পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আনোয়ার হোসেন জসীম, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে : চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে খাদ্য সহায়তা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত এক কোটি পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা লোপাটে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। স্থানীয় সমাজসেবা অফিস, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
এই বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্ধকৃত ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার টেন্ডার আহবান, সিডিউল বিক্রি, জমা দান প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা সর্বোপরি সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে টেন্ডার আহবান করায় স্থানীয় ঠিকাদাররা ফুঁসে উঠেছেন।
তাছাড়া পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর ৬১(৪) ধারায় বলা হয়েছে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির অধীনে অভ্যন্তরিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ কার্য সম্পাদন ও সার্বিক ভৌত সেবার জন্য বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশের তারিখ হতে প্রদান ও দাখিলের সময় ১/২ কোটি টাকা পর্যন্ত ক্রয়ের ক্ষেত্রে নূনতম ১৪ দিন সময় পাবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অনুর্ধ ২১ দিন পর্যন্ত সময় পাবে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ১ কোটি টাকার উপরে টেন্ডার আহŸান করতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে সিপিটিইউ ( সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিট ) অফিসের ওয়েবসাইডে সিডিউল প্রকাশের নিয়ম থাকলেও সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সমাজসেবা কর্মকর্তা তা মানেননি। নিয়ম না মেনে তিনি কোটি টাকার উপরে টেন্ডার আহŸান করে এবং সিপিটিইউ অফিসের উপর দায়ভার চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে বাচাঁনোর চেষ্টা করছেন উক্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা।
অপরদিকে টেন্ডার প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতা এবং সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার কতিপয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজসে এবং মেয়াদ উর্ত্তীন টেন্ডারের সময়কে বৈধ করতে নানা এবং নিজের জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে উক্ত সমাজসেবা কর্মকর্তার দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে।
জেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার ৯৭টি চা বাগানের শ্রমিকদের মান উন্নয়নের জন্য সমাজসেবা মন্ত্রনালয়ের অধীন চা শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত সাড়ে ৫ কোটি টাকার অনুদান লোপাটে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র।
ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের অধীন শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সিডিউল বিতরন ও টেন্ডার প্রদান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারী দলের প্রভাব খাটিয়ে একটি বিশেষ মহল নিজেদের মাঝে কাজ বাটোয়ারা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিডিউল ক্রয় করলেও একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের কারনে টেন্ডার জমা দিতে পারেনি।
এছাড়াও জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলায় বরাদ্ধকৃত কাজের সিডিউল ক্রয় ও টেন্ডার জমা নিয়েও উঠেছে নানা অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের জুন মাসের মধ্যে সমাজসেবা মন্ত্রনালয়ের অধীন এই প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত টাকা উত্তোলন ও চা বাগানের শ্রমিকদের মান উন্নয়নের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও দ্রব্য সামগ্রী বিতরন করার কথা থাকলেও এখনও অনেক উপজেলায় সিডিউল বিক্রি ও টেন্ডার জমা নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানগুলোর মাঝে চলছে ধর কষাকষি।
মৌলভীবাজার সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার ৬টি উপজেলায় এই প্রকল্পের তালিকাভূক্ত সাড়ে ১১ হাজার চা শ্রমিকের জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকার নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও দ্রব্য সামগ্রী বিতরন জন্য ইতোপূর্বে জন প্রতি ৫ হাজার টাকা করে মোট সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্ধ এসেছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলে ২ হাজার ৭শ জন চা শ্রমিকের জন্য ১ কোটি ৩৫ লাখ, রাজনগরে ৩ হাজার ৫শ ৩০জন চা শ্রমিকের বিপরীতে ১ কোটি ৭৬ লাখ, জুড়িতে ২হাজার ৯০ জন চা শ্রমিকের বিপরীতে ১কোটি ৪লাখ ৫০ হাজার, কমলগঞ্জে ১৫শ ৭০ জন চা শ্রমিকের বিপরীতে ৭৮ লাখ ৫০ হাজার, কুলাউড়ায় ১৪শ ৫০ জন চা শ্রমিকের বিপরীতে ৭২ লাখ ৫০ হাজার এবং মৌলভীবাজার জেলা সদরে ২শ জন চা শ্রমিকের বিপরীতে ১০ লাখ বরাদ্ধ দেয়া হয়।
এদিকে বরাদ্দকৃত কাজের অর্থ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অফিস থেকে সিপিটিইউ (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিট) দফতরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিডিউল বিক্রি সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশের নিয়ম থাকলেও শ্রীমঙ্গল সমাজসেবা অফিস থেকে সিপিটিইউ অফিসে টেন্ডারের মূল্যমানপত্র না পাঠিয়ে এবং সেটি ওয়েবসাইডে প্রকাশের প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক হলেও সেটি না করে শুধুমাত্র একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কোটি টাকার টেন্ডার সিডিউল বিক্রি করেছেন ওই কর্মকর্তা।
অপরদিকে সবচেয়ে বেশি চা শ্রমিক অধুষিত উপজেলা শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার কাজ আদায়ে এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে নিতে একটি টেন্ডার সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে।
ইতোমধ্যে এ কাজের জন্য লোকদেখানো ২২টি সিডিউল বিক্রি হলেও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলার সমাজসেবা কমকর্তাকে ম্যানেজ করে তিনটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। আর একাজে সহায়তা করেন সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকতা। তিনি নিজ এখতিয়ার বলে মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র ও নির্দেশিকার নিয়ম কানুন না মেনে অবৈধ ভাবে এসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করায় সাধারন ঠিকাদাররা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে চলতি ১৫-১৬ অর্থ-বছরের জুনের মধ্যে এসব বরাদ্ধকৃত প্রকল্পের টাকা উত্তোলন এবং চা শ্রমিকদের মধ্যে বন্টনের বিধান থাকলেও অর্থ বছরের শেষ সময়ে এসে তড়িগড়ি করে সাড়ে ৫ কোটি টাকা লুটপাটের মহাযজ্ঞে নেমেছে প্রভাবশালী ওই টেন্ডার সিন্ডিকেট চক্র। ৬টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিডিউল ক্রয় বিক্রয় ও টেন্ডার জমাদান প্রক্রিয়া নিয়ে । নিয়মনীতি না মেনে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
তবে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার উপরে কাজের জন্য যে লাইসেন্স, ব্যাংক সলভেন্সি ওর্ডার, কর প্রদানের কাগজপত্র প্রদান করার কথা সেখানেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব কারনে মন্ত্রনালয়ের নিয়ম অনুয়ায়ী সিপিটিইউ এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুই সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয়সমাজসেবা অফিস থেকে মহাপরিচালকের দপ্তর পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া শেষ করে কাজের ওয়ার্ক ওর্ডার দেয়ার নিয়ম থাকলেও সময়সীমা অতিক্রম হতে চললেও আজ অবধি মূল্যায়নী সভা পর্যন্ত ডাকেননি উক্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা।
শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বরাদ্ধকৃত ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়ম এবং স্থানীয় সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: আশিকুজ্জামানের জালিয়াতির বিষয়ে সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের মহা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো.নূরুল কবীর জানান, সিপিটিইউ কার্যালয়ের ওয়েবসাইডে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার টেন্ডার বিক্রি করা হলে সেটা নিয়মবর্হিভূত। আর টেন্ডার প্রক্রিয়ার নিয়ম ও সময়সীমা পেরিয়ে গেলে সেটি পূনরায় টেন্ডার হবে। আইনের বাইরে কিছুই হবে না।
এছাড়া তিনি জানান, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বরাদ্ধকৃত টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের অনিয়ম ও ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।