পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে জামিন স্থগিতের আবেদনকারীদের এই সময়ের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বরেছেন আদালত। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করে আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার। শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিএনপি আইনজীবীরা চরম বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কয়েক মিনিটি পরই আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।
এদিকে জামিন আদেশ স্থগিত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, আমরা ব্যথিত দেশের মানুষও ব্যথিত, মর্মাহত। আমাদের বক্তব্য না শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আদেশ দিয়েছেন। বিচার বিভাগের কাছ থেকে আমরা এটা আশা করি নাই। অপরদিকে দুদকের আইনজীবী বলেছেন, আপিল বিভাগের এই আদেশর ফলে আমি আনন্দিত। খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের ওপর আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গত মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনে তা শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তারাই ধারাবাকিতায় গতকাল এ বিষয়ে আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গিয়াস উদ্দিন আহমদে, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলস , ব্যারিস্টার কায়সার কামালহ বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। সকাল ৯টার দিকে শুনানি শুরু হয়। শুরুতে দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে আদালত স্টে অর্ডার দেন। পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কথা বলতে গেলে আপিল বিভাগ ও আইনজীবীদের মধ্যে উতপ্তবাক্য বিনিময় শুরু হয়।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও আইনজীবীদের (বাগবিতন্ডা) কথোপথন :
শুরুতেই দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, হাইকোর্ট ৪টি কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন। আমরা এখনও সে আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাইনি। আদেশের কপি পেলে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করব। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, সিপি (লিভ টু আপিল) ফাইল করে আসেন। তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, সিপি ফাইল করতে রোববার- সোমবার পর্যন্ত আমাদের সময় দেয়া হোক। এ পর্যন্ত জামিন স্থগিত রাখা হোক। এরপর আদালত বলেন, ঠিক আছে সিপি ফাইল করে আসেন রোববারের মধ্যে। এ পর্যন্ত জামিন স্টে (স্থগিত) থাকবে।
তখন খালেদার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদেরকে আগে শুনেন। আমাদের বক্তব্য (আসামিপক্ষের) তো শুনেন নাই। আমাদের না শুনে এভাবে আদেশ দিতে পারেন না। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, শুনতে হবে না। রোববার পর্যন্ত তো স্থগিত দিয়েছি। ওই দিন আসেন, তখন শুনব।জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনি একতরফাভাবে শুনানি করে আদেশ দিলে, এতে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টকে কোর্টের মতো চলতে দিন। এরপর জয়নুল আবেদীন ও এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, না শুনেই তো আদেশ দিলেন। আদালত বলেন, আমরা অন্তর্বতীকালীন আদেশ দিয়েছি। আমাদের শোনার দরকার নেই। জয়নুল আবেদীন বলেন, এই মামলায় চেম্বার আদালত তো স্টে দেয়নি। এই সময়ের মধ্যে আসামিও বের হবে না। তাই স্টের প্রয়োজন নেই। এ পর্যায়ে সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা তো শুনানির সুযোগ পেলাম না। এরপরই আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকা থেকে অন্য মামলার শুনানি শুরু করেন আদালত।
তখন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতে বেশ দাঁড়িয়ে থাকেন। কিছু সময় পর প্রধান বিচারপতি তাদের উদ্দেশ্য করেন বলেন, আপনারা সবাই দাড়িঁয়ে আছেন কেন। এতে আদালতের সৌন্দয্য নষ্ট হয়। এসময় খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, আপনি তো না শুনেই একতরফা আদেশ দিলেন। আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, কার কথা শুনবো আর কার কথা শুনবো না তা কি আপনার কাছে শুনতে হবে। গিয়াস উদ্দিন আবারও উচ্চ স্বরে বলেন, আপনাকে শুনতে হবে। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন,আপনি কি আদালতকে থ্রেট (হুমকি) দিচ্ছেন? বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুনে তারপর আদেশ দিতে হবে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, থ্রেট দিবেন না। এ সময় আদালতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা উচ্চ স্বরে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আপনি তো কোর্টকে শেষ করে দিলেন। তখন অ্যাটর্নি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিলেন। তখন একদল আইনজীবী দালাল দালাল বলে আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।
বক্তব্য না শুনে আদালত আদেশ দিয়েছেন - খালেদা জিয়ার আইনজীবী:
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, আদালতের এ আদেশে আমরা ব্যথিত এবং দেশবাসী মর্মাহত। তিনি আরো বলেন, আমরা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, আমাদের বক্তব্য না শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই ধরনের আদেশ দিয়েছে। এই আদেশে আমরা ব্যথিত, এই আদালতের আদেশের বিষয়ে কী ভাষায় আপনাদের কাছে বর্ণনা করবো; আমরা বর্ণনা করতে পারছি না। জামিন স্থগিতাদেশের পর সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ধারণা করেছিলাম, চিরাচরিতভাবে আপিল বিভাগ যেটা করেন, উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনেন, তারপর আদেশ দেন। আজ দুদকের আইনজীবী আপিলটি প্লেস করার সঙ্গে সঙ্গে আদালত বললেন আগামী রোববার সিপি ফাইল করেন, সে পর্যন্ত জামিন স্থগিত থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের কোনো বক্তব্য তিনি (প্রধান বিচরিপতি) শুনলেন না। কোনো রকম আইনগতভাবে এই মামলাটি মোকাবেলা করার জন্য ন্যুনতম সুযোগ আমাদের না দিয়ে স্টে অর্ডার পাস করলেন। বিচার বিভাগ ইতোপূর্বে এভাবে কখনও ছিল না।
আমি হ্যাপি-দুদকের আইনজীবী:
খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের পর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেছেন, আজকের আদেশে জন্য আমি হ্যাপি। আগামী রোববারের মধ্যে আদালত আমাদের লিভ টু আপিল করতে বলেছেন। খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আর আজকে দুপুরের মধ্যে যদি আমরা জামিন আদেশের সার্টিফায়েড কপি পেয়ে যাই তাহলে আজ না হলে আগামীকাল দুপুরের মধ্যে লিভ টু আপিল করব বলেও তিনি জানান।
জামিন স্থগিতাদেশ বাতিল চেয়ে শুনানি রোববার:
খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে দেয়া আপিল বিভাগের আদেশ বাতিল গতকাল চেয়ে চেম্বার বিচারপতির বেঞ্চে আবেদন করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আগামী বোববার এর শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছে আদালত। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আবেদন করলে এর ওপর শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ চেয়ে বিএনপি আইনজীবীদের বিক্ষোভ:
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের পদত্যাগ চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। গতকালই খালেদা জিয়াকে জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে আপিল বিভাগ আদেশ দেয়ার পরই পরই বিক্ষোভ মিছিল করে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করে। শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্য না শুনে স্টে অর্ডার হওয়ার পরই পরই আদালত কক্ষ থেকে লজ্জা লজ্জা বলে বের হয়ে আসেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সেখান থেকে বের হয়েই প্রধান বিচারপতির পদত্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের ¯েøাাগান দিতে থাকেন তারা। এরপর সমিতির সভাপতির রুমের সামনে থেকে শুরু করেন বিক্ষোভ বের করেন। মিছিলটি সমিতির বিভিন্ন ভবনের সামনে প্রদক্ষিণ করে। এসময় তাদের ¯েøাগানের মধ্যে ছিল, আইনজীবীদের দাবি এক, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ’ এক দফা এক দাবি প্রধান বিচারপতির পদত্যা চাই। খালেদা জিয়া জেলে কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাইসহ বিভিণœ ¯েøাগান দিতে থাকেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিনএনপি চেয়ারাপারসনের উপদেস্টা অ্যাড. তৈমুর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে প্রায় ৪০/৫০ আইনজীবী ফের বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে আইনজীবী সমিতির ভবন প্রাঙ্গণে নিজ তলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এসময়ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন ¯েøাগান দিতে থাকেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।