Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে সুন্দরবন ধ্বংস করছে -আনু মুহাম্মদ

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি খোদ বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘেরও উদ্বেগ রয়েছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান এডভোকেট সুলতানা কামাল।
গতকাল (শনিবার) ঢাকা রিপার্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত ‘ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের সাম্প্রতিক সুন্দরবন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সরকার মিলে সুন্দরবন পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করতে এগিয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের পার্শ্বে রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে এই বন ধ্বংসে নেমেছে তারা। তিনি সুন্দরবন বিনাশী সকল অপতৎপরতা বন্ধে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শেষ বন এটি। তবে এই বন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের সম্পদ। তাই সারা বিশ্বকে এই বন রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
সুলতানা কামাল বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি খোদ বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘেরও উদ্বেগ রয়েছে। কারণ সুন্দরবনের মধ্যে একটি ‘রামসার সাইট’ ও আরেকটি ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ বা ‘বিশ্ব-ঐতিহ্য এলাকা’ রয়েছে। জাতিসংঘের রামসার সচিবালয় লিখিতভাবে অনেক আগেই সুন্দরবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে তাদের পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করেছে।
তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ত্রুটিপূর্ণ ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদন ব্যবহার, নির্মাণ ও নির্মাণোত্তর পর্যায়ে বনের মধ্যে বিভিন্ন মালামাল ও কয়লা পরিবহন, উপর্যুপরি নৌ-দুর্ঘটনা, বায়ু-পানি-মাটি-শব্দদূষণ থেকে বনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা প্রভৃতির প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব-ঐতিহ্য কেন্দ্র উদ্বেগ প্রকাশ করে। জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের চিঠি দিয়ে আশ্বস্ত করা হয়, বনের ক্ষতিকর কিছু করা হচ্ছে না।
সুলতানা কামাল আরো বলেন, ওই চিঠিতেও জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রশমিত হয়নি। ফলে ২০১৫ সালে ইউনেস্কোর ৩৯তম অধিবেশনে সুন্দরবনের বাস্তব পরিস্থিতি ও সরকারের কার্যক্রম অনুধাবনের জন্য বাংলাদেশে একটি ‘রিয়েকটিভ মিশন’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবে সুন্দরবনের জন্য বাংলাদেশের কার্যক্রমের প্রতি যে ইউনেস্কোর অবিশ্বাস, অনাস্থা, সন্দেহ রয়েছে, তারই ইঙ্গিতবাহী। এই টিমের প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করেই সিদ্ধান্ত হতে পারে যে, বাংলাদেশের প্রভূত সম্পদশালী জাতীয় গৌরব সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকবে, নাকি বাদ পড়বে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশবান্ধব নয় দাবি করে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, এই প্রকল্পে যারা কনসালট্যান্ট হিসেবে আছেন, তারাই কেবল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পক্ষে কথা বলছেন, সমর্থন করছেন। অন্যদিকে এই প্রকল্পের পক্ষে একজনও স্বাধীন বিশেষজ্ঞ নেই। পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক রামপাল এবং ওরিয়ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি পরিবেশবান্ধব হতো, সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি না করতো তা হলে তো সরকার দেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের ভয় পেতো না। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের যারা কনসালটেন্ট বিশেষজ্ঞ আছে তারাই কেবল রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে কথা বলছে, সমর্থন করছে। তিনি বলেন, দেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে আওয়ামী লীগের একটি বড়ো অংশই সুন্দরবনের পার্শ্বে এই রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতো। অপরদিকে সরকার নিজেই এধরনের প্রকল্প নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। বৈজ্ঞানিক যুক্তি থাকলে তারা এই প্রকল্প নিয়ে জনগণের কাছে খোলামেলা কথা বলতে পারছে না। এই প্রকল্পের পক্ষে একজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল মতিন ও কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে সুন্দরবন ধ্বংস করছে -আনু মুহাম্মদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ