোলন করল না। এ ক্ষেত্রে আইন কি সবার জন্য সমান নয়?
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে ড. মিজানুর রহমান বলেন, সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনে কেন সহিংসতা হল? কেন ৩২ জন লোক মারা গেছে? এতে নির্বাচন কমিশন কি করছে, তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের বাধাঁ কোথায়? কমিশনের যতটুকু ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ করলে সমস্যা কোথায়?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতির মূল্যায়ন - আইন প্রণেতারা অজ্ঞ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ