পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : মিয়ানমারের ইয়াবা আর ভারতীয় ফেনসিডিলে সর্বনাশ হচ্ছে বাংলাদেশের। নেশার নীল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। নানা উদ্যোগ নিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না মাদকের ভয়াল বিস্তার। সীমান্তপথে বানের পানির মতো আসছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ নানা নেশার সামগ্রী। বাংলাদেশকে টার্গেট করে ভারত সীমান্তে গড়ে উঠা ফেনসিডিল কারখানায় তৈরী চালান ঠেলে দেয়া হচ্ছে এপারে। মিয়ানমার সীমান্তে ছোট-বড় অর্ধশত কারখানায় তৈরী ইয়াবার গন্তব্যও বাংলাদেশ। সাগর, পাহাড় আর সড়ক পথে ইয়াবার চালান ঢুকছে দেশে।
সীমান্ত পথে আসা এসব মাদকের চালান সিন্ডিকেটের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব এলাকায় মিলছে ইয়াবা, ফেনসিডিল। অথচ এর কোনটাই দেশে তৈরী হয় না। কিন্তু এই মাদকের আগ্রাসন থেকে রেহাই পাচ্ছে না দেশ।
ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ সব রকমের মাদক এখন সহজলভ্য। হাত বাড়ালে মিলছে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ হরেক নেশাসামগ্রী। চোরাকারবারী আর মাদক সওদাগরী সিন্ডিকেটর নেটওয়ার্ক এখন সর্বত্রই। নেশাদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় আসক্তের সংখ্যাও বাড়ছে। শিশু-কিশোর এমনকি তরুণি ও নারীরাও এখন নেশাগ্রহণ করছে। মাদকাসক্তির কারণে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। পরিবার ও সমাজে বাড়ছে অস্থিরতা। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। অবনতি হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির।
মিয়ানমার থেকে জোয়ারের পানির মতো ইয়াবা আসছে। চলতি বছরের তিন মাসে প্রায় পৌনে এক কোটি ইয়াবার চালান ধরা পড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে। এর অন্তত দশগুণ নিরাপদে পাচার হয়ে গেছে। জানা যায়, বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমারে ছোট-বড় অর্ধশত ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় তৈরী ইয়াবার চালান ঠেলে দেয়া হচ্ছে এপারে। কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে গড়ে উঠা মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটের হাত হয়ে এসব চালান চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। কক্সবাজারে ইয়াবার চোরাচালানের সাথে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় উঠে আসে অনেক রাঘব-বোয়ালের নাম। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ক্রসফায়ার আর এনকাউন্টারে পাচারকারি চক্রের অনেকে মারাও গেছে। তবে এরপরও মাদক সওদাগরী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা থেমে নেই। সাগর, পাহাড় আর সড়কপথে আসছে ইয়াবার চালান। সাগর পথে সরাসরি মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান দেশে ঢুকছে। র্যাব, কোস্টগার্ড আর নৌবাহিনীর অভিযানে প্রায়ই সাগর পথে ইয়াবার বড় বড় চালানও ধরা পড়ছে। তবে বেশিরভাগ চালান নিরাপদে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। কারণ সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া সাগর পথে ইয়াবার চালান ধরা রীতিমত অসম্ভব।
সাগরে হাজার হাজার মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারসহ নৌযান চলাচল করছে। এর কোনটিতে ইয়াবার চালান আছে তা সনাক্ত করা কঠিন। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে পাচারকারীরা। সড়ক ও পাহাড়ী পথেও ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। জানা যায়, গত এক দশকে দেশে ইয়াবার বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একসময় শুধু রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকায় ইয়াবার গ্রাহক ছিল। এখন গ্রামেও ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। পাড়ায়-মহলায় ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। ইয়াবা বিক্রিকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবির ঘটনাও ঘটছে।
দেশের সীমান্ত পথে ফেনসিডিলের চালানও আসছে। কুমিলা ও ফেনী সীমান্ত হয়ে আসা ফেনসিডিল ও হরেক রকমের কফ সিরাপের চালান ট্রেনে, বাসে কিংবা চোরাকারবারীদের যানবাহনে চট্টগ্রাম আসছে। র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে প্রায়ই এ ধরনের চালান ধরা পড়ছে। সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে কুমিল্লা থেকে ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম আসার পথে ২ হাজার ফেনসিডিলের একটি চালান ধরা পড়ে। চালানের সাথে আটককৃতরা জানায়, ওপার থেকে চালানটি দেশে আসে।
র্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে ফেনসিডিল আসার হার কিছুটা কমে গেছে। কারণ অভিযানে ফেনসিডিলের তেমন বড় চালান ধরা পড়ছে না। জানা যায়, ওপারে গড়ে উঠা ফেনসিডিল কারখানার বেশ কিছু সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ইয়াবার আগ্রাসনের কাছে ফেনসিডিল কিছুটা কাবু হয়ে পড়েছে। এই কারণে এখানে ফেনসিডিলের চাহিদাও কমেছে। তবে ভারত থেকে ফেনসিডিল জাতীয় নতুন নতুন নেশার সামগ্রী আসা অব্যাহত আছে, আসছে গাঁজাও।
সম্প্রতি র্যাব-৭ চট্টগ্রামের মাদকদ্রব্য ধ্বংসের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বীকার করেছেন, ইয়াবা এবং ফেনসিডিল দুটোর কোনটাই দেশে তৈরী হয় না। ফেনসিডিল আসছে ভারত থেকে আর ইয়াবা আসছে মিয়ানমার থেকে। তিনি দাবি করেন বাংলাদেশের অনুরোধে ইতোমধ্যে ভারতের সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠা ফেনসিডিল কারখানা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তিনি মিয়ানমারকেও এই পথ অনুসরণের আহ্বান জানান। এই অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও মনে করেন শুধুমাত্র অভিযান চালিয়ে মাদকের আগ্রাসন মোকাবেলা সম্ভব নয়। আগে এসব নেশার উৎস বন্ধ করতে হবে। আর এই জন্য জরুরী কূটনৈতিক উদ্যোগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।