Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীরা গ্রেফতার আতংকে

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

 

শামসুল ইসলাম : মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের অনেকেই অসহায় জীবন-যাপন করছে। মালয় ইমিগ্রেশন পুলিশী অভিযান অব্যাহত থাকায় বৈধ কর্মীদের মাঝেও গ্রেফতার আতংক বিরাজ করছে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অভিযান চালিয়ে শতাধিক বাংলাদেশীসহ তিন শতাধিক অভিবাসীকে আটক করেছে মালয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। কুয়ালালামপুরের বুকিত বিন্তাংয়ের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিক মার্কেট ল ইয়ট প্লাজা, সুঙ্গাই ওয়াং, টাইমস স্কয়ারে গত শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। কুয়ালালামপুর থেকে একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই মালয়েশিয়া জুড়ে চলছে অবৈধ অভিবাসীদের আটক অভিযান। এরই ধারাবাহিকতায় ইমিগ্রেশন পুলিশ রাজধানী কুয়ালালামপুরে বড় ধরনের এ অভিযান চালায়। এ অভিযানে বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ৩ শতাধিক নাগরিককে আটক করা হয়। আটক অভিবাসীদের মধ্যে অনেক নারী রয়েছেন। অভিযান শুরুর কিছু সময় আগে ল ইয়ট প্লাজা থেকে বের হয়ে আসা বাংলাদেশের চাঁদপুরের ইরতিজা সাংবাদিকদের জানান, পর্যটকদের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী কেনাকাটার সবচেয়ে পছন্দের মার্কেট ল ইয়ট প্লাজাতে অভিযান চালানো হতে পারে এ ছিল কল্পনাতীত। আটককৃতদের মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশী রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রবাস জীবনে এমন ভয়াবহ অভিযান আর কখনো দেখেননি ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে পুলিশ ল ইয়ট প্লাজায় এসে গেট বন্ধ করে দেয়। পরে ১ম তলা থেকে ৪তলা পর্যন্ত অভিযান চালায়। এ সময় কেনাকাটা করতে আসা বিদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আটকদের পুলিশের সাতটি ক্যারিয়ার ভ্যান পরিপূর্ণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।এদের মধ্যে অনেকেই বৈধ কর্মীও রয়েছে। কাগজপত্র যাচাই করে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। বহু কূটনৈতিক তৎপরতার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের জি টু জি প্রক্রিয়ায় শুধু প্লানটেশন খাতে সরকারী উদ্যোগে কর্মী যাওয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণের জন্য ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দু’দফায় সারা দেশ থেকে প্রায় ২২ লাখ কর্মীর নিবন্ধন করা হয়েছিল। কিন্তু জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কর্মী জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গেছে।
বহু কূটনৈতিক উদ্যোগের পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় মন্ত্রী পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত জিটুজি প্লাস সমঝোতা স্মারক (দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি) স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করছে। নতুন এ চুক্তি অনুযায়ী অনলাইনের মাধ্যমে দেশটির কনস্ট্রাকশন, সার্ভিস সেক্টর, প্লানটেশন খাত, কৃষি এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে শিগগিরই স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী যাওয়ার কথা ছিল। জিটুজি প্লাস সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও মালয়েশিয়ার পক্ষে হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রায়ত আনাক জিম স্বাক্ষর করেছিলেন। উভয় দেশের মধ্যে জিটুজি প্লাস চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পরে সফররত মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রায়ট আনক জিম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, জিটুজি প্লাস চুক্তির মাধ্যমে শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হবে। কিন্ত এক দিন পরেই ১৯ মার্চ বাংলাদেশসহ অন্যান্য সোর্স কান্ট্রি থেকে অভিবাসী কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে মালয়েশিয়া সরকার। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা এমন সময়ে এলো, যখন বাংলাদেশ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে নতুন করে কর্মী নেয়ার ব্যাপারে জিটুজি প্লাস সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসী কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত ঘোষণা করায় বাংলাদেশী কর্মী ও রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিকদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ দেশটিতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের আটক করে নিজ নিজ দেশে পাঠাবে এমন ঘোষণাও দেয়া হয় । গত ১৯ ফেব্রুয়ারী পূর্ব মালয়েশিয়ার কোতাকিনাবালু মোয়ারা তুয়াং আর্মি ক্যাম্পে সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো শ্রী ড. আহমদ জাহিদ হামিদী অভিবাসী কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ লাখ কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় মালয়েশিয়ায় এক শ্রেণীর তামিল ও স্থানীয়দের মধ্যে হৈ চৈ শুরু হয়েছিল।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীরা গ্রেফতার আতংকে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ