পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
০ বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে টেলিযোগাযোগে
০ তিন মাস পর বাণিজ্যিক কার্যক্রম
০ যুক্ত হতে পারবে যে কোন প্রতিষ্ঠান
ফারুক হোসাইন : দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ হতে পারে আগামী ২৪ এপ্রিল। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুইচ চেপে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় কেপ ক্যানাভেরালে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করবেন। এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট সদস্য দেশের তালিকায় ৫৭তম দেশ হিসেবে নাম লেখাবে বাংলাদেশ। স্যাটেলাইট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের বরাত দিয়ে স্যাটেলাইট ও প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম আমেরিকা স্পেস এ তথ্য জানিয়েছে। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ হলে দেশের তথ্য-প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশ নিরবিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করতে পারবে, তেমনি সম্প্রচার সেবা, টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিটিএইচ সেবা প্রদান করতে পারবে। এছাড়া ট্রান্সপন্ডার লীজের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। স্যাটেলাইট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস টুইট বার্তায় বলছে, ২৮ মার্চ (গতকাল) কানের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস প্ল্যান্ট ত্যাগ করবে স্যাটেলাইটটি। পরে স্যাটেলাইট বহনকারী কার্গো বিমান অ্যানতোনোভ নাইস বিমানবন্দর থেকে আজ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। ওই দিন ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে ৮ টার মধ্যে বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করবে। ২৯ মার্চ বোস্টনে যাত্রাবিরতির পর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১’ বহনকারী কার্গোবিমানটি ফ্লোরিডার কেপ কার্নিভালে পৌঁছাবে ৩০ মার্চ। স্পেস এক্সের লঞ্চ ফ্যাসিলিটিতে লঞ্চ ভেহিকল ফ্যালকন ৯ এর ইন্ট্রিগ্রেশনসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শুরু হবে কেপ কার্নিভালেই। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটি মহাকাশের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করা হবে। টুইটে আমেরিকা স্পেস বলছে, উৎপাদন ও লঞ্চার মেনিফেস্ট বিলম্বের কারণে আগামী ২৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখের ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে স্পেসএক্স।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পর কিছুদিন পরীক্ষামূলকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিন মাস পর বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের। স্যাটেলাইটে থাকা ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি বাংলাদেশে নিজেদের ব্যাবহারের জন্য রাখা হবে। বাকী ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া কিংবা বিক্রি করা হবে বিদেশের কাছে। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, দেশের জন্য রাখা ২০টি ট্রান্সপন্ডার থেকেই দেশের টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) পরিচালনাকরী প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া নিতে পারবেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আবেদনও করেছে। তবে উৎক্ষেপণের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের এক সপ্তাহ আগে থেকে কাউন্টডাউন শুরু করে সারাদেশে প্রচারণা চালানো হবে। এজন্য বিশেষ একটি ডকুমেন্টরি তৈরি করা হচ্ছে। সরাদেশের বড় শহরগুলোতে জায়ান্ট স্ক্রিনে কাউন্ট ডাউন্ট করা হবে। এমনকি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনটিও সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ স্থাপনের লক্ষ্যে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল ¯øটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনসকে ১৫ বছরের জন্য দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার দিতে হবে। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন, রেডিওসহ অন্যান্য যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে ১৪ মিলিয়ন ডলার গুণতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু করতে পারলে দেশে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয়ই হবে না, স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ আয় করা যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে এ স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন হবে। এই ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য ২০টি রাখা হবে। স্যাটেলাইট ডিজাইন লাইফ ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে এই ২০টি ট্রান্সপন্ডার যথেষ্ট হবে বলে মনে করছে ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রণালয়। আর বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় অবশিষ্ট ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিক্রি বা ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বিশ্বে ৫৬টি দেশের নিজস্ব উপগ্রহ রয়েছে। আর দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ভারত (১৯৭৫), পাকিস্তান (১৯৯০) ও শ্রীলঙ্কার (২০১২) নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ১১ নভেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে থালিসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি। বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ১৯৭৫ সালের জুন মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে যে যাত্রা সূচনা করেছিলেন এবং স্বপ্ন দেখেছিলেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে আজ তা বাস্তবায়ন হতে চলেছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের নির্দিষ্ট তারিখ আগে থেকে বলা সম্ভব হয় না। এপ্রিলের শেষের দিকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। আর ঋণ হিসেবে এইচএসবিসি ব্যাংক বাকি ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা দিচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর প্রকল্প পরিচালক মোঃ মেসবাহ উজ্জামান জানান, প্রাথমিকভাবে ২৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের চূড়ান্ত সময় সূচি জানানো হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।