পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ‘কাল কি কেউ ভেবেছিল ১০ মিনিট পর জয়কে আর এই পৃথিবীতে দেখতে পাবে না কেউ, হারিয়ে গেছে সবার মাঝ থেকে জয়। ভাগ্যের এ কী নির্মম পরিহাস। সবাই জয়ের জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ ওকে জান্নাত নসিব করুক, আমিন।’ গত ২৬ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুর পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ড থেকে এভাবেই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র আরিফুর রহমান আবির (১৯)। আসলেই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! বন্ধু জয়ের বিদায়কে যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না আবির। মাত্র তিন দিন পর গতকাল ঠিক একইভাবে বেপরোয়া বাসচাপায় প্রাণ হারালেন আবির। তাই তিনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে, প্রিয় বন্ধু জয়ের কাছে, যেখান থেকে ফিরে আসবেন না কোনো দিন। আবিরের অপর বন্ধুরা ঠিক একইভাবে তার জান্নাত কামনা করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
ঢাকা কলেজের ‘বিজনেস স্টাডিজ’ বিভাগের ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন আবির। আগামি ৩ এপ্রিল তার ফাইনাল পরীক্ষা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রবেশপত্র আনতে কলেজের উদ্দেশে মতিঝিল সোনালী ব্যাংক স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে বের হন আবির। সঙ্গে তার প্রিয় বাহন মোটরসাইকেল। বাসার কয়েকশ’ গজ অদূরে মধুমিতা সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় বেপরোয়া বাস পেছন দিক থেকে চাপা দেয় আবিরকে। গুরুতর আহতাবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে সে। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে সবই শেষ। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহতের পকেটে থাকা কলেজের পরিচয়পত্র দেখে কাঞ্চন খান নামে জনৈক ব্যক্তি আবিরের কিছু ছবি তোলেন। পরে তার মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে নিজের ফেসবুক থেকে আবিরের পরিচিতদের ঢাকা মেডিকেলে যোগাযোগ করতে বলেন। ওই স্ট্যাটাসের ৫ মিনিটের মধ্যেই প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন আবিরের স্বজনরা।
আবিরের বাবা আবদুল ওয়াদুদ সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী। সে সুবাদেই মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের কোয়ার্টারে তাদের বসবাস। অত্যন্ত মেধাবী, বিনয়ী এবং সদাহাস্যোজ্জ্বল আবিরের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় তার স্বজন, বন্ধু, সহপাঠী ও শুভাকাক্সক্ষীরা। শেষবারের মতো তাকে দেখতে সকলেই ভিড় করেন সোনালী ব্যাংক স্টাফ কোয়ার্টারে, যেখানে কাফনে মোড়ানো আবিরের লাশ। সকলের আর্তনাদ আর কান্না, সে কী হৃদয়বিদারক দৃশ্য। আবদুল ওয়াদুদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে আবির ছোট। প্রিয় সন্তান হারিয়ে বুক চাপড়িয়ে ওয়াদুদের আর্তচিৎকার। তিন দিন পরে শুরু হওয়া ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় অংশ নেয়া হলো না ছেলের। হলো না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে পূরণ। এ কথা বলেই আর্তনাদ করেন আবদুল ওয়াদুদ। কোনো সান্ত¦নাই আবিরের মাকে স্পর্শ করেনি। ছেলের লাশ বুকে চেপে তিনি চিৎকার করে বলে চলছিলেন, বাবা, তুমি চোখ খোলো। তোমার সব আবদার আমি পূরণ করব। কখনো বকা দিব না। অভিমান কর না। চোখ খোলো। একসময় নিস্তেজ হয়ে পড়েন আবিরের মা। সন্তানের লাশের সামনে মায়ের এ আর্তচিৎকারে উপস্থিত সকলেই নির্বাক, নিথর বাকহীন। নিঃশব্দ নীরবতা। কিন্তু সকলের চোখেই পানি। ঠিক তখনই লাশের সামনে পুলিশের কর্মকর্তাকে নিহতের এক স্বজনের প্রশ্ন Ñ বেপরোয়া বাস এভাবে আর কত প্রাণ কেড়ে নেবে? জড়িতরা কি শাস্তি পাবে না?
মতিঝিল থানা পুলিশ জানায়, ঘটনার পরপরই দুর্ঘটনা কবলিত বাস (ঢাকা মেট্রো-জ- ১১-২৪৯৪) ফেলে চালক পালিয়ে গেছে। অভিযুক্ত চালককে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এদিকে গতকাল বাদ আছর সোনালী ব্যাংক স্টাফ কোয়ার্টারে নিহতের প্রথম নামাজে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় নিহতের নানাবাড়ি সিলেটের শ্রী মঙ্গলে। যেখান থেকে আবির আর কোনোদিন ঢাকায় ফিরে আসবে না, না কোনোদিন না। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় আবিরকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।