পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : খরার দহনের চৈত্র মাস এখন। কিন্তু চৈত্রের তৃতীয় সপ্তাহে এসেই গত দু’দিনে ঢাকাসহ দেশজুড়ে হয়েছে বর্ষণ। দেশের অধিকাংশ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে রীতিমতো বর্ষাকালীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় এই অসময়েই হচ্ছে অতিবর্ষণ। কোথাও কোথাও আগাম বা অকাল কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এদিকে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালায় হঠাৎ করেই উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তর বঙ্গোপসাগর। দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩নং সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সাগরে মাছ শিকার অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে। পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশের (ট্রাফ) সাথে পশ্চিমা বায়ুমালা মিলিত হয়ে বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলজুড়ে একটি বর্ষা-বলয় তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র গতকাল (শুক্রবার) আরও জানায়, চলতি এপ্রিল ও আগামী মে মাস পর্যন্ত অর্থাৎ প্রাক-বর্ষায় বাংলাদেশে স্বাভাবিক হার বা পরিমাণের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গত মার্চ-ফেব্রুয়ারি মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে বেশি। এ অবস্থায় দেশে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক মতিগতি এবং চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া-জলবায়ু পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে আপাতত আগাম বা অকাল বন্যার আশংকা করছেন না সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে গতকাল সকাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে চৈত্রের খরতাপের পরিবর্তে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অনেকটাই নিচে নেমে আসে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় মাদারীপুরে ৫৯ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ২৮, চট্টগ্রামে ২০, কুমিল্লায় ৫২, সিলেটে ৫, রাজশাহী ও রংপুরে ২৯, খুলনায় ৩৮, বরিশালে ১৮ মি.মি.। আবহাওয়া দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়, গত মার্চ থেকে চলতি এপ্রিল থেকে আগামী মে মাস অর্থাৎ প্রাক-বর্ষা ঋতু অবধি দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হলেও জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। ডিসেম্বর ’১৫ ইং, নভেম্বর ও বিগত অক্টোবর মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানা গেছে, চলতি এপ্রিল ও আগামী মে মাসে বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি নিম্নচাপ, নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে মাঝারি থেকে প্রবল আকারে কালবৈশাখী ঝড় এবং একাধিক মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তীব্র তাপপ্রবাহের সময় পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে।
চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া
আবহাওয়া-জলবায়ুর গতিপ্রকৃতি ক্রমাগতই অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। বৈরী, রুদ্র, রুক্ষ এবং চরমভাবাপন্ন হচ্ছে আবহাওয়া-জলবায়ু। বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর প্রায়ই উত্তাল থাকায় ঘন ঘন সতর্কতা সংকেত দেখানো হচ্ছে। এতে করে ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সমুদ্র বন্দর, বহির্নোঙ্গরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। অচল হয়ে পড়ছে সাগরে মাছ শিকার। আয়-রোজগারহীন হচ্ছে অসংখ্য জেলে, মাঝি-মাল্লা। আবহাওয়া-জলবায়ু বৈরী বা বিরূপ আচরণ করছে এবং তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ কারণে নানামুখী সংকট ও বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, মানুষের বন্ধু আবহাওয়া-জলবায়ু প্রতিনিয়ত বিরূপ হয়ে উঠছে। জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের ধারায় বিষিয়ে উঠছে পরিবেশ-প্রতিবেশ। যার নেতিবাচক অনিবার্য প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনধারণের অনেক ক্ষেত্রে। পাল্টে যাচ্ছে ভূ-প্রকৃতি। গাছপালা, প্রাণীকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন প্রায়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব-প্রতিক্রিয়া খালি চোখেই ধরা পড়ছে প্রতিনিয়ত। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের উপর। বঙ্গোপসাগরের মহিসোপান জুড়ে থাকা পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ ও দ্বীপ, চর ও সমুদ্র উপকূলভাগ, শতাধিক নদ-নদীর অববাহিকা নিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে বিশেষ এক ভৌগোলিক অবস্থানে। একই সঙ্গে পাহাড় টিলাভূমি, বন-জঙ্গল, সুন্দরবন সমেত উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, উপত্যকা, হ্রদ ও খাঁড়ি রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় একযোগেই পরিবেশ ও ভূপ্রকৃতিকে করে তুলেছে ক্রমাগত বিপন্ন।
আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানামুখী ক্ষতিকর প্রভাব বেড়েই চলেছে। জনবসতি, কৃষি-খামার, জীবিকা, জনস্বাস্থ্য, সামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-সহ জনজীবনের প্রায় সবক্ষেত্রেই এর ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দেশের জনগণের গড় উৎপাদন কমছে। সম্পদ হয়ে পড়ছে সীমিত। মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। নতুন নতুন রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটছে।
বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশের আবহাওয়া-জলবায়ু যেখানে বঙ্গোপসাগরের মেজাজ-মর্জির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল সেখানে সমুদ্রের পরিবেশে কার্বন ও এসিড বা অমøত্বের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সাগরের প্রাণী, উদ্ভিদজগত মিলে জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণেই তা ঘটছে। বাংলাদেশেও চিরকালের চেনা-জানা আবহাওয়া ও জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলো পাল্টে যাচ্ছে। বর্ষায় অনিয়মিত বৃষ্টি, গ্রীষ্মে তাপমাত্রা অতীত রেকর্ড অতিক্রম, শীতকাল ছোট হয়ে আসা, দৈনন্দিন আবহাওয়া পূর্বাভাসের সাথে বাস্তবতার অমিল প্রভৃতি পরিবর্তনের দৃশ্যমান দিক। বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন লঘুচাপ, সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠ ফুঁসে উঠছে।
এদিকে গতকাল সর্বশেষ আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় জানা গেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। এর সক্রিয় প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা যায়, পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে। এ মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে ৬৩ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ২২, চট্টগ্রামে ৩৩, নোয়াখালীতে ৪৩, রাজশাহী ও রংপুরে ২৯, খুলনায় ৩২, বরিশালে ১৮ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আজ (শনিবার) সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা কমতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।