পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : মা, কতদিন তোমার মুখ দেখি না। তুমিতো জানো আমি মিটিং-মিছিল দূরের কথা রাজনীতিই করি না। তারপরও ওরা (ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা) অবরোধের ভাঙচুরের মামলায় আসামির তালিকায় নাম দিয়েছে। বেসরকারি কোম্পানির চাকরি প্রতিদিন অফিস করতে হয়। শুনলাম পুলিশ আমাকে ধরতে বাসায় গেছে সবকিছু তছনছ করেছে।
আমার চিন্তায় তুমি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া না করায় শরীর ভেঙ্গে গেছে। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। তুমি না থাকলে পৃথিবীতে আমাদের দেখবে কে? তুমি --কে (ছোট ভাই) ৫ হাজার টাকা দিয়ে নেতার (স্থানীয় আওয়ামী লীগ) কাছে পাঠাও। টাকা পেলেই তিনি ‘আমি ভাল ছেলে এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক’ সার্টিফিকেট দেবেন। ওই সার্টিফিকেট থানায় জমা দিলেই বাসায় পুলিশ যাবে না। তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে। তোমার হাতের রান্না খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ----’।
রংপুরের এক তরুণ মায়ের কাছে লেখেন এই চিঠি। কয়েকমাস আগে চিঠির বাহক যখন মাকে এই চিঠি পড়ে শোনায় তখন উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। রাজনীতির কি নিষ্ঠুর নিয়তি! বড় দুই দলের প্রতিহিংসার রাজনীতি চর্চার গ্যারাকলে সাধারণ মানুষকে দূর্দশায় পড়তে হচ্ছে। রাজনীতি থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে থাকা ওই তরুণের মতো রাজধানী ঢাকা ছাড়াও জেলা উপজেলা পর্যায়ে শত শত তরুণের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এসব মামলা হয় বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও ৯২ দিন অবরোধ কর্মসূচির সময়। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় তাদের কেউ গ্রেফতার হয়ে টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছেন। কেউ দু/তিন মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে থাকায় তারা মাসের পর মাস এবং বছর পেরিয়ে গেলেও গর্ভধারিনী মার মুখ দর্শন করতে পারছেন না। অথচ মাকে দেখার জন্য তাদের মন কাঁদে। আর বিপদগ্রস্থ সন্তানের মায়ের মন! শুধু ওই তরুণ নয়, গত বছরের প্রথম দিকে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা ঘুরে এমন শত শত তরুণ-যুবকের পালিয়ে থাকার করুণ কাহিনী শুনেছি। ‘কতো দিন দেহিনা মায়ের মুখ/হুনিনা সেই কোকিল নামের আলাপ পাহির গান/ হায় রে পরান- হায় রে পরান’ (খালিদ হাসান মিলু)। এ গানটিই যেন দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর নিয়তি হয়ে গেছে। মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত সারাদেশের হাজার হাজার নেতাকর্মীর কেউ কারাগারে, কেউ পলাতক জীবন যাপন করছেন। স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে না পারায় পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের মানুষ ‘মা’কে দেখতে পর্যন্ত পাচ্ছেন না মাসের পর মাস। আর যারা কারাগারে রয়েছেন তাদের অবস্থা বাংলা সিনেমার সেই গানের মতোই ‘সবার আগে মনের খবর জানে শুধু মা/ বিনা দোষে হাজত খাটলাম দুষি আমি না’এর মতোই। যারা চাকরি পড়াশোনা ও অন্যান্য কারণে বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকেন তারা মায়ের সান্নিধ্য পান না সেটা বাস্তবতা। কিন্তু যারা দেশে থেকেও কারাগার, মামলা-হামলা, ক্ষমতাসীনদের অত্যাচার ও পুলিশী গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনের ও ফেরার তাদের অধিকাংশের অবস্থা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মতোই। দেশেই আছেন অথচ গ্রেফতারের ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না মায়ের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। এ কেমন রাজনীতির প্রতিহিংসা?
২০১৩ সালে বিপুল ভোটে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়র হওয়ার কিছুদিন পর তার নাম সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় আসামির তালিকায় উঠে। আদালতে আত্মসমর্পনের পর যথারীতি কারাগার। চার্জশীট এবং প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মেয়র পদ থেকে তাকে করা হয় বরখাস্ত। দীর্ঘ ১৩ মাস কারভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে ঢাকা থেকে সিলেট হাসপাতালে অসুস্থ মাকে দেখতে যান। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মা-ছেলের দেখা। মাকে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো অঝোরে কাঁদেন আরিফুল হক চৌধুরী। বললেন, ‘মা আমি মুক্তি পেয়েছি। ভালো আছি। কোনো চিন্তা করো না। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হলেই বাড়ি ফিরে যাবো।’ মা-ছেলে জড়িয়ে ধরে এভাবেই কেটে যায় ৫ মিনিট। হাসপাতালের পুরো কক্ষেই পিনপতন নীরবতা। আবেগাপ্লুত মা ও ছেলে। দু’জনের চেখে পানি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ডাক্তার-নার্সসহ উপস্থিত কেউ। এরপর আরিফুল হক চৌধুরী মা আমিনা খাতুনকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এ সময় তার চোখে ছিল আনন্দের পানি! ছেলেকে কাছে পেয়ে আমেনা খাতুনও যেনো ‘প্রাণ’ ফিরে পান। আহা! আমার কলিজার টুকরা!!
বিএনপির ৬ষ্ট জাতীয় কাউন্সিলে ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবে শেষ/ গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ শীর্ষক পুস্তিকায় সারাদেশের ২০৮ জন নেতাকর্মীর ছবি, ঠিকানাসহ তালিকা ছাপা হয়। বলা হয় যৌথবাহিনী, পুলিশ, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের হাতে এই নেতাকর্মীরা কেউ খুন হন, কেউ অপহৃত হওয়ায় তাদের আর খোঁজ মেলেনি। ওইসব নেতাকর্মীর খুন ও গুমের হৃদয়বিদারক বর্ণনাও দেয়া হয়। বিএনপির এই তালিকার বাইরে আরো যে কত কাহিনী, কত হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে গ্রামগঞ্জে তার খবর কেউ রাখেনি। পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ-আন্দোলনের তিন বছরে সহিংসতার অভিযোগে সারা দেশে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে ১৫ হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই মামলা দায়ের হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। এসব মামলা হয়েছে দ-বিধি, বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিভিন্ন ধারায়। মামলার আসামিদের কেউ কেউ কারাগারে থাকলেও বেশির ভাগই পলাতক। তাই সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতপক্ষ বিএনপি কাউন্সিল করলেও এই জোটের আন্দোলন-সংগ্রামসহ প্রায় সব ধরনের সাংগঠনিক কর্মকা- মামলার জালে জড়িয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে। এসব মামলার আসামি প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখের মতো। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। বিএনপির আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৯, তারেক রহমান ৭৬, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৮৪, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ১০, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ ৮, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ৫, এম কে আনোয়ার ৫, মির্জা আব্বাস ৭৩, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে রয়েছে ১১টি মামলা। অধিকাংশ নেতাই কেউ জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কেউ এখনো কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান ৫, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ৪৪টি পদত্যাগী শমসের মবিন চৌধুরীর ৪, সেলিমা রহমান ১০, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ৫, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ৮৭, বরকতউল্লাহ বুলু ৫০, সালাহউদ্দিন আহমেদ ২৭, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ৪০, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ১১০, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব ১৭৮, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ১০০, ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাইয়ুম ৩৮, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ১০১টি ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবের বিরুদ্ধে ৯৮টি মামলা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা উপজেলা পর্যায়ে অঙ্গ ও সহাযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের খোঁজ নেয়া হলেও সাধারণ মানুষ যারা রাজনৈতিক প্রতিহিসার শিকার হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন; রাজনীতির অনলে যাদের সংসার, বাড়িঘর, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে তাদের খোঁজ কে রাখছেন? আরিফুল হক চৌধুরী বড় নেতা। তার সঙ্গে ১৩ মাস সন্তানের প্রতিক্ষায় থাকা মায়ের দেখার দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত মানুষ। কিন্তু যারা তৃর্ণমূলের নেতা ও রাজনীতি থেকে অনেক দূরে থাকার পরও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় পরিস্থিতির শিকার হয়ে মামলা মোকদ্দমায় পড়ে আত্মগোপনে থেকে বছর পার করছেন; প্রাণের চেয়ে প্রিয় মাকে এক নজর দেখতে পারছেন না তাদের খবর কে রাখে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।