পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতির মামলায় দন্ড নিয়ে কারাগারে এক মাস পার করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কারাবাসের একমাস পূর্ণ হয় গত বুধবার। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার ৫বছরের কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালত। ওই দিন বিকালেই তাকে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। অন্যদিকে গতকাল কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন তার আইনজীবীরা। এসময় বেগম খালেদা জিয়া আইনজীবীদের কাছে তার জামিনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ের ১১ দিন পর হাই কোর্টে আপিল করে জামিনের প্রত্যাশা করলেও সেই অপেক্ষা এখনও কাটেনি তার। আগামী রোববার এই বিষয়ে আদেশ আসার কথা রয়েছে। এই এক মাস পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি খালেদা জিয়া বই ও পত্রিকা পড়ে সময় কাটাচ্ছেন বলে তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। তাছাড়া তিনি দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ পড়েও সময় কাটান। তার সঙ্গে দেখা করে এসে বিএনপি নেতারা বলেছেন, বন্দি হলেও তিনি মনোবল হারাননি।
সূত্র মতে, জেল সুপারের কক্ষটিকে সংস্কারের পর স্পেশাল জেল ঘোষণা করে সেখানেই প্রথম দিন রাখা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। পরে দোতলার একটি কক্ষে স্থানান্তর করা হয় তাকে, যা আগে কারাগারে ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ হিসেবে ব্যবহার হত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে প্রথমে বিশেষ বন্দির মর্যাদা না দেয়ায় বিএনপি নেতারা শোরগোল তুলেছিলেন। পরে আইনজীবীদের আবেদনে বিশেষ বন্দির মর্যাদা পান তিনি। ব্যক্তিগত গৃহকর্মীকেও রাখতে দেয়া হয় তাকে, যা নজিরবিহীন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কক্ষে একটি টেলিভিশনও রয়েছে।
কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করে আসা সেজ বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর সাংবাদিকদের জানান, টেলিভিশন দেখছেন না খালেদা জিয়া। তার বেশিরভাগ সময় কাটছে পত্রিকা ও বই পড়ে। গত বুধবার কারাগারে দেখা করে আসা বিএনপি নেতারাও জানান, পত্রিকা পড়ে দলের কর্মসূচির খবরাখবর রাখছেন দলীয় চেয়ারপারসন। ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে নানা রকম ওষুধ খেতে হয় নিয়মিত। খাবারও বেছে খেতে হয় তাকে। স্বজনরা জানান, খালেদা জিয়াকে কারাগারের খাবারই দেয়া হচ্ছে। তবে তারা দেখা করার সময় খাবার নিয়ে যান। সেটা কারা কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করে তাকে দেয়। তার সাথে দেখা করতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা কয়েকবার গেলেও কারাফটক থেকে তাদের ফেরত আসতে হয়। কারা কর্মকর্তারা তাদের বলেন, প্রয়োজন হলে তারাই খবর দেবেন। খালেদা জিয়া কেমন আছেন- জানতে চাইলে ফখরুল ইসলাম গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, দেশনেত্রীর মনোবল অত্যন্ত উঁচু। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করছেন। তিনি দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে সুনশান তার গুলশানের বাসা ফিরোজা। বাসায় বিএনপি নেতারা কিংবা খালেদা জিয়ার স্বজনরা কেউ যাচ্ছেন না। নিরাপত্তা প্রহরীরা ও গৃহকর্মীরা সবাই বাসাটিতে আছেন। এক নিরাপত্তাকর্মী সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাডাম নেই বাড়িটা একেবারেই খালি। আমরা প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি, কবে ম্যাডাম আসবে। বাসা প্রতিদিনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখি। ম্যাডামের লাগানো ফুলের বাগান রয়েছে। সেগুলোতে আমরা প্রতিদিনই পানি দিই। কারা সূত্র আরও জানায়, দুজন ডেপুটি জেলার ও চারজন কারারক্ষী খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। একজন চিকিৎসক ও একজন ফার্মাসিস্ট তার নিয়মিত দেখাশোনা করছেন। কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আদালতের নির্দেশে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা অবস্থান করছেন।
সূত্র মতে, শুরুতে তার একার জন্যই রান্না করা হতো কারাগারে। ডিভিশন পাওয়ার পর তার পছন্দের খাবার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কর্মরতদের তিনি জানিয়েছেন, কারা কর্তৃপক্ষ নিয়মানুসারে তাকে যা খেতে দেবেন তিনি তাই খাবেন। এর বাইরে তার কোনো আবদার নেই। ওই সময়ে তিনি বলেন, অফিসারদের বলবেন, আমার একার জন্য রান্না করার দরকার নেই। স্টাফদের জন্য যা রান্না করা হয় আমি তাই খেতে পারবো। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এই কথা পৌঁছে যায় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। তারপর থেকে একই হাড়িতে রান্না করা হচ্ছে খালেদা জিয়া ও ডিপ্লোমা নার্স এবং কমর্রত প্রহরীদের খাবার। তবে তার পছন্দ অনুসারে কিছুদিন পরপর বেশ কয়েক বার শিং মাছ রান্না করা হয়েছে। রান্না করা হয় গরুর মাংস, ডাল ও সবজি। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে কেরানীগঞ্জ থেকে মাছ, মাংস, সবজিসহ প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে দিয়ে যান সেখানকার দায়িত্বরত প্রহরী। রান্নার দায়িত্বে রয়েছেন বাবুর্চি ইদ্রিছ। সূত্রমতে, কয়েক দিন আগে রান্না-বান্নার জন্য ইদ্রিছকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। রান্না করা খাবার যথাসময়ে খালেদা জিয়ার কক্ষে নিয়ে যান নারী প্রহরী। সকাল ও রাতের খাবার প্রায়ই দেরি করে খান খালেদা জিয়া। ফাতেমা ও ডিপ্লোমা নার্স ও কারারক্ষী নারীদের তিনি বলেছেন, তোমরা খেয়ে নিও, আমার জন্য অপেক্ষা করো না। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একথা বললেও তার জন্য অপেক্ষা করেন অন্যরা। সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা হাতে নেন তিনি। তারপর ফ্রেশ হন। বিকালে বারান্দায় যান। ওই কক্ষে একটি বারান্দা। যেখান থেকে কারাগারের প্রাক্তন মহিলা ওয়ার্ড ছাড়া বাইরের কিছুই দেখা যায় না। দীর্ঘ সময় ওই বারান্দায় অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। রাতে বিছানায় যান দেরিতে। কমর্রতদের জীবন-যাপনের খোঁজখবর নেন। কখনো কখনো দেশের সা¤প্রতিক বিষয়ে কথা বলেন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, তিনি কথা বলেন খুব কম। শুয়ে, বসে, পত্রিকা পড়েই সময় কাটান। সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া কাপড়, তোয়ালে ও বিছানার চাদর ব্যবহার করছেন খালেদা জিয়া। কারাগারে নিয়মিত বসেন একজন ডাক্তার। সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। আবার বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারাগারের অফিস কক্ষে বসেন তিনি। এরমধ্যেই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসক।
গতকাল কারাগার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নাজিমউদ্দিন রোডের শাহী মসজিদ মোড় থেকে কারাফটক হয়ে চকবাজার সিএনজি-লেগুনা স্ট্যান্ড পর্যন্ত অনেক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যারিকেড। ওই এলাকার বাসিন্দা ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ওই পথে যেতে দেয়া হচ্ছে না। ওই সড়কে গাড়ি চলাচলও বন্ধ রয়েছে। রাস্তা থেকে শুরু করে আশপাশের বাড়িগুলোর ছাদেও অবস্থান করছে পুলিশ। সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন গোয়েন্দারা। কারাফটকের সামনে সশস্ত্র চার-পাঁচ জন্য কারারক্ষী। প্রায় সাঁইত্রিশ একরের বিশাল কারাগারের দ্বিতীয় তলার কক্ষে বন্দি খালেদা জিয়া। প্রতিদিনই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নানা ফলমূল নিয়ে ভিড় করছেন কারাফটকে। সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করছেন কারা অধিদপ্তরের আইজি প্রিজনের কাছে।
জামিনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন খালেদা জিয়া
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা কয়েকজন আইনজীবী মিলে তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করেছি। সেখানে আমরা প্রায় একঘণ্টা পাঁচ মিনিটের মতো ছিলাম। সাক্ষাৎকালে তিনি আমাদের কাছে জামিনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা তাকে সব জানিয়েছি। তিনি বলেন, তাকে বলেছি, আপনার জামিনের জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম। এরপর আদালত জানিয়েছেন, নথি আসার পর শুনানি নিয়ে জামিনের বিষয়ে আদেশ দেবেন। কিন্তু গত বুধবার (৭ মার্চ) নথি আসার সেই ১৫ দিন সময় পার হয়ে গেছে। তাই গতকাল আমরা মেনশন ¯িøপ দিয়ে নথি আসার সময় শেষ হওয়ার বিষয়ে আদালতকে অবহিত করি। এ পর্যায়ে আদালত আগামী রোববার জামিন বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন। খালেদা জিয়াকে তার এই আইনজীবী আরও বলেন, আপনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এছাড়া জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে আদালতের এখতিয়ারও রয়েছে। জামিনের জন্য আমরা অনেকগুলো গ্রাউন্ড দিয়েছি। তাই সেসব গ্রাউন্ড বিবেচনা করে আদালত রোববার আপনাকে জামিন দেবে বলেও আমরা বিশ্বাস করি। খালেদা জিয়ার সঙ্গে আর কোনও বিষয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন বলেন, তার সঙ্গে শুধু মামলার আইনগত দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। এর বেশি কোনও কথা হয়নি। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমরা যখন তার সঙ্গে দেখা করি, তখন তাকে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। তিনি আমাদের বলেছেন আমি টাকা আত্মসাত করলাম না। টাকা লেনদেনের কোনও কাগজে স্বাক্ষর করলাম না, অথচ আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হলো। জয়নুল আবেদীন ও মাহবুবউদ্দিন খোকন ছাড়াও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারের ভেতরে গিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, আবদুর রেজাক খান ও সানাউল্লাহ মিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।