পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন ও হাসান সোহেল : রাজনৈতিক নয়, পেশাজীবীদের আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে প্রশাসন, রাজপথ থেকে শিক্ষাঙ্গন। প্রতিনিয়তই বাড়ছে দাবির মিছিল। সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভের জন্য সবাই বেছে নিচ্ছে রাজপথ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে বিরাজ করছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এরই মধ্যে নতুন করে ৮ম জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে আন্দোলনে টালমাটাল দেশ। বৈষম্য ও পদমর্যাদা অবনমন এবং তা নিরসনের দাবিতে ক্লাস ছেড়ে রাজপথে নেমেছে শিক্ষকরা। চিকিৎসক-নার্সরা সেবা না দিয়ে রাজপথে, ব্যাংক কর্মকর্তারা ব্যাংকে না থেকে রাজপথে, গার্মেন্টস শ্রমিকরা কাজ বাদ দিয়ে অধিকার আদায়ে রাজপথে দিন পার করছেন। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষরা রাজপথে থাকায় যানজটের কারণে কাজকর্মে ছন্দপতন ঘটছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে সেশনজট, রোগীরা হাসপাতালে এবং গ্রাহকরা ব্যাংকে সেবা পাচ্ছে না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়ছে ভোগান্তি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন : নতুন বেতন কাঠামোতে বেতন বাড়লেও অসন্তোষ রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে। বৈষম্য ও মর্যাদার অবনমনের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে ইতোমধ্যে সভা, সমাবেশ, কর্মবিরতি, ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন চালিয়েছেন তারা। শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে শিক্ষক প্রতিনিধিরা সাক্ষাৎ করলে প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারপরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এখনো অসন্তোষ বিরাজ করছে। বৈষম্য নিরসন ও পদমর্যাদার বিষয়টি নিরসন না হওয়া পর্যন্ত তা দূর হচ্ছে না বলে মনেও করছেন শিক্ষকরা।
ডিপ্লোমা বেকার নার্সদের আন্দোলন : নার্স নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিতে ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস এসোসিয়েশন গত মঙ্গলবার থেকে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে আসছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় বেকার নার্সরা এক কাপড়ে রোদে পুড়ছেন, বৃষ্টিতে ভিজছেন, শীতের রাতে ঠা-ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। নাওয়া-খাওয়া ভুলে আন্দোলনরত শত শত নার্সের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করে তুলছেন রাজপথ। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের দাবি বাস্তবায়িত না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা। আজ রোববার সরকারি-বেসরকারি সব নার্স কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ হাজার নার্স নিয়োগ ও সকল বিএসসি নার্সদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার দুই দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করছে বাংলাদেশ বেসিক গ্রাজুয়েট নার্সেস সোসাইটি (বিবিজিএনএস)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের আন্দোলন : নতুন বেতন স্কেলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবনমনের প্রতিবাদে প্রধান ফটক অবরোধসহ কালো ব্যাজ, কলম বিরতি, ১ ঘণ্টার কর্মবিরতির আন্দোলন গভর্নরের আশ্বাসে স্থগিত রয়েছে। আজ ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় দাবির বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। সভায় দাবির বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না আসলে নতুন কর্মসূচিতে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। এ কর্মসূচি কঠোর থেকে কঠোর থেকে কঠোরতর হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংগঠন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ ইনকিলাবকে বলেন, আজ বোর্ড সভায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবনমনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো তুলে ধরবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর। সভার সিদ্ধান্ত দেখে কাউন্সিল নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেব।
সূত্রমতে, আগের সব বেতন স্কেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা একই গ্রেডভুক্ত অর্থাৎ অষ্টম গ্রেডে ছিলেন। কিন্তু নতুন বেতন স্কেলে সহকারী পরিচালক পদ এক ধাপ নিচে নামিয়ে নবম গ্রেডে রাখা হয়েছে। সরকারি কলেজ শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি : অষ্টম বেতন কামাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে এবং তা নিরসনের দাবিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি (সরকারি কলেজের শিক্ষক)। এর আগেও সরকারি কলেজের শিক্ষকেরা দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন। গত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দাবি মেনে নেওয়ার আল্টিমেটামও দেয়। এই সময়ে দাবি মেনে না নেয়ায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষা সমিতি। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২৬, ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন ও নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান গ্রহণ করবেন। ৬ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ক্লাস বর্জন, ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জনের সাথে সাথে কমপ্লিট শাট ডাউন করা হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি প্রফেসর নাসরীন বেগম ইনকিলাবকে বলেন, আমরা মাসব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। প্রথম দফায় তিনদিন কর্মবিরতি দিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাবি মেনে নেয়ার সময় দিয়েছি। তা না হলে দুই দফা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যেও দাবি মেনে না নিলে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সকল প্রতিষ্ঠান কমপ্লিট শাট ডাউন করা হবে এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাগণ গণছুটিতে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। কিন্তু তা যদি না হয়, তাহলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ থাকবে না।
মাধ্যমিক পর্যায়ে আন্দোলন : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ শিক্ষকদের সাথে সাথে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা। প্রথমে পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও পরবর্তী সময়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অষ্টম বেতন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শর্তহীনভাবে বেতন কাঠামো কার্যকর করার দাবি জানিয়ে আসছে। তা না হলে স্কুল তালাবদ্ধ করে ধর্মঘট পালনের হুমকি দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। সংগঠনটির নেতারা বলেন, শিক্ষকরা সারা দিন পড়াশোনা করিয়ে জাতি গঠনের কাজ করছেন। ‘দান-সহায়তা’ দেয়ার ঘোষণার মাধ্যমে তাদের অপমান করা হয়েছে। বেতন স্কেল কার্যকরসহ শিক্ষানীতির বাস্তবায়নের দাবিতে ইতোমধ্যে কালোব্যাজ ধারণ, কর্মবিরতি, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেছেন তারা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুহম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমাদের দাবি না মানা হলে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার পর আগামী মার্চ মাস থেকে স্কুল-কলেজে তালা ঝুলিয়ে অবিরাম ধর্মঘট পালন করা হবে। এসএসসি পরীক্ষার পূর্বেই নতুন স্কেলে বেতন প্রদানের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক কমর্চারী ঐক্যজোট। সংগঠনটির আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে আন্দোলনের রূপরেখাও প্রণয়ন করা হয়। নতুন বেতন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপনে বেতনকে দান-সহায়তা উল্লেখ করা নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং দান-সহায়তা কথাটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তাদের সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরাও দাবি জানিয়েছেন, নতুন পে-স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়ায় ৪০ হাজার শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারাও যে কোনো সময় আন্দোলনে নামবেন। এছাড়া প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসকসহ ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তারাও আন্দোলনে রয়েছেন।
ফি বৃদ্ধি নিয়ে অভিভাবকদের আন্দোলন : দেশব্যাপী সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলোয় টিউশন ফি, সেশন চার্জ ও ভর্তি ফি আদায় নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো ফি বৃদ্ধি করে আদায় করছে। বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করা ও আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। বর্ধিত ফি প্রত্যাহার না করলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিসহ কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অভিভাবক সংগঠনগুলো। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। তারপরও অনেক নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। আর যে দু-একটি প্রতিষ্ঠান বর্ধিত ফি আদায় বন্ধ রেখেছে তারা ইতোমধ্যে আদায় করা ফি ফেরত দেয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে এখন বর্ধিত ফি আদায় বন্ধের সাথে সাথে ভর্তি কার্যক্রমও বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন এখনো ভর্তি হতে না হওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অভিভাবকদের অভিযোগ, এ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। জানা গেছে, ফি আদায়ের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে নতুন পে-স্কেলকে। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, নতুন পে-স্কেল প্রদানের কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়াতে হচ্ছে। আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়ের একমাত্র উৎস শিক্ষার্থীদের বেতন ও ফি। তা থেকেই বাড়তি খরচ বহন করতে হবে। বাদ পড়ছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবার ভর্তিতে শিক্ষার্থীপ্রতি এক হাজার টাকা এবং কালাচাঁদপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই হাজার টাকা করে নিচ্ছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন।
চিকিৎসকদের আন্দোলন : চিকিৎসকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহালের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে রাজপথে চিকিৎসকরা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত রাখলেও দাবি আদায় না হলে নতুন করে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। এর আগে কয়েক দিনের টানা আন্দোলনে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছিল। চিকিৎসকরা আন্দোলনের সময়ে হাসপাতালে রোগী দেখাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
চিকিৎসকদের মতে, নতুন পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বন্ধ করায় একই ব্যাচ ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেতন বৈষম্য বাড়বে এবং ক্ষেত্র বিশেষে অবনমন হবে। তাই সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল একটি চরম নৈরাজ্যমূলক সিদ্ধান্ত। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের বেতন বিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অপমানজনক বলে উল্লেখ করেন তারা।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ : চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছে। এতে তারা সাধারণ ছাত্রদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছর করার দাবি জানান। গতকালও এই দাবি নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে তারা। একই সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানসহ অন্যান্য কোটার বিষয়ে আনুপাতিকহারে বয়স বাড়নোর দাবি জানান।
মেট্রোরেলের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনের দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পক্ষে-বিপক্ষে মানবন্ধন, মিছিল ও সমাবেশ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে গতকাল শনিবারও পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থী। এর আগে উভয়পক্ষ একই দিন নিজেদের দাবির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে স্মারকলিপি প্রদান করে।
মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বর্তমানে বিভিন্ন হলে ও বিভাগে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চালাচ্ছে। অন্য পক্ষকে তেমন কোনো আন্দোলনে দেখা যায় না। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে, রুট পরিবর্তনের দাবিতে কোনো কর্মসূচি পালন করলেই ছাত্রলীগ হলের জুনিয়র ছাত্রদের দিয়ে জোর করে পাল্টা সমাবেশ করতে বাধ্য করে।
রুট পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকেই ঢাকা শহরে মেট্রোরেলের পক্ষেই সবাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বুক চিরে এই রেল যাক এটা কেউ চান না। এটি বিকল্প রুট দিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ক্যাম্পাস দিয়ে মেট্রোরেল গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নষ্ট হবে। ঝুঁকিতে পড়বে চারুকলা, রাজু ভাস্কর্য, জাতীয় তিন নেতার মাজার, ঢাকা গেট, দোয়েল চত্বরের মতো স্থাপনাগুলো। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এবং বিজ্ঞান অনুষদের ল্যাবের কাজে বিঘœ সৃষ্টি হবে।
মেট্রোরেলের রুটের পক্ষের শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন। রাজধানীর যানজটের কারণে তারা ক্যাম্পাসে সময়মতো পৌঁছতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষার হলেও সময়মতো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ক্যাম্পাস দিয়ে মেট্রোরেল হলে বাইরের শিক্ষার্থীদের এ সমস্যা আর থাকবে না।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে আন্দোলন : রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্তের শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় প্রতিষ্ঠানটি এ প্রকল্প সরিয়ে নেয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। জাতীয় কমিটির এ আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)সহ অন্যান্য বাম রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন : আশুলিয়ার বিদেশি মালিকাধীন গার্মেন্টস ‘হ্যান ওয়েন’-এ বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল, কারখানায় সাপ্তাহিক এবং মেটার্নিটি ছুটি, নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে রাজপথে রয়েছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। গত ১২ জানুয়ারিও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিকরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল করেছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। শ্রমিকরা বলেন, গার্মেন্টস সেক্টর অহরহ শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন করছে। কারখানায় সাপ্তাহিক ছুটি এমনকি মেটার্নিটি ছুটিও দেয়া হয় না। এখনো সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি কার্যকর করা হয়নি। এমনকি এ কারখানায় নারী শ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
একইভাবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন বেতন বোনাসহ ট্রেড ইউনিয়ন করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে তারা প্রায়ই রাজপথে নামছে মিছিল, মিটিং নিয়ে। একইভাবে সরকারি কর্মচারীরাও তাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সিপিবি, বাসদসহ বাম দলগুলো রাজপথে প্রতিদিনই কোন না কোনো কর্মসূচি পালন করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।