পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ব্যাংকিং খাত থেকে এনজিওগুলো বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতো। কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে তাদের ঋণ তো দিচ্ছেই না কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক, এমনকি আগের অনুমোদিত ঋণও ছাড় করছে না। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বাড়তি সুদ। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে সঞ্চয় তুলে নিচ্ছে লাখ লাখ গ্রাহক। এমন অবস্থায় ঝুঁকিতে পড়েছে এনজিও খাত। এনজিওদের জোট ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (সিডিএফ) নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আউয়াল বলেন, তারল্যসংকটের কথা বলে ঋণ প্রদান বন্ধ করা হয়েছে। ফলে বিপুল চাহিদা থাকলেও ব্যাহত হচ্ছে ঋণ কার্যক্রম। তিনি আরও বলেন, ঋণ বিতরণ কমে যাবার ফলে এনজিওগুলো থেকে সঞ্চয় উত্তোলন করে নেয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলো একদিকে ঋণ দিচ্ছে না, অন্যদিকে সুদ বাড়িয়েছে, নেয়া হচ্ছে বাড়তি সার্ভিস চার্জ।
সার্বিক সংকট তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের কাছে চিঠি দিচ্ছে (সিডিএফ)। খসড়া চিঠিতে বলা হয়, দেশে মোট ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৭০০। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীসংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। সারাদেশে এর সুফলভোগী তিন কোটি মানুষ। সদস্যদের মোট সঞ্চিত অর্থ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদন, জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় সাত শতাংশ।
বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা থেকে ঋণ দেয় এনজিওগুলো। সবচেয়ে বেশি অর্থ আসে সদস্যদের সঞ্চয় করা অর্থ থেকে, যা মোট অর্থায়ন উৎসের ৩৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত আয় থেকে আসে ৩৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) দেয় আট দশমিক ২২ ভাগ অর্থ। আর বাকি ১৯ দশমিক ১৬ ভাগ অর্থের যোগান দেয় ব্যাংকিংখাত।
চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে এনজিওগুলোকে ঋণ দেয়া বন্ধ রেখেছে বেসরকারিখাতের সব ব্যাংক। একই সঙ্গে আগের অনুমোদিত ঋণও ছাড় করা হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে ঋণ পরিশোধের পর ঋণ দেবার নিয়ম থাকলেও সেই উদ্যোগও নেই। কিন্তু নয় শতাংশ হারে যে সুদ ধার্য্য ছিল তা বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে বাড়তি সুদ। এতে বলা হয়, ব্যাংক থেকে ঋণ না ছাড়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সদস্যদের আর্থিক চক্র। মাঠ পর্যায়ে কিস্তি আদায় কমেছে, দলত্যাগ করছে সদস্যরা। অর্থাৎ ঋণ না পাওয়ায় তুলে নেয়া হচ্ছে সঞ্চয়। আবার ঋণ না পেয়ে অনেকে পরিশোধ করছে না কিস্তি।
চিঠিতে বলা হয়, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, শহরমুখী স্থানান্তর, গ্রামীণ ও দূরবর্তী অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হ্রাস পাবে।
এ অবস্থায় আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে আগামী কয়েক মাস প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্ট গ্রহণ না করে শুধু সার্ভিস চার্জ গ্রহণের সুবিধা দাবি করেছে সিডিএফ। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই খাতের ‘কটেজ’ কোটায় বাজার অনুযায়ী সার্ভিস চার্জ আরোপ করার সুপারিশ করা হয়। এক বছরের জন্য বিশেষায়িত ঋণ প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সুপারিশ করার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি তোলা হয়েছে। ওভারডিউ/ঘুর্ণায়মান প্রকৃতিতে প্রদানকৃত ব্যাংকঋণ পরিশোধের পর কমপক্ষে সমপরিমাণ ঋণ পুনঃবিতরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বিভিন্ন ব্যাংককে নির্দেশনা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়। টার্ম লোনের ক্ষেত্রে যতটুকু ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে কমপক্ষে ততটুকু পুনঃবিতরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বিভিন্ন ব্যাংককে নির্দেশনা দেবার দাবি তোলা হয়। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ঋণের শর্ত হিসেবে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের লিয়েনকৃত এফডিআরসমূহ ভাঙ্গানোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলা হয়।
এমআরএ থেকে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত ১০ শতাংশ এফডিআর এবং সংরক্ষিত তহবিল বাবদ সৃষ্ট নিট আয়ের ১০ শতাংশ এফডিআর ভাঙ্গানোর সুযোগ চায় সিডিএফ। তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক সুশাসনের অভাবই বিভিন্ন খাতকে আক্রান্ত করছে। এনজিওগুলো তাদের কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্নভাবে করতে না পারলে বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়বে। ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকটের কথা স্বীকার করে রূপালী ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ঋণপত্র দায় পরিশোধে চাপ বেড়েছে। তাই এনজিওগুলোর দাবি পূরণ করা কঠিন হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।