Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবশেষে অধিগ্রহণ হচ্ছে বগুড়ার নবাব বাড়ি!

প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু ,বগুড়া থেকে : বগুড়ায় করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে সাড়ে ৯ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত নওয়াববাড়িটি এখনও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, নওয়াব বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী ও অবিভক্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর স্মৃতি বিজড়িত বগুড়ার ‘নওয়াববাড়ি’।ঐতিহ্যগত ভাবে ঢাকার আহসান মঞ্জিল’র সাথেই যার তুলনা চলে। অবশেষে সেই নওয়াববাড়িটি আহসান মঞ্জিল ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের বাড়ির মত সরকার অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করছে।
জানা গেছে, ৩ বিঘা জমিতে নওয়াববাড়ির মূলভবনটি। বাকি ৬ বিঘা জায়গা আলতাফ আলী সুপার মার্কেট নির্মিত করা হয়েছিল। পরে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করায় তার নাম পাল্টে হয়েছে শরীফ সুপার মার্কেট। উত্তর পাশে যেখানে ছিল একসময় ঐতিহ্যবাহি চম্পক গার্ডেন রেস্তোরাঁ। সেই রেস্তোরাকে ঘিরে প্রতি সপ্তাহে হত সঙ্গীতানুষ্ঠান। সেখানে শোভা পেত ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রজাতির দামী ফুল গাছ। সেই চম্পক গার্ডেন রেস্তোরাঁ ওয়াক্ফ সম্পত্তি হওয়া স্বত্ত্বেও বিক্রি করা হয়েছে। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে টিএমএসএস মহিলা মার্কেট ও আল আমিন কমপ্লেক্স নামের পৃথক পৃথক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশের দু’ব্যক্তিকে ‘নাইট’ পদবীতে ভুষিত করেন। তার মধ্যে নওয়াব বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী। অন্য একজন হলেন নোবেল বিজয়ী কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর থেকে অনেকটাই নওয়াববাড়ির অবকাঠামো মলিন হতে থাকে।
এখন নওয়াববাড়ির নাম দি প্যালেস মিউজিয়াম এন্ড অ্যামিউন্সম্যান্ট পার্ক। মূল ভবনটিকে ঘিরে রয়েছে ‘জাদুঘর’। সেখানে শোভা পাচ্ছে নওয়াবী আমলে ইংরেজদের সাথে তাদের বৈঠক, খাজনা আদায়, রিডিং রুম, জলসা ঘর, নওয়াবী আমলে ব্যবহৃত বন্দুক, ঢাল-তলোয়ার, বিভিন্ন ব্যবহৃত তৈজসপত্র, বিলিয়াড রুম, দুর্লভ পুস্তকসহ সেই আমলের আরও অনেক ঐতিহ্য-ইতিহাস সম্বলিত জিনিসপত্র। এই জাদুঘর দেখতে আসেন বৃটিশসহ বিভিন্ন দুতাবাসের রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পর্যটকরা। এমনকি কারুপল্লী দেখতে এসেছিলেন বিগত সময়ের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। এই বাড়িতেই বিভিন্ন সময় পদার্পণ করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত নেতৃবৃন্দরা। তাদের মধ্যে হোসেন শহীদ সোরওয়ার্দী, চিত্ত রঞ্জন দাশসহ আরও অনেকে।
নওয়াববাড়িটিকে ঘিরে মোহাম্মদ আলীর এক বৈমাত্রীয় ভাই ওমর আলী ও তাঁর ছেলে হামেদ আলী অনেক নাটক করে আস্তে আস্তে মুল বাড়িটিসহ মোহাম্মদ আলীর কবর বিক্রির পাঁয়তারা করেছিল। সবশেষে বগুড়ায় এসেছিল মোহাম্মদ আলীর ছোট ছেলে মাহমুদ আলী। তিনি এক প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা দিয়ে গেছেন যেটুকু জায়গা বিক্রি হয়েছে হোক , আর যেন বিক্রি না হয়। এই বাড়িটি শুধু বগুড়ার নয় ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য হিসেবে সরকার যদি সংরক্ষণ করে তাহলে আমার ও আমার বোন মাহমুদা আলীর কোন আপত্তি নেই। প্রেস কনফারেন্স শেষে যখন তারা বগুড়া জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের কাছে যান তখন জেলা প্রশাসক তাদের জানান, “ইতিমধ্যেই আহসান মঞ্জিলের মত নওয়াববাড়িটি সংরক্ষণের জন্য সরকারি পর্যায়ে কাজ চলছে। অচিরেই এটা সরকার অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণ করবে।” ইনকিলাবের পক্ষ থেকে এব্যাপারে প্রশাসনের উচ্চমহলে যোগাযোগ করে জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অবশেষে অধিগ্রহণ হচ্ছে বগুড়ার নবাব বাড়ি!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ