Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জেঁকে বসেছে শীত স্থবির উত্তর জনপদ

প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণ না পড়া এবং হিমালয়ে থেকে ধেয়ে আসা তীব্র গত কয়েক দিনের তীব্র শৈত্যপ্রবাহে সারাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষজন পড়েছেন সবচেয়ে বিপদে। উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও তাপমাত্রার পারদ ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশপাশে নেমে গেছে। তেঁতুলিয়ায় দিনে হিমেল হাওয়া আর রাতে বরফ বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। গত ৭ দিনে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তীব্র শীতে গরম কাপড়ের অভাব আর কর্মহীন হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই অঞ্চলের দিনমজুররা।
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও সৈয়দপুরে ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৬.৫ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০.৮ ও ১৩.২ ডিগ্রি সে., চট্টগ্রামে ২২ ও ১৪.৩ ডিগ্রি সে.।
এদিকে আজ (রোববার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। ৫ দিন পরে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
৭ দিনে ৬ জনের মৃত্যু : তেঁতুলিয়ায় জেঁকে বসেছে শীত-দিনে হিমেল হাওয়া-রাতে বরফ বৃষ্টি
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা, তেঁতুলিয়ায় দিনভর বরফ বৃষ্টি, তীব্র শীতে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। ছিন্নমূল মানুষের দিন কাটাতে হচ্ছে অর্ধাহারে-অনাহারে। বাড়ছে রোগ ব্যাধী। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। হিমালয়ের হিমেল হাওয়া ও বরফ বৃষ্টিতে কাবু হয়ে পড়েছে মানুষ। তেঁতুলিয়ার এক তৃতীয়াংশ মানুষই পাথর শ্রমিক। এদের একমাত্র উপার্জনের পথই হল পাথর উত্তোলন। একদিন পাথর উত্তোলন করতে না পারলে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। মাঘের শীতে নদীর পানিতে ডুবে পাথর উত্তোলন করা তো দূরের কথা ঘর হতে বাইরে বের হতে পারছে না মানুষ। একদিকে যেমন খাদ্যের অভাব অপরদিকে শীতবস্ত্রের অভাব। মাঘের শীতে বাঘও কাবু হয়ে যায়- তার প্রমাণ এবারের চলতি শীত। মাঘ মাস থেকে শুরু হওয়া শীত অব্যাহতভাবে একটানা চলছে। লাগাতার শৈত্যপ্রবাহ এবং বরফ বৃষ্টির কারণে ছিন্নমূল মানুষ অসহনীয় হয়ে পড়ায় ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারছে না ফলে শ্রমও বিক্রি করাও সম্ভব হচ্ছে না শ্রমজীবী মানুষের। বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের নিকট তেঁতুলিয়ার ছিন্নমূল মানুষেরা অতিদ্রুত শীত বস্ত্র বিতরণের জোর দাবী জানান।
তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ ইসাহক আলী আমাদের জানান কয়েকদিনের শীতে বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট-হাঁপানী ও শিশুদের ঠা-াজনিত রোগের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান ছিন্নমূল মানুষের তুলনায় সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত মাত্র ২ হাজার ৫ শত কম্বল বিলি করা হয়েছে। তবে শীতের তীব্রতার তুলনায় আরো ১০ হাজার পিচ কম্বলের জরুরী প্রয়োজন। আরো কম্বলের চাহিদা দিয়ে ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে তিনি এই সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন।
তীব্র শৈত্যপ্রবাহে কাহিল নীলফামারী
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা, হাড় কাঁপানো শীত আর শৈত্যপ্রবাহ কাহিল হয়ে পড়েছে নীলফামারীর মানুষজন। সেই সাথে বুধবার থেকে শুরু হওয়া ঘন কুয়াশার সাথে উত্তরের হিমেল বাতাস আর কনকনে শীতে জবুথুবু হয়ে পড়েছে এখানকার লোকজন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। তীব্র শীতের কারণে তারা কাজে যেতে পারছেন না। এই শীতে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন ২২টি চর এলাকার ভূমিহীন মানুষজন। শীতবস্ত্রের অভাবে দিনভর খড়কুঁটে জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। চারদিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারনে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনের বেলাতেও কুয়াশার কারণে ভারী যানবাহনগুলোকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। অপর দিকে শীত নিবারন করতে গরম কাপড় সংগ্রহে নিম্ন আয়ের মানুষরা পৌরসভা মাঠের পুরানো কাপড়ের বাজারে ভিড় করছেন। সৈয়দপুর বিমান বন্দরের আবহওয়া অফিসে শনিবার নীলফামারী জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে শীতের তীব্রতার কারণে ঠা-াজনিত রোগের প্রার্দুভাব বেড়েছে। আর এই রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধ বয়সীরা।
অপর দিকে শীত নিবারনে সরকারি বরাদ্দ এসেছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এর পরেও যা বরাদ্দ পাওয়া গেছে তা বিতরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজনদের।
কুড়িগ্রামে জনজীবন বিপর্যস্ত
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা, ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠা-ায় কুড়িগ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুক্রবার রাত থেকে ঘন কুয়াশা ও উত্তরীয় হিমেল হওয়ায় কুড়িগ্রামে ঠা-ার প্রকোপ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকগুন। পথ-ঘাট কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকায় দিনের বেলায়ও হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন।
উত্তারাঞ্চলের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে হঠাৎ করে শীত জেঁকে বসেছে। ঘন কুয়াশার সাথে যোগ দিয়েছে উত্তরীয় হিমেল হাওয়া। শনিবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা না মেলায় কাজে যেতে পারছে না নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাসহ নদ-নদীর অববাহিকার চর ও দ্বীপচরের মানুষজন। এ অবস্থায় গরম কাপড়ের অভাবে বিপাকে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। রেহাই পাচ্ছে না গবাদি পশুও। বোরো মৌসুম শুরু হলেও কনকনে ঠা-ায় মাঠে কাজ করতে পারছে না কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম শহরের ভ্যান চালক আফজাল হোসেন জানান, ঠা-ার মধ্যে গাড়ী নিয়ে বের হলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ জোটেনি। এমন ঠা-ায় হাত-পা পর্যন্ত বের করা যায় না। এ অবস্থা কতদিন চলবে কে জানে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা ব্রীজ এলাকার কৃষি শ্রমিক শফিকুল জানান, জমিতে বোরো চারা লাগানোর কাজ করছি কিন্তু ঠান্ডায় থাকা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কাজ করা সম্ভব না।
কনকনে ঠা-ায় ঘর থেকে বের হয়ে কাজে যেতে পারছে না মানুষজন। গরম কাপড়ের অভাবে অনেকে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধদের নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। অনেক হতদরিদ্র মানুষ ঠা-া উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হলেও কাজ জুটছে না তাদের।

কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, আজ শনিবার এ জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলে জানান তিনি।
পঞ্চগড়ে শিশুদের মধ্যে রোগ বাড়ছে
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা, উত্তরের শেষ জেলা পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছে মৃদু শৈতপ্রবাহ। গত দুইদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। সাথে উত্তরের হিমেল বাতাস। কনকনে শীত আর ঘনকুয়াশায় বিপর্যস্থ জনজীবন। চরম দুর্ভোগে পড়েছে দিনমুজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা অর্ধাহারে দিনযাপন করছে। তীব্র শীতে কাহিল পঞ্চগড়ের মানুষ। দিনভর ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে আকাশ। রাতভর বৃষ্টি মত তুষার পড়ছে। দিনের শিশিরেও শরীর ভিজে যায়। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর থেকে বের হয় না। দিনভর শহরের অধিকাংশ রাস্তা ফাঁকা দেখা থাকে। রিক্সাভ্যান চালক আর খেটে খাওয়া মানুষের আয় শুন্যের কোটায় নেমেছে। জেলায় কোন আবহাওয়া অফিস নেই। তবে বে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে রাতে ৮ থেকে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠা-নামা করছে।
এদিকে শিশুদের জন্য বাড়তি সতর্কতা নিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। সর্দি-কাশি লেগে থাকছে। গত দুই দিনে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নতুন করে ৫১ শিশু ঠা-াজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেঁকে বসেছে শীত স্থবির উত্তর জনপদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ