Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

২০৪৬ সালে থাকবে না মিটারগেজ

রেলের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রেলের উন্নয়নে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২০১৬-২০৪৫ মেয়াদি এ মহাপরিকল্পনায় ২০৪৬ সালের পর দেশে কোনো মিটারগেজ রেলপথ থাকবে না। তার আগে দেশের সব মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজে রুপান্তর করা হবে। ৩০ বছরের মধ্যে সব রেলপথকে ডাবল লাইন করা হবে। ট্রেনের গতি অনেক বাড়বে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে মিটার গেজ রেলপথ নির্মাণে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট রেলপথ এখনও মিটার গেজ রয়ে গেছে। পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ এ দুই রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হবে। ২০৪৫ সালের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ২০৪৬ সালে দেশের সব মিটার গেজ রেলপথ তুলে ফেলা হবে। রেলওয়ের ৩০ বছরমেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) মহাপরিকল্পনায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে রেলওয়ের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এরপর সেটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এশীয় উন্নয়নের ব্যাংকের (এডিবি) কারিগরি সহায়তায় মহাপরিকল্পনাটি প্রণয়ন করছে সিপিসিএস ট্রান্সকম লিমিটেড ও ই.জেন কনসালটেন্টস লিমিটেড।
সূত্র জানায়, মিটার গেজ রেলপথ বন্ধে একটি টাইম ফ্রেম তুলে ধরা হয়েছে মহাপরিকল্পনায়। এতে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে সব প্রধান রেলপথের অন্তত একটি লাইনকে মিটার গেজ থেকে ব্রড গেজ বা ডুয়েল গেজে রূপান্তর করতে হবে। পরের ৫ বছরের মধ্যে অন্য লাইনটিও ব্রড গেজ বা ডুয়েল গেজে রূপান্তর করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে অন্যান্য রেলপথকেও ডুয়েল বা ব্রড গেজে রূপান্তর করতে হবে। আর ২০৪৫ সালের মধ্যে সারা দেশে ব্রড গেজ ট্রেন চলাচল শুরু করতে হবে। পরের বছর থেকে সব মিটার গেজ লাইন তুলে ফেলা যাবে।
রেলের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনায় প্রথম দুই পর্বে মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্বে (২০১৬-২০২০) আখাউড়া থেকে সিলেট, দ্বিতীয় পর্বে (২০২১-২০২৫) টঙ্গী-ভৈরববাজার ও লাকসাম-চট্টগ্রাম রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তৃতীয় (২০২৬-২০৩০) ও চতুর্থ (২০৩১-২০৩৫) পর্বে সব রেলপথকে পর্যায়ক্রমে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করা হবে। তবে যাত্রী চাহিদা বাড়ায় ২০২০ সালের মধ্যেই জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
মিটার গেজ বাদ দিয়ে ব্রড গেজে রূপান্তরের কিছু সুবিধা তুলে ধরে মহাপরিকল্পনায় বলা হয়, বিদ্যমান সেবাকে ব্যাহত না করে ২০৩৫ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে সব রেলপথকে পর্যায়ক্রমে ব্রড গেজে রূপান্তর করতে হবে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অগ্রাধিকার নির্ধারণের সুপারিশও করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, ব্রড গেজ রেলপথ চালুর জন্য নতুন ইঞ্জিন-কোচ কিনতে হবে। ব্রড গেজ ইঞ্জিন-কোচের গতি বেশি হয়। এজন্য এগুলো ব্যবহারে বিভিন্ন রুটে বিদ্যমান সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করতে হবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর থেকে নতুন কোনো মিটার গেজ রলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে, মহাপরিকল্পনায় ২০টি প্রকল্পকে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । এগুলো অতি দ্রæত বাস্তবায়নের সুপারিশও করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ। এরপর রয়েছে যথাক্রমে ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা বন্দর রেলপথ নির্মাণ, আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর, একই রুটে ডাবল লাইন নির্মাণ, বগুড়া-বঙ্গবন্ধু রেল সেতু সংযোগ রেলপথ নির্মাণ, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন নির্মাণ, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর, পাহাড়তলী কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন, নারায়ণগঞ্জে নতুন লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপ নির্মাণ, ডেমু মেরামতে পৃথক ওয়ার্কশপ নির্মাণ, ৯টি ডিজেল লোকোশেডকে ব্রড গেজে রূপান্তর ও পুনর্নির্মাণ, গাজীপুরের ধীরাশ্রমে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, যশোর-বেনাপোল রেলপথ সংস্কার, ৩০টি ব্রড গেজ ইঞ্জিন কেনা, ৩০০ ব্রড গেজ কভার্ডভ্যান কেনা, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেল ক্রসিংগুলোয় ওভারপাস বা ফ্লাইওভার নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন চলাচলে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, টঙ্গী-ভৈরববাজার রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর, চট্টগ্রামে ইন্টার-মোডাল টার্মিনাল নির্মাণ, বিদ্যমান ভৈরব ও তিস্তা রেল সেতু পুনর্নির্মাণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিটারগেজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ