পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল, সাতক্ষীরা থেকে ফিরে : ‘ব্যবসা করতে মূলধন লাগে না, প্রয়োজন স্বপ্ন ও সাহস। যখন ব্যবসা শুরু করি তখন সাহস, সততা আর পরিশ্রম করার মানসিকতা ছাড়া আর কোনো মূলধনই ছিল না আমার,’ বলছিলেন বরগুনা জেলা সদরের গিলাতলীর খাদিজা বেগম। তার স্বামী মো. সুমন মৃধা এক সময়ে মানুষের বেকারিতে কাজ করতেন। ঋণে জর্জরিত ছিল পরিবার। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় সিডর সব কিছু শেষ করে দিয়েছেল। দুই সন্তান সাবিনা (৯) এবং তানভিরকে (৭) নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এক সময়ে চিন্তা করলেন স্বামী যেহেতু বেকারির সব ধরনের কাজ পারেন, পাশাপাশি নিজেও এক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারবেন। আর তাই ঋণ নিয়ে ছোট পরিসরে বাড়ির মধ্যেই বেকারি গড়ে তুলেন খাদিজা। ধীরে ধীরে এর প্রসার বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে রাস্তার পাশে জমি ক্রয় করে নিজের ৭ শতাংশ জমির উপর ‘মেসার্স মুন বেকারি’ নামে বড় পরিসরে বেকারির কারখানা তৈরি করেছেন। খাদিজার বেকারির বিস্কুট, কেক, রুটি পুরো বরগুনাতে সাপ্লাই দেয়া হয়। অন্যান্য বেকারির চেয়ে তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের মান ভালো হওয়ায় এলাকায় বেশ সমাদৃত ‘মুন বেকারি’। বরগুনার বেতাগী, আয়লাসহ বিভিন্ন স্থানে তার প্রতিষ্ঠানের পণ্য যায়। বর্তমানে খাদিজা ও তার স্বামী সুমন ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বেকারিতে ১১ জন কর্মচারী কাজ করছে। ৪টি নিজস্ব টম টম ভ্যান বেকারির মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
জানা যায়, বাড়ির মধ্যে প্লাস্টিক ও পলিথিন দিয়ে বেকারি ছিলো। ঘূর্নিঝড় সিডর সব ধ্বংস করে দেয়। ঘরসহ কারখানার চুলা সব নষ্ট হয়ে যায়। একেবারে পথে বসে যাওয়া অবস্থায় আহ্ছানিয়া মিশনের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আওতায় গৌড়িচন্না ব্রাঞ্চ থেকে ৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন খাদিজা। আস্তে আস্তে পরিচিতির পাশপাশি ব্যবসারও প্রসার ঘটান তিনি। ২০১৫ সালে ঋণ নিয়ে রাস্তার পাশে কারখানা তৈরি করেন খাদিজা। প্রতিদিন প্রায় ৩৫ আইটেমের পণ্য তৈরি করা হচ্ছে কারখানায়। ২৫ হাজার টাকার পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয় খাদিজার। অনেক ক্রেতা বাসা-বাড়ীর জন্য নিলেও অধিকাংশই চায়ের দোকানে চাহিদা বেশি। যারা এই পণ্য সামগ্রী দোকানে দোকানে পৌছে দেয় তাদেরকে পৃথক কমিশন দেয়া হয়। এক্ষেত্রে যে যত বেশি বিক্রি করবে তার ততো বেশি কমিশন। কারখানার অধিকাংশ বিস্কুটের প্যাকেট ২৫/৪৫/৫০/৮০ এবং ৯০ টাকা। নিজস্ব চারজন ভ্যান চালক আছেন। বাইরে থেকেও ৪জন ভ্যান চালক পণ্য পরিবহনে কাজ করছে। বর্তমানে খাদিজার এই ব্যবসার মাধ্যমে ২৫টি পরিবার চলছে। এদিকে খাদিজা বেগম বেকারির পণ্যসামগ্রীর সাথে গত ঈদের পর থেকে কারখানার সামনের দিকে একটি মুদি দোকান তৈরি করেছেন। ব্যকারীর পাশাপাশি মুদি দোকান থেকেও ভালো আয় হচ্ছে তার। খাদিজা আরও জানান, বিস্কুট তৈরির আলাদা আরও একটি চুলা তৈরি করেছেন সম্প্রতি। চাহিদার উপরে উৎপাদন বাড়ানো হয়। বেশি প্রয়োজন হলে এই চুলার ব্যবহার করেন।
খাদিজা বেগম বলেন, ভালো লাগছে নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। নিজেই তত্ত্বাবধান করছি। একই সঙ্গে অন্যের বেকারিতে স্বামী এক সময়ে কাজ করতো। এখন নিজের মতো করে ব্যবসা পরিচালনা করছে এরচেয়ে ভালো লাগার কি থাকতে পারে।
তবে ব্যবসা পরিচালনা করেত গিয়ে সমস্যা নেই তা কিন্তু নয়; রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটের মোবাইল কোর্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা বলে উল্লেখ করেন খাদিজা। খাদিজা বেগম বলেন, গ্রাম এলাকা। সবেমাত্র কারখানা তৈরি করেছি। এখনো কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সঙ্গেই কারখানার কাজ চলছে। তিনি বলেন, মাকরশার জাঁল দেখা গেছে বলে আবার কাঁচের আয়না না থাকায় জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে। এছাড়া ভ্যাট অফিস প্রতিদিনই ঝামেলা করে। তিনি বলেন, ১০০ টাকার বিস্কুটে ১৫টাকা দিতে হয়। সব মিলিয়ে ব্যবসাও এতো হয় না। তারপরও তাদেরকে টাকা না দিলে বিদায় হয় না। অবশ্য জরিমানার টাকার বিনিময়ে তাদেরকে কোন রশিদ দেয়া হয় না বলেও জানান তিনি। গ্রামের মানুষের বিস্কুটের দামে ভ্যাট যুক্ত করলে বিস্কুট আর খাবে না। তাই এসব নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় বলে উল্লেখ করেন খাদিজা। খাদিজা জানান, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং স্যানিটারী দপ্তর থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে। ভ্যাট নিয়েই যত বিপদ। এছাড়া বিএসটিআই’র লাইসেন্সের জন্য প্রক্রিয়া চলছে বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষা করেই ব্যাকারেিত বিস্কুট, কেকসহ বিভিন্ন পন্য তৈরি করা হচ্ছে। এলাকার এক বিস্কুট ক্রেতা জানান, অন্যান্য বেকারির চেয়ে মুন বেকারির বিস্কুট ও কেকের মান ভালো এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হয় বলেই আমার এখানকার পণ্য বাসায় নেই।
খাদিজা বলেন, বর্তমানে আমি এবং আমার পরিবার অনেক ভালো আছি। এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি আমাদের পরিশ্রম এবং আহ্ছানিয়া মিশনের সহযোগিতা। মিশনের সহায়তা না পেলে এ পর্যন্ত আসা সম্ভব হতো না।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, খাদিজা তাদের সংস্থার সদস্য পদ পান ২০০৯ সালের এপ্রিলে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ভালো একজন ঋণ গ্রহীতা। সঠিক সময় মতোই সব কিস্তি প্রদান করছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে তার আমানতও অনেক ভালো বলে উল্লেখ করেন। বর্তমানে খাদিজার আমানত ৪০ হাজার টাকার উপরে বলে জানান তিনি। মো. নাসির উদ্দিন বলেন, শুরু থেকেই তার ব্যবসার বিষয়ে আত্মপ্রত্যয়ী ছিল। বিষয়টি মাথায় রেখেই তাকে ঋণ দেয়া হয়েছে। সে এখন এলাকার সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমরাও এক্ষেত্রে সফল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।