পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানব-মৌলিক অধিকার নেই। আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন ও বন্ধুহীন করে ফেলা হয়েছে। শাসকেরা তাদের গদি রক্ষায় বন্ধুত্বের বদলে গোলামির পথ বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান ক্ষমতাসীন দলের হাতেই। সংঘাতের পথ ছেড়ে সংলাপে বসার জন্য শাসক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
একই সাথে ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষায়, জুলুমের অবসানকল্পে আলেমসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ইসলামী ঐক্যজোটের এক সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের জাতীয় সম্মেলন হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
গত ৭ জানুয়ারি আব্দুুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট জাতীয় সম্মেলন করে ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলে মাওলানা আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে একটি অংশ জোটের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
২০ দলীয় জোট প্রধান ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সংকট এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। বল এখন শাসক দলের কোর্টে। তারা (আওয়ামী লীগ) সংঘাতের পথ ছেড়ে সংলাপের পথে সমস্যার সমাধান করবে বলে আমি আশা করি।
খালেদা জিয়া দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। জনগণের সরকার নেই। সুশাসন নেই। সবখানে নৈরাজ্য। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। শুধু তাই নয়, সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, নারীর সম্ভ্রম হরণ, দুর্নীতি, লুণ্ঠন অতীতের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। সাধারণ মানুষ সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে রয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জনগণের অর্থসম্পদ নিরাপদ নয়। ডিজিটাল ডাকাতি করে সে অর্থ লুটে নিয়ে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হচ্ছে।
জাতীয় স্বার্থরক্ষায় ক্ষমতাসীনদের কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন ও বন্ধুহীন করে ফেলা হয়েছে। বন্ধুত্বের বদলে গোলামির পথ বেছে নিয়ে শাসকেরা তাদের গদি রক্ষায় ব্যস্ত।
দেশের আলেম সম্প্রদায় বর্তমান সরকার আমলে নানাভাবে ‘নিগৃহীত ও হেনস্তার’ শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অন্য ধর্মের লোকদেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা অন্য ধর্মের নাগরিকদের ভোটই শুধু চায় না, তাদের সহায়সম্পদও ক্ষমতাসীনরা দখল করে নিচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়।
দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ‘ভিশন-২০৩০’ ধারণার প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সমস্যা ও সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একটা দিকনির্দেশনা আমরা তুলে ধরেছি। আমরা মনে করি, যে অসুস্থ রাজনৈতিক ধারা দেশে চালু হয়েছে, সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখাতে হবে নতুন সম্ভাবনার পথ।
জাতির বিরাজমান সমস্যাবলির সমাধানের জন্য সুচিন্তিত ও বাস্তবমুখী কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা একটি ভিশন ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কাজ করছি। আলেম সম্প্রদায়সহ সকল স্তরের মানুষের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা আমরা সেই কর্মসূচিতে রাখছি।
ইসলাম শান্তির ধর্ম অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ইসলামে হিংসা, হানাহানি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম শান্তির পক্ষে, মজলুমের পক্ষে, ইনসাফের পক্ষে, সুশাসনের পক্ষে, মৈত্রীর পক্ষে, সাম্যের পক্ষে, মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তার পক্ষে। মুষ্টিমেয় কিছু বিপথগামী লোক সন্ত্রাস, প্রতিহিংসা ও নিষ্ঠুরতার পথ বেছে নিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।
দেশের জঙ্গিবাদ দমনে তার সরকারের সময়ে কঠোর হাতে দমনের কথাও তুলে ধরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এদেশে হাজী শরিয়তউল্লাহ, শহীদ তিতুমীর ও ফকির মজনুর শাহরা ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামে আলেম সমাজ পিছিয়ে ছিল না। স্বাধীন দেশের মানুষের অধিকার ও ইনসাফ কায়েমের জন্য আপনারা অকাতরে জীবন দিতেও পিছপা হননি।
আগামীতেও আপনাদের সে ভূমিকা দেশবাসী আশা করে। অত্যাচারী শাসকের সামনে স্পষ্ট কথা বলাও উত্তম জিহাদ। দেশে শান্তি, সুশাসন, গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে, দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায়, আলেমসহ সকলকে সম্মান রক্ষায়, জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষায়, জুলুমের অবসানকল্পে আপনারা ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হোন।
রাজধানীতে আলেম-মাশায়েখ ও মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রক্ত ঝরেছে উল্লেখ করে ‘ভয়, লোভ-লালসা’র মধ্যে আদর্শে সমুন্নত থাকার জন্য তাদের প্রতি খালেদা জিয়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, আগামীতে আরো শক্তি সঞ্চয় করে সত্য ও ন্যায়ের পথে, দেশ রক্ষা ও গণতন্ত্রের পথে আমরা সকলে একসঙ্গে এগিয়ে যাবÑএই কামনা করি।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিবের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা নুর হোসেন কাশেমী, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুুল করিম খান, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাওলানা শওকত আমিন, নেজামী ইসলাম পার্টির মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টির সেলিম মাস্টার, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ড. ওসমান ওসমান ফারুক, আব্দুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ২০ দলীয় জোটের খোন্দকার লুৎফর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের আয়োজক ইসলামী ঐক্যজোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাওলানা শওকত আমীন (পীর সাহেব বি-বাড়ীয়া), মোদাব্বির রহমান মোল্লা প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।