Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আইএসের বোমা ও অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত মসুল গবেষণাগার

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ইসলামিক স্টেট (আইএস) বোমা ও রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি এবং বোমা তৈরির জন্য নতুন নিয়োগকৃতদের প্রশিক্ষণ দিতে মসুলের উচ্চ-প্রযুক্তি সম্পন্ন গবেষণাগার ব্যবহার করছে। ২০১৪ সারে মসুল দখলের পর গবেষণাগারটি তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। এখানে থাকা ৪০ কেজি ইউরেনিয়ামও তাদের হাতে আসে। গবেষণাগারটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলার তেমন লক্ষ্যবস্তু হয়নি। খবর আর টি।
ইরাকের শীর্ষ বিস্ফোরক কর্মকর্তা জেনারেল হাতেম মাগসোসি দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, মসুল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বিশ্বে আইএসের (আইসিস,আইসিল বা দায়েশ সংক্ষিপ্ত নামেও পরিচিত) সেরা গবেষণা কেন্দ্র। প্রশিক্ষণার্থীরা রাক্কায় (সিরিয়া) যায় , তারপর তারা মসুলে গিয়ে গবেষণাগার ব্যবহার করে। আইএস ২০১৪ সালে গবেষণাগারটি দখল করার পর ইরাকি কর্মকর্তারা জাতিসংঘকে জানিয়েছিলেন যে ঐ কম্পাউন্ডে রাখা ৪০ কেজি ইউরেনিয়াম সম্ভবত জিহাদিদের হাতে পড়েছে।
সে সময় জাতিসংঘে ইরাকি রাষ্ট্রদূত লিখেছিলেন, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো ঐ স্থাপনার পরমাণু উপকরণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে যা এখন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তিনি লিখেন, এ ধরনের সামগ্রী গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরিতে ববহৃত হতে পারে।
এদিকে পারমাণবিক তদারকি প্রতিষ্ঠান আইএইএ বলে, এ সামগ্রী ছিল নি¤œমাত্রার এবং তা উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টিকারী নয়। এক কথায় তারা পারমাণবিক ঝুঁকির গুরুত্ব হ্রাস করে দেয়। সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, সন্ত্রাসীরা গবেষণা সরঞ্জামে সুসজ্জিত গবেষণাগারটিকে প্রচরিত বিস্ফোরক ও আত্মঘাতী ভেস্ট, রাসায়নিক অস্ত্র ও পারঅক্সাইড ভিত্তিক বোমা তৈরিতে ব্যবহার করছে।
মাগসোসি সংবাদপত্রকে বলেন, গবেষণাগারটি সুসজ্জিত। এটা আইএসের ইরাকে হামলা চালানোর ক্ষমতা নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, আইএসের বিদেশী প্রশিক্ষণার্থীরা এখান থেকে বোমা তৈরির পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করে স্ব স্ব দেশে ফিরে যায় যারা প্যারিস ও ব্রাসেলসে হামলায় ব্যবহৃত বোমার মত বিস্ফোরক তৈরিতে সক্ষম।
মসুল ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে জিহাদিদের হাতে পড়ে। ২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নাগার গবেষণা কেন্দ্রে কয়েক ডজন আইএস বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলি তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঘনিষ্ঠরা বলেন, রাসায়নিক বিস্ফোরক, অস্ত্র ও আত্মঘাতী বোমা তৈরি বিষয়ে অধ্যয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে বিভিন্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
ইরাকে বিমান হামলায় নিয়োজিত মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন গত দু’বছর ধরে আইএসের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ স্থাপনাটির কতটা ক্ষতি করতে পেরেছে তা স্পষ্ট নয়। ইরাকে মার্কিন সামরিক মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন বলেন, ১৯ মার্চ মসুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিমান হামলা হয়। তবে এটা প্রথম হামলা নাকি ধারাবাহিক হামলার অংশ সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
ওয়ারেন বলেন, আমরা জানি যে আইএস এসব ভবনের কয়েকটিকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে এবং আমরা সেখানে বোমাবর্ষণ করেছি। তিনি বলেন, ঐ স্থাপনায় জোটের হামলা অব্যাহত থাকবে।
মধ্যমার্চে ওয়ারেন বলেছিলেন যে মার্কিন সামরিক বাহিনী সেখানে বেশকিছু রসায়ন বিভাগ থাকার বিষয়টি এবং সেগুলোর কিছু ব্যবহৃত হওয়ার কথা জানে। তবে আইএস সেখানে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করছে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
শুক্রবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এলিজাবেথ ট্রুডো আর টি-র গেয়েন চিচাকিয়ানকে বলন, ইসলামিক স্টেট মসুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করছে বলে সংবাদ সম্পর্কে সচেতন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ হুমকি মোকাবেলায় মিত্রদের সাথে কাজ করা অব্যাহত রাখবে।
ট্রুডো বলেন, জোট বাহিনী মসুলের চারপাশে আইএস লক্ষ্যবস্তুসহ রাসায়নিক অস্ত্র স্থাপনার নির্ধারিত লক্ষ্যে হামলা চালাচ্ছে। আমরা এটা অব্যাহত রাখব। তিনি ইউরেনিয়াম সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।
ইরাকের দ্বিতীয় প্রধান নগরী মসুল হচ্ছে আইএসের কৌশলগত কেন্দ্র। ইরাক সরকার মসুল পুনর্দখলে গত সপ্তাহে অভিযান চালানোর কথা ঘোষণা করে। তবে তা সহজ কাজ হবে না বলে ধারণা।
পেন্টাগনের মতে, মসুল পুনর্দখলের জন্য ৮ থেেেক ১২ ব্রিগেড অর্থাৎ ২০ হাজারেরও বেশি সৈন্য প্রয়োজন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক মেরিন লেঃ জেনারেল ভিনসেন্ট স্টুয়ার্ট গত মাসে কংগ্রেসের শুনানিতে সাক্ষ্যদানকালে বলেন, মসুল পুনর্দখল করতে এখনো এক বছর লাগবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইএসের বোমা ও অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত মসুল গবেষণাগার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ