পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধোঁয়াশা! প্রকৃত চিত্র না জানায় সাধারণ মানুষ রয়েছেন এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে। কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এই ধোঁয়াশা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বেগম জিয়ার কোটি কোটি ভক্ত অনুরাগী। বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হচ্ছে তাঁর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে সরকার লুকোচুরি খেলছে। দলটি সুচিকিৎসার জন্য বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে। বিএনপি মহাসচিবের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে প্রয়োজন অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। ডাক্তার পরামর্শ দিলে প্রয়োজনে তাঁকে বিদেশে পাঠানো হবে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের রহস্যজনক ভূমিকায় জনগণ শঙ্কিত এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিএনপির একাধিক নেতা।
৭২ বছর বয়স্কা কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা তথা স্বাস্থ্য নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও মাঠের বিরোধী দল খ্যাত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে তেমন ভিন্নতা না থাকলেও বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে মানুষের মাঝে ধোঁয়াশা কাটছে না। সারাদেশের বিএনপির নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ চার দেয়ালের ভিতরে বন্দি বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য এবং অসুস্থতা নিয়ে ধোঁয়াশার বাতাবরণে থাকতে চায় না। চায় প্রকৃত খবর জানতে এবং দেখতে যে বেগম জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বেগম জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে দুই দলের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন হাজার হাজার মানুষ। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক পোস্ট, লাইক, শেয়ার, মন্তব্য।
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে বন্দি ‘বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ’ এ খবর প্রথম মিডিয়ায় আসে ২৮ মার্চ। ওই দিন দুদকের দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতির মামলার শুনানীতে আদালতে বেগম খালেদা জিয়াকে উপস্থিত করার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতা জনিত কারণে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়নি। দুদকের আইনজীবী প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে জানান, অসুস্থতার কারণে বেগম জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়নি। খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির না করা প্রসঙ্গে তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, কাস্টডি ওয়ারেন্টে লেখা ছিল তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ। কিন্তু কী অসুস্থতায় ভুগছেন তা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। পরের দিন ২৯ মার্চ কারাবন্দী নেত্রীকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। দুপুর পর্যন্ত খবর ছিল মির্জা ফখরুল কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু বিকেলে জানানো হয় বেগম জিয়া অসুস্থ সে কারণে মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকার স্থগিত করা হয়েছে। মূলত তখন (২৯ মার্চ) থেকেই বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শুরু হয়। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া রুপসা থেকে পাথুরিয়া সারাদেশের সাধারণ মানুষ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, বেগম জিয়ার আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ফোন করে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং বেগম জিয়া কেমন আছে জানতে চান। তারা নিজেদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথাও জানান।
‘বিএনপি’ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল হলেও দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন রাজনীতিক নন; তিনি একটি আদর্শ-দর্শন একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি হাসলে আলোকিত হয় হাজারো মুখ; মুখ ফেরালে লাখো মানুষের জীবনে নামে গভীর অন্ধকার। কর্মময় জীবনে তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বিমূর্ত প্রতীক। গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে ৯ বছর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশবাসীর কাছে তিনি ‘আপোষহীন নেত্রী’র খেতাব অর্জন করেছেন। জনগণের ভোটে তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার কোটি কোটি অনুসারী সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। মা, মাটি ও মানুষের এই নেত্রী দেশের নারীদের কাছে ‘আইডল’। দেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী তরুণ-তরুণীরা তাঁকে নিয়ে আগামীর স্বপ্ন বোনেন। নতুন প্রজন্ম দেখেন জেগে ওঠার স্বপ্ন। রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে রয়েছে বেগম জিয়ার অনুসারী। শিশু, যুবা, বয়স্ক, বৃদ্ধা সব স্তরের মানুষ খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল; তাঁকে চেনেন, জানেন, মানেন। তিনি (বেগম জিয়া) কি রোগে ভুগছেন তা জানতে না পারলেও প্রিয় নেত্রীর রোগমুক্তির জন্য মানত করছেন, আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির প্রার্থনা করছেন, রোযাও রাখছেন অনেকেই। যার প্রতি দেশের এতো মানুষের আস্থা এবং ভালবাসা সেই নেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে ধোঁয়াশায় থাকতে চায় না মানুষ। মানুষ জানতে চায় প্রকৃত অর্থেই বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন? অবশ্য গতকাল শুক্রবার ডিআইজি প্রিজন তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান বেগম জিয়া কারাগারে ভাল আছেন। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন ভাল। অন্য কোনো সমস্যা নেই। তবে আগে সামান্য জ্বর ছিল।
বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার তথ্য জানিয়ে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত বিএনপি। তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। সরকার তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে লুকোচুরি করছে। দেশনেত্রীর চিকিৎসার জন্য আমাদের স্পষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। তাঁর (খালেদা জিয়া) ব্যক্তিগত চিকিৎসক যারা রয়েছেন, তাদের দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে। খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে তিনিই ঠিক করবেন দেশে নাকি বিদেশে চিকিৎসা নিবেন। বিএনপির এই নেতার অভিযোগ, খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে রেখে সরকার মানসিক নির্যাতন করছে। তাকে যে পরিবেশে রাখা হয়েছে, তাতে স্বাস্থ্যের আরও অবনতির আশঙ্কা করছে বিএনপি। তিনি (খালোদা জিয়া) আগে যে চিকিৎসাগুলো নিয়েছেন, তা বিদেশে নিয়েছেন। তার ফলোআপ করা জরুরি। খালেদা জিয়ার খাবারও যথাযথ পরীক্ষা করে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। সরকার খালেদা জিয়াকে ‘অপসারণের হীন অপচেষ্টা’ করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ জন্য তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা বরাবরই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। মির্জা ফখরুলের এই অভিযোগের পর পরই সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রয়োজন অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিলে দরকার হলে তাঁকে বিদেশে পাঠানো হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া অসুস্থ, এ কথা বিএনপি মহাসচিব জোর গলায় বলছেন। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর যে ধরণের অসুস্থতা সে অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। সরকার অমানবিক নয়। এ দেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। নিয়ম অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কতটা গুরুতর, সে বিষয়ে চিকিৎসকদের পরমর্শ নিয়েই সব হবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার এটা কি টার্মিনাল ডিজিজ না নরমাল ডিজিজ সেটা দেখতে হবে। টার্মিনাল ডিজিজ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের চিকিৎসকরা যদি বোর্ড বসিয়ে বলে বিদেশে পাঠাতে হবে, তাহলে পাঠাব। সেই পরামর্শ দিলে অবশ্যই পাঠানো হবে। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের ভূমিকায় জনগণ শঙ্কিত। সরকার বলছে খালেদা জিয়া অসুস্থ। কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। আমাদেরকে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। দেখা করতে চাইলে সেটাও দিচ্ছে না। আমরা তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কে জানলামই না এদিকে ওবায়দুল কাদের বলে ফেললেন বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সরকারের এ ধরণের বক্তব্যে জনগণের মনে প্রশ্ন জেগেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অসুস্থ বেগম জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। কারামুক্তির পর তিনি (বেগম জিয়া) নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসা দেশে না বিদেশে করাবেন। সবার আগে বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।