পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীসহ সারা দেশেই চলছে গ্রেফতার বাণিজ্য। মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও নির্যাতনও অব্যাহত আছে। পুলিশের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা এসব মামলায় নিরীহ মানুষকে আটক করে বাণিজ্য করছে। গত ২ বছরে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে দায়ের করা শত শত মামলায় এখন নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় সরকারী দলের প্রভাবশালীরা নিজদলের প্রতিপক্ষেও এসব মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে পুলিশের সহযোগিতায়। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার আসামি হয়ে হাজার হাজার মানুষ এখনও ঘরছাড়া। গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছেন তারা। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রমতে, গত দুই বছরে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও যানবাহনে হামলার অভিযোগে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মামলা হয়েছে। তবে বিএনপি বলছে এ সময়ের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে এবং এসব মামলায় ৩ লক্ষাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ মামলারই এখন পর্যন্ত চার্জশিট দাখিল করেনি পুলিশ। আর এ সুযোগেই চলছে পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য। কোনো ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই যখন যাকে খুশি পুলিশ ধরে নিয়ে থানায় আটক করে রাখছে। তারপর বিভিন্ন মামলায় অজ্ঞাত আসামিদের তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করার ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারীরা বলছেন, পুলিশের মামলা ও গ্রেফতার বাণিজ্য চলছেই। মামলার জালে আটকা পড়ে মাসের পর মাস বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ুেনতাকর্মীদের পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। আবার এসব মামলায় নিরীহ লোকজনদের আসামি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, বাড্ডা, ভাটেরা, যাত্রাবাড়ি, সবুজবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, ডেমরা, টঙ্গী, জয়দেবপুর, সাভার এবং মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় গত ৩ মাসে কমপক্ষে ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে অর্থ আদায় করেছে। যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের স্থান হয়েছে কারাগারে। তবে পুলিশ বলছে, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, কমিশনের কাছে প্রতিমাসে যে পরিমাণ অভিযোগ জমা পড়ে তার ৭০ ভাগই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মধ্যে গুরুতর কোনো অভিযোগ থাকলে কমিশন তদন্ত করে থাকে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, পুলিশ নানা অপরাধে জড়িত রয়েছে। এসব অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা না করলে এরা আরো বেপরোয়া হয়ে যাবে।
উত্তরা দক্ষিণ খান থানা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল কালাম। তার কলেজপড়–য়া ছেলে রফিকুল ইসলাম। গত রোববার দিবাগত রাতে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই রফিককে রেললাইনের পাশ থেকে তুলে নেয় পুলিশ। খবর পেয়ে তারা বাবা থানায় যান। পরে তিনি জানতে পারেন তাকে থানায় নেয়া হয়নি। পুলিশের গাড়িতে রাখা হয়েছে এবং রেললাইনের পাশেই আছে। পরে পুলিশকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে আবুল কালাম তার ছেলেকে ছাড়িয়ে নেন। কিন্ত কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছিল তা এখন পর্যন্ত তিনি জানেন না। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন মিরপুর ২ নম্বরের বাসিন্দা শহীদুল হক। পল্লবীর ব্যবসায় রাজু এবং কাফরুলের ভার্সিটির শিক্ষার্থী মামুন, রুমন। গত কয়দিন আগে একই কায়দায় তাদের কাফরুল থানা পুলিশ ধরে নেয় এবং পরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সম্প্রতি গাজিপুরে আব্দুল্লাহ আল মামুন ম-ল ও তার কয়েক হাজার নেতাকর্মীর নামে ৩ দিনে ৬টি মামলা দেয়া হয়েছে। আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিবাচিত কাউন্সিলর ও সরকার দলীয় নেতা। প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী গ্রুপের রোষানলে পরে পুলিশের সহযোগিতায় তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করতে শক্তিশালি একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপ এই কৌশল নিয়েছে বলে জানা গেছে। আর এ সুযোগ নিচ্ছে পুলিশ। শুধু মামলার জালে ফেলে সরকারী দলের নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ও নিরীহ মানুষকেও হরানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়ে, কখনো কখনো থানায় নিয়ে আটক করে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
এদিকে গাজীপুরে শুধু বিএনপি জামায়াত নয়, সরকারী দলের অনেক নেতাকর্মীও গ্রেফতার আতঙ্কে ঘর ছাড়া। বিভিন্ন মামলায় অজ্ঞাত আসামি রাখার সুযোগ কাজে লাগাছে পুলিশ। মামলার কাগজপত্র ঘেটে দেখা গেছে, কাউন্সিলর মামুন মন্ডল ও তার প্রায় ৫০ জন সমথর্ককে আসামি করে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৩৬ নম্বর ওয়াড কাউন্সিলর সানাউর রহমান প্রথম মামলাটি করেন। উল্লেখ্য, সানাউর রহমানের ছেলে নাজমুল কাউন্সিলর মামুন মন্ডল হত্যা চেষ্টা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ২০০৯ সালের ৩০ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিনের বেলায় মামুন ম-লকে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে মামুন ম-ল সুস্থ হয়ে ওঠেন। ওই ঘটনার পর থেকে সানাউর রহমান মামলা প্রত্যাহারের জন্য মামুনকে হুমকি-ধমকি এবং নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। যা নিয়ে দীঘদিন ধরে মামুন এবং সানাউরের মধ্যে দ্বন্ধ চলে আসছে। সম্প্রতি একটি রাস্থা নির্মানকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় এই দুই কাউন্সিলরের দ্বন্ধ শুরু হয়। এই ঘটনায় কাউন্সিলর সানাউর ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিপক্ষ মামুন ম-লের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি করেন। মামুন ম-ল সমর্থকরা সবাই সরকার দলীয় নেতা-কর্মী। মামলার খবরে ঘটনায় মামুন ম-ল সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মামুন মন্ডল জানান, মামলার প্রতিবাদে তার সমর্থকরা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সানাউর সমর্থকরা মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় তার সমর্থকরা প্রতিরোধ করলে দুই পক্ষে সংর্ঘষ হয়। এ ঘটনায় মামলার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি আরো কয়েকটি মামলা করা হয় তাদের বিরুদ্ধে। এর একদিন পর ২০ ফেব্রুয়ারি সানাউর রহমানের আপন ভাতিজা মনির হোসেন আরেকটি মামলা করেন। এই মামলায় কাউন্সিলর মামুন মন্ডল এবং তার ৫০ সমর্থককে আসামি করা হয়। একইদিন কাউন্সিলর সানাউর রহমান আরেকটি মামলা করেন। এই মামলায়ও মামুন মন্ডল এবং তার সমর্থকদের আসামি করা হয়। একইদিন জয়দেবপুর থানার এসআই সিরাজ-উদদৌলা বাদি হয়ে মামুন মন্ডল এবং তার ৫০০/৬০০ সমর্থককে আসামি করে একটি মামলা করেন। এই মামলায় পুলিশের কাজে বাধা দানের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে মামলায় দুইপক্ষে মারপিট এবং উত্তেজনার কথা বলা হলেও মামুন মন্ডল এবং তার সমর্থকদেরকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মামুন ম-লের নিজস্ব পাজারো, মাইক্রোবাস এবং নেতাকমীদের ৬টি মোটরসাইকেল জদ্ধ করার কথা বলা হয়। অন্যদিকে কাউন্সিলর সানাউরের কোন সমর্থককে আসামি করা হয়নি। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি মামুন ম-ল এবং তার ৭০/৮০ সমর্থককে আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়। মামলার বাদি কাউন্সিলর সানাউর রহমানের প্রতিবেশি এবং দুর সর্ম্পকের চাচাত ভাই। এ দিন মামুন ম-ল এবং তার ৭০/৮০ সমথককে আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়। এই মামলার বাদি হন কাউন্সিলর সানাউর রহমানের চাচাত ভাই আব্দুস সামাদ। দেখা গেছে, একটি মামলা ছাড়া প্রায় সবগুলো মামলাতেই একই ধরণের অভিযোগ করা হয়েছে। এধরনের আরো অনেক ঘটনার নজির রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান বলেন, মিথ্যা মামলায় আসামি করা পুলিশের একটি স্বভাব। দীর্ঘদিন থেকেই এ প্রক্রিয়া চলে আসছে। শুধু বিরোধী দল নয় পুলিশ সুযোগ পেলে সরকারী দলের লোকজনকেও আসামি করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। এটা সারা দেশের চিত্র। তবে গাজীপুরে মিথ্যা মামলার আসামি করা এবং হয়রানি করা একটা নিয়মে পরিণত করছে পুলিশ।
সরকারি দলের আরেক নেতা কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মশিউর রহমান মশি। মামলার জালে আটকা পড়ে প্রায় এক বছর ধরে পলাতক জীবনযাপন করছেন। র্যাবের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় হুলিয়া নিয়ে তিনি এখন পরিবার-পরিজন ছাড়া জীবন কাটাচ্ছেন। তার বরিুদ্ধে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর হত্যা, চাঁদাবাজি এবং গুলির ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। রয়েছে একাধিক জিডিও। রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করতেই প্রতিপক্ষ গ্রুপ কিছু হলেই এভাবে মামলা জুড়ে দেয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, পুলিশ সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার আগে একটু তদন্ত করলেই এর সত্যতা পাবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় পুলিশ সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নিতেও পিছপা হয়না।সরকারি দলের আরেক নেতা জুয়েল ম-ল। যিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য। তারর বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার আমলে একাধিক মামলা হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে গত কয়েক বছরে।
জয়দেব থানার ওসি রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউকে হয়রানি করা হয়নি। মামলা হলেই পুলিশ আসামি ধরতে যায়। বিনা কারণে কাউকে হয়রানি করা হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।
এ বিষয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুলিশের মুল প্রতিপক্ষ এখন সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। তাদের বাগে আনতে গিয়ে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। তবে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এভাবে মামলার বিষয়ে কোন পুলিশ কর্মকর্তা মুখ খুলতে চাননি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থেমে নেই পুলিশের অপরাধ। গুরুতর অপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হওয়ার অভিযোগে গত দুই বছরে প্রায় ১২ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। ঘুষ, দুর্নীতি ছাড়াও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এক শ্রেণীর অসাধু পুলিশ সদস্য। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হলেও নানাভাবে তদবির করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠছেন। খুন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, ধরে নিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশ। এসব অসাধু অর্থ লোভী দুর্নীতিবাজদের কারণে পুলিশ বাহিনীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। সৎ ও আদর্শবান অনেক পুলিশ কর্মকর্তা এদের জন্য বিপাকে পড়ছেন বলে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানায়, নানা অপরাধে গত দুই বছরে সারা দেশ থেকে ১২ হাজার ৩১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ জমা পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।