Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন সনের কমছে মুনাফা

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক ঃ গোল্ডেন সন কোম্পানির বিক্রি ও মুনাফা বাড়ার কথা থাকলেও দিন দিন তা কমছে। বাংলাদেশ ও তাইওয়ানের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন গৃহসামগ্রী উৎপাদনের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে এ কোম্পানি।
সা¤প্রতিক বছরগুলোয় কয়েকটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গঠন করে ব্যবসা স¤প্রসারণ করেছে তারা। এতে কোম্পানির বিক্রি ও মুনাফা বাড়ার কথা। তবে বাস্তবে ঘটছে উল্টো ঘটনা। তিন বছর ধরেই কোম্পানির বিক্রি ও আয় কমছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ চিত্র উঠে আসে।
গৃহস্থালি পণ্য, খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের ফ্যান উৎপাদন করে এর শতভাগই রফতানি করে গোল্ডেন সন। ২০১২ সাল পর্যন্ত গোল্ডেন সানের বিক্রি ও মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। তবে এর পর থেকে বিক্রি টানা কমছে। যদিও সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গঠন করে ব্যবসা স¤প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে একটি সাবসিডিয়ারির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলেও গোল্ডেন সানের আর্থিক প্রতিবেদনে এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়নি।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে গোল্ডেন সন ১৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করে। ২০১৩ সালে তা কমে ১৬৬ কোটি ও ২০১৪ সালে ১৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকায় নেমে আসে। পণ্য রফতানি কমে যাওয়ায় কোম্পানির নিট মুনাফাও কমছে। ২০১২ সালে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৪৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে যা ৩০ কোটি ৬২ লাখ টাকায় নেমে আসে।
২০১৫ সালেও পণ্য বিক্রি ও মুনাফা হ্রাসের ধারাবাহিকতা রয়েছে। প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) কোম্পানির বিক্রি ছিল ১০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২৭ কোটি টাকা। এ সময় কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৮ কোটি টাকা।
২০১২ সালে প্রেসার কুকারসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র উৎপাদন ও রফতানির জন্য তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান চি-হুং টেকনোলজির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গোল্ডেন সিএএসএ লিমিটেড নামে আলাদা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় গোল্ডেন সান। এতে গোল্ডেন সনের মলিকানা ৭০ শতাংশ ও চি-হুংয়ের মালিকানা ৩০ শতাংশ।
গোল্ডেন সিএএসএ লিমিটেড বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পর ২০১৩ সালে জিএসএল ডায়িং লিমিটেড নামে একটি ডায়িং কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয় গোল্ডেন সন। এ কোম্পানির মোট শেয়ারের ৯০ শতাংশের মালিকানা গোল্ডেন সানের, বাকি ১০ শতাংশের মালিকানা কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদের হাতে।
২০১৪ সালের ১ মার্চ আরো একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের ঘোষণা দেয় গোল্ডেন সন। শতভাগ খেলনা রফতানির লক্ষ্যে জার্মানির শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী স্টেফেন ক্রিসটেনশনের সঙ্গে যৌথভাবে জিএসএল এক্সপোর্ট লিমিটেড নামে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে ৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গোল্ডেন সান। জিএসএল এক্সপোর্ট লিমিটেড ২০১৪ সালের অক্টোবরেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। সে সময় গোল্ডেন সান জানিয়েছিল, প্রথম বছর জিএসএল এক্সপোর্ট লিমিটেড ৪০ কোটি টাকার পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। তবে ২০১৫ সালে গোল্ডেন সানের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এর প্রভাব দেখা যায়নি।
সর্বশেষ স্টিলের আসবাব উৎপাদনের জন্য গোল্ডেন ইনফিনিটি নামে আরো একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে গোল্ডেন সন। এ প্রতিষ্ঠানের কারখানা স্থাপন ও মেশিনারি ক্রয়ে ৯২ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়
নির্ধারণ করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের বিপরীতে এনআরবি ব্যাংক থেকে ৫৪ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণও নেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে গোল্ডেন সনের সুদ ব্যয় বাড়ছে। ২০১৫ সালের প্রথম নয় মাসে সুদ বাবদ কোম্পানির খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ কোটি টাকা। অবশ্য ২০১৫ সালে স্থায়ী আমানত থেকে সুদ বাবদ আয়ও বেড়েছে।
ধারাবাহিকভাবে বিক্রি ও মুনাফা কমার ব্যাপারে কোম্পানির বক্তব্য জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদের যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। আর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় কোম্পানি পরিচালনায় এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। বেলাল আহমেদ সরাসরি রফতানির বিষয়টি দেখভাল করতেন। তার অসুস্থতার কারণে মূলত কোম্পানির ব্যবসায়িক যোগাযোগে দুর্বলতা দেখা গেছে, যার কারণে রফতানি আদেশ কমছে। এরই প্রভাব পড়ছে কোম্পানির আয় ও মুনাফায়।
২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত গোল্ডেন সনের পরিশোধিত মূলধন ১৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ২০১২ সালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৪ টাকা ২৬ পয়সা, ২০১৪ সালে যা ২ টাকা ১ পয়সায় নেমে আসে। আর চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১২ পয়সায়। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে শেয়ারহোল্ডারদের সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন সনের কমছে মুনাফা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ