Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অটিজমে বাংলাদেশ মডেল কার্যকর হতে পারে : সায়মা

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) আলোকে অটিজম মোকাবিলায় বিশ্ব কৌশল গ্রহণে বাংলাদেশের বহুমুখী ও বহুপাক্ষিক মডেল অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অটিজম বিষয়ক পরামর্শক কমিটির চেয়ারপারসন এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ডব্লিউএইচও এক্সপার্ট এডভাইসরি প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। এই মডেলকে তিনি অনন্য বলে অভিহিত করেন। গত শুক্রবার বিকেলে জাতিসংঘে ‘অটিজম মোকাবিলা : এসডিজি’র আলোকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কৌশল’ শীর্ষক এক হাই-লেভেল ইভেন্টে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস)।
সায়মা ওয়াজেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী অটিজম ও অন্যান্য নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডারগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা, তাদের জীবনমানে দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সৃষ্টিশীল, সুলভ ও টেকসই পরিকল্পনা নিতে হবে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ গত সাত বছর ধরে বহুমুখী ও বহু পাক্ষিক মডেল বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যেই লক্ষ্য অর্জনে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৬ উদযাপন উপলক্ষে জাতিসংঘের দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, উজবেকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অটিজম স্পিকস যৌথভাবে ওই ইভেন্টের আয়োজন করে। ইভেন্টে প্রত্যেক বক্তাই দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার রক্ষায় অনন্য সাফল্য অর্জন করায় সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের প্রশংসা করেন।
অটিজমসহ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত বিভিন্ন কর্মকা-ের উল্লেখ করে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রণী দেশ। বাংলাদেশ এর প্রটোকলও স্বাক্ষর করেছে।
স্কুল মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ হোসেন আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিবন্ধীসহ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ১৯৯৯ সালে জাতীয় ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। ২০০১ সালে তাদের অধিকার রক্ষায় প্রথম আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন যুগোপযোগী করা হয়েছে। সেই বছরই অটিস্টিকসহ অন্যান্য মানসিক প্রতিবন্ধীর প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যা নিশ্চিতে বাংলাদেশে জাতীয় নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার সংরক্ষণ ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সকালে জাতিসংঘের উদ্বোধনী অধিবেশনে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অংশ নেন। এই অধিবেশনে বৈষম্য হ্রাস (এমডিজি ১০) বিষয়ক এক প্যানেল আলোচনায় সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, অটিস্টিকদের অধিকার রক্ষা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য আর্থসামাজিক কর্মকা-ে বাংলাদেশের ১৪টি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, এসব মন্ত্রণালয়ের সামাজিক সেবাকেন্দ্র, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক, স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো অটিস্টিক ও তাদের পরিবারদের সেবা দিচ্ছে। তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য এসব প্রতিষ্ঠান তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ঢেলে সাজিয়েছে। এর ফলে এই কর্মযজ্ঞ এখন আর কেবল অস্টিটিক পরিবার ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নীতি-নির্ধারণ, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা সবাই এর অংশীদার হয়েছেন। নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন। অটিজম মোকাবিলায় বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, অটিস্টিকদের লেখাপড়ার জন্য অটিজম একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২০১৬-২০২১ মেয়াদী সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অটিজমকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের সৃষ্টিশীল কর্মের বিকাশ নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডে অটিস্টিক শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম ব্যবহার করেন। তাদেরকে উন্নয়নের মূলধারায় আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘের এই অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে একজন আন্তর্জাতিক অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে অটিজম সচেতনতা উদ্বুদ্ধকরণ কর্মকা- শুরু করেন।
জাতিসংঘে গতকাল ব্যস্ত সময় কাটান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে অংশ নেওয়া ছাড়াও তিনি দুপুরে অটিজম নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিসের প্রতিনিধি রেবেকা বাভিনজার ও কেলি লারসেনের সঙ্গে আলোচনাকালে বাংলাদেশের অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর সার্বিক সেবাদান নিশ্চিতে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে সহযোগিতা করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু মোকাবিলা ও তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করছে। সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুদের একটি বড় অংশই অটিস্টিক। প্রতিনিধিরা এই লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সহায়তা করার আশ্বাস দেন। পরে বিভিন্ন দেশের কয়েকজন অভিভাবক তাদের অটিস্টিক আক্রান্ত সন্তানদের প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার অভিজ্ঞতা জানান। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের মডেল অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে তাঁরা আশা করেন।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এবং কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি আলিয়া আল-থানির সঞ্চালনায় এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিসেস বান সুন-টেক, অটিজম স্পিকসের সুজানা রাইটস, ভারত, কোরিয়া, উজবেকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি ও ইকোসকের প্রতিনিধি বক্তব্য দেন।
মূল প্রবন্ধের ওপর প্যানেল আলোচনায় ডব্লিউএইচও’র প্রতিনিধি বারনার ওবেরমেয়ের, জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. ডেভিড নাবাবরো, ফিলিপাইনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি ড. পলিন এবং উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মরিন ডারকিন অংশ নেন। প্রত্যেক বক্তাই দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার রক্ষায় অনন্য সাফল্য অর্জন করায় সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অটিজমে বাংলাদেশ মডেল কার্যকর হতে পারে : সায়মা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ