পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পলাশ মাহমুদ : সাধারণত ফ্লাইওভারে ওঠার রাস্তা বেশি ঢালু হয়। ফলে স্বাভাবিক গতিতেই গাড়ি ফ্লাইওভারে উঠতে পারে। অন্যদিকে নামার রাস্তাটি হয় কম ঢালু। যাতে গাড়ি দ্রুত নেমে যেতে পারে। কিন্তু মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে সেটি হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো। এ ফ্লাইওভারে ওঠার রাস্তাটি খাড়া আর নামার রাস্তাটি বেশি ঢালু করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ফ্লাইওভারটির নকশা করানোয় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মঙ্গলবার এক অংশ চালু হওয়ার পর থেকে ফ্লাইওভারটির মুখে তীব্র যানজট লেগেই থাকছে। ফলে নকশায় ত্রুটি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানা যায়, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নকশা প্রণয়ন করা হয় বাঁ হাতে চালিত গাড়ির জন্য। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নকশাটি করিয়ে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটি তাদের দেশে ডান পাশে চালিত গাড়ির উপযোগী করেই ফ্লাইওভারটির নকশা করে। কিন্তু বাংলাদেশে সব গাড়িই ডান হাতে বা বাঁ পাশে চালিত। ফলে সেই ভুল নকশা মেনেই ফ্লাইওয়ারটির নির্মাণকাজ এগিয়ে যায়। অনেক আগে থেকেই ভুল নকশায় ফ্লাইওভার নির্মাণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। উদ্বোধনের পর সেটিই সত্য হলো।
নির্মাণাধীন এ ফ্লাইওভারের ত্রুটির কারণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে গতকাল তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২২তম বৈঠকে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শওকত আলী, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম), মো. তাজুল ইসলাম এবং নিলুফার জাফর উল্লাহ বৈঠকে অংশ নেন। কমিটি জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবে।
সূত্র জানায়, ফ্লাইওভারের কাঠামোয় ত্রুটির বিষয়টি বেশকিছু দিন আগেই চিহ্নিত করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি এলজিইডিকে অবহিতও করা হয়। ৬০টি পিলারে ত্রুটি রয়েছে বলে বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা জানান। তবে পিলার নির্মাণ হয়ে যাওয়ায় তা আর সংশোধন করা সম্ভব নয় বলেই জানায় এলজিইডি।
কারণ হিসেবে বলা হয়, নির্মাণ হয়ে যাওয়ায় ছয় প্রান্তের প্রায় ৬০টি পিলার ভাঙা সম্ভব নয়। এতে ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। নতুন করে নকশা প্রণয়নে প্রকল্প বাস্তবায়নও বিলম্বিত হবে। পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর অর্থায়নও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।
বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, ফ্লাইওভারের নকশা বিশ্লেষণেই অসামঞ্জস্যের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যায়। কারণ ফ্লাইওভারে ওঠার র্যাম্পগুলোয় পিলার রয়েছে আটটি। আর নামার র্যাম্পগুলোয় পিলার রয়েছে ১১টি করে। এতে ওঠার র্যাম্পের দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০ মিটার আর নামার ক্ষেত্রে ৩২০ মিটার।
গতকালের বৈঠকে অভিযোগ করা হয়, ঢাকা শহরে নির্মিত বিভিন্ন ফ্লাইওভারের পরিকল্পনাসংক্রান্ত ত্রুটির কারণে প্রায়ই এসবের শেষপ্রান্তে অবর্ণনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়, যা জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের পরিকল্পনায় কোনো ত্রুটি ছিল কিনা, হলে তাতে কারা জড়িত তা পর্যবেক্ষণের জন্য মো. তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে সামশুল হক চৌধুরী ও মুহিবুর রহমান মানিককে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি সাবকমিটি গঠন করা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নকশায় ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার চালু হওয়া ফ্লাইওভারের ক্রুটি নিয়েই খুলে দেয়া হয়। এর সঙ্গে কে জড়িত তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংসদীয় সাবকমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফ্লাইওভারের নকশায় ত্রুটির বিষয়টি বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের কাছে ধরা পড়ার পর প্রকল্প পরিচালক নাজমুল আলম বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন। সেসময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ফ্লাইওভারের নকশা প্রণয়নে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া হয়। আর নকশা সংশোধনে বুয়েট বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। তাই নকশায় কোনো ত্রুটি থাকার কথা নয়। এর পরও ভিন্নমত থাকতেই পারে। এ বিষয়ে এলজিইডির কিছুই করার নেই।’
এ বিষয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব জানান, জবাবদিহিতার বাইরে গিয়ে এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ সামগ্রিকভাবে মঙ্গল বয়ে আনবে না। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নকশার ত্রুটি মহাখালী ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রেও ছিল। মহাখালী ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সচল ডাইভারশন তৈরি করা যায়নি। মহাখালী ফ্লাইওভারের কার্যকারিতা বাড়াতে তেজগাঁও শিল্প এলাকার দিকে একটা উইং দরকার ছিল, এটাও করা যায়নি। মহাখালীর মতো মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারও একপ্রকার অকার্যকর করে নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের গাড়িচালকরা কোন দিকে বসেন, অথবা আমরা জাপান-যুক্তরাষ্ট্র নাকি ব্রিটিশ Ñ কোন সিস্টেমে চলব, তা বিবেচনা করা ছাড়াই এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বিবেচনা না করার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ গণশুনানি ছাড়াই এ ধরনের বড় অবকাঠামো নির্মাণ। আর গণশুনানি হয় না বলেই এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের সময়ও জনদুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।