পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে জটিলতা কেটে যাচ্ছে। স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের পথ হয়েছে সুগম। চীন আগের ‘ধীরে চলো’ নীতি থেকে সরে এসেছে। চীন সরকারের সবুজ সঙ্কেতের ফলে এই মেগাপ্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড় করছে সিংহভাগ তহবিল যোগানদাতা চায়না এক্সিম ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও বিশেষজ্ঞরা এখন আশাবাদী আগামী সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ টানেল নির্মাণের জন্য মূল খনন কাজ শুরু করা যাবে। বর্তমানে টানেলের বহির্মুখী অবকাঠামো তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। টানেল প্রকল্প ও সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, চায়না এক্সিম ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা ঋণের অর্থ ছাড় করেছে। শিগগিরই আরও প্রায় ৭শ’ থেকে ৯শ’ কোটি টাকার প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গতবছর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে হাত দিতে না দিতেই চায়না এক্সিম ব্যাংক টানেল প্রকল্প ও সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে একেক সময় একেক ধরনের ডকুমেন্ট চেয়ে বসে। এতে সময়ক্ষেপণ ও জটিলতার সৃষ্টি হয়। কাগজপত্রে কোনো অসঙ্গতির কথাও প্রতিষ্ঠানটি জানায়নি। অবশ্য এক্সিম ব্যাংক এখন যথেষ্ট নমনীয় হয়েছে।
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে চীন ২ শতাংশ হারে সুদের শর্তে ২০ বছর মেয়াদে ঋণ প্রদানের কথা ৪ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। অবশিষ্ট অর্থ যোগানো হবে সরকারি প্রকল্প ব্যয় বাবদ। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে ১ হাজার ৯৮১ কোটি ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এরমধ্যে ১ হাজার ২৪ কোটি টাকা চীনের ঋণ প্রাপ্তি ধরা হয়। অথচ কোন চীনা ঋণ ছাড় হয়নি। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপিতে ৩ হাজার ১১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প ও সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, টানেলের জন্য অবকাঠামো তৈরির এখন কাজ সঠিক পথেই এগুচ্ছে। চায়না এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে চীনের প্রতিশ্রæত অর্থ ছাড়করণ হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে এমনটি আশ্বস্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরমধ্যে ছাড়কৃত অর্থ বাবদ টানেল প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলের বাস্তব নির্মাণ কাজের জন্য চীনে বড়সড় টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) তৈরি করা হচ্ছে। কর্ণফুলী নদী খরস্রোতা ও মোহনার ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিচেনা করেই লাগসই টিবিএম তৈরি হচ্ছে। আগামী মে মাসের মধ্যে টিবিএম দেশে পৌঁছে যেতে পারে। এরপরই প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজের প্রস্তুতি নেয়া হবে। পরের ধাপে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের লক্ষ্যে খনন কার্যক্রম শুরু করা হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে টানেলের নির্মাণ কাজ হতে পারে দৃশ্যমান। চীনে বর্তমানে টিবিএম ইকুইপমেন্টস তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দেশে এ ধরনের ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম আসছে এবারই প্রথম।
এদিকে কর্ণফুলী টানেল মেগাপ্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প বা সংলগ্ন অবকঠামো এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও যানবাহন সংগ্রহ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থানসহ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। ২০১৭ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। চীনের সাংহাই মেগাসিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি- টু টাউন’ হিসেবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে কর্ণফুলীর উভয়তীরে পরিকল্পিত উন্নয়ন, নগরায়ন, সমুদ্রবন্দর সুবিধার স¤প্রসারণ, দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আধুনিক পর্যটনের বিকাশ এবং বৈপ্লবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, পরবর্তী পর্যায়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং প্রদেশ পর্যন্ত সরাসরি মহাসড়কে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্য সামনে রেখে টানেল মেগাপ্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিফলক উদ্বোধন করেন। এর অন্যতম হচ্ছে ৩ হাজার ৪শ’ মিটার (প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার) দীর্ঘ কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প। এরজন্য দুই দেশ ঋণ চুক্তিবদ্ধ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের মোহনার উজানভাগে কর্ণফুলী নদীর প্রকৃতি অনুযায়ী (মরফলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য) টানেল নির্মাণের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। কর্ণফুলী টানেলের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষ হয় ২০১৩ সালে। এই প্রেক্ষাপটে ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ’ শীর্ষক মেগাপ্রকল্প সরকার গ্রহণ করে। টানেলের সংযোগ বা বিস্তার ও প্রবেশমুখ শুরু হবে নগরীর প্রান্তে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমি এবং দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা বহির্গমন পথ সিইউএফএল জেটি ঘাট বরাবর। মোট ৯ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭১ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এ প্রকল্পে টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৪ শ’ মিটার (উভয়পাশে ৪৭৭ মিটার ওপেনকাট)। এর অবস্থান হবে কর্ণফুলীর তলদেশে ১২ থেকে ৩৬ মিটার পর্যন্ত গভীরে। চার লেনের এ টানেল হবে দুই টিউব বিশিষ্ট। টানেল নির্মিত হবে ‘শিল্ড ড্রাইভেন’ পদ্ধতিতে। ২০১৪ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে এ ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ২০১৫ সালের ৩০ জুন নির্মাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি’র সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়।
প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজে চীন থেকে বিভিন্ন ধরনের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে একাধিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আরও কয়েকটি জাহাজ আসার কথা। টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ইকুইপমেন্টস নিয়ে বড় আকারের জাহাজ মে মাসে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। নদীর উভয় প্রান্তে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে শেষ পর্যায়ে। জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, নৌবাহিনী, পিডিবি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভাগসমূহের সাথে ভূমি অধিগ্রহণসহ সামগ্রিক কার্যক্রমের সমন্বয় করছে সেতু বিভাগ। টানেল প্রকল্পস্থলে পশ্চিম প্রান্তে মহানগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজার ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩৩ দশমিক ৪৮৫২ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণের অর্থ জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। অন্যান্য সংস্থা ও বিভাগের ৩৬ দশমিক ৪১৫৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ ফাইল ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপরদিকে প্রকল্পের পূর্ব প্রান্তে টানেল ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য ৯০ দশমিক ২৭৩ একর এবং পুনর্বাসনের জন্য ১৯ দশমিক ৭৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ জেলা প্রশাসনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়া নির্মাণের জন্য ৮৫ দশমিক ৮৯০১ একর ভূমি দীর্ঘমেয়াদে বন্দোবস্ত পাওয়া গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে তা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আনোয়ারা এবং পতেঙ্গা-বন্দর প্রান্তে ১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্থায়ী সংযোগ ও সাব-স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্প সাইটে একটি ৩৩ কেভি ও ২টি ১১ কেভি বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালন লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের আনোয়ারা প্রান্তে সাইট ক্যাম্প ও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এবং ৩৮ দশমিক ২০৭ একর ভূমির মাটি ভরাট কাজ চলছে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ মেগাপ্রকল্পে চীনা অর্থ ছাড়করণের ফলে সামগ্রিক বাস্তবায়ন কাজে গতি এসেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন। সেতু বিভাগ ও টানেল প্রকল্প কর্মকর্তারা ঘন ঘন প্রকল্পস্থল পরিদর্শন করছেন। সবিকছু মিলে প্রকল্পের কাজে গতি আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।