পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আনোয়ারুল হক আনোয়ার ঃ মেঘনা উপকূলবতী তৎসহ অপার সম্ভাবনাময় নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা সমন্বয়ে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণা এখন সময়ের দাবি। বিগত দেড় দশক যাবৎ ৩টি জেলার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার দাবিতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। ভৌগোলিক অবস্থান, ৩টি জেলার আয়তন, জনসংখ্যা, মেঘনার বুকচিরে প্রতি বছর বিশাল ভূখ-ের সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নিরিখে নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার যৌক্তিকতা আরো বেগবান হচ্ছে। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার দেশে একাধিক বিভাগ ঘোষণা করেন এবং আরো একাধিক বিভাগ ঘোষণার সিদ্বান্ত নিয়েছে। সে নিরিখে নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবি ৭৫ লাখ অধিবাসীর।
উল্লেখ্য, সরকারী হিসেবে নোয়াখালীর বর্তমান আয়তন ৪২০২ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ২৫১ জন। এর মধ্যে হাতিয়া উপজেলার আয়তন ২১শ’ বর্গকিলোমিটার উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে হাতিয়া উপজেলার বর্তমান আয়তন ৪৯০০ বর্গকিলোমিটার। সে হিসেবে নোয়াখালী জেলার আয়তন হবে ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। অর্থাৎ হাতিয়া উপজেলার আয়তন দুইটি জেলার আয়তনের সমান। সব মিলিয়ে ৩টি জেলার আয়তন ৯ হাজার ৩৮৩ বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলার আয়তন ১ হাজার ৪৫৫ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ১৭ লাখ ২৯ হাজার ১৮৮ জন এবং ফেনী জেলার আয়তন ৯২৮ বর্গকিলোমিটার জনসংখ্যা ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৩৮ জন উল্লেখ করা হলেও বর্তমানে ৩টি জেলার জনসংখ্যা ৭৫ লাখের অধিক বলে বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে। অপরদিকে নোয়াখালীর হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণে প্রতি বছর বিশাল চর জাগছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে জেগে ওঠা বিশাল ভূমি আগামী দুই দশকে দেশের মানচিত্র পাল্টে দিতে যথেষ্ট।
নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাথে বৃহত্তর নোয়াখালীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজতর হচ্ছে। অপরদিকে সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরালগঞ্জ সড়ক আগামী ২০১৮ সালে চালু হলে ২০টি জেলার অন্তত ৪ কোটি জনগোষ্ঠীর সড়ক যোগাযোগ আরো সহজতর ও নিরাপদ হবে। নোয়াখালীর জেলা সদরের দক্ষিণে অপার সম্ভাবনাময় বিশাল এলাকা এখন আলোচনার বিষয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত অঞ্চলটিতে কৃষি, শিল্প, মৎস্য ও পর্যটন শিল্পে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণে হাতিয়া উপজেলার চতুর্দিকে মেঘনার বুকচিরে প্রতি বছর যে পরিমাণ ভূমি জেগে উঠেছে তাতে দুটি জেলার আয়তনের সমান হবে। জেলা শহরের দক্ষিণে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সূবর্ণচরে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থান নির্বাচনের কাজ চলছে। এছাড়া কৃষি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ২টিসহ আরো কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে মাঝারি ও বৃহৎ আকারের ৩০টি মৎস্য খামার রয়েছে। নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে সূবর্ণচরের দক্ষিণ চরমজিদ পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ হলে যোগাযোগ সুবিধা আরো সহজতর হবে। হাতিয়া উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নে সেনা বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। বর্তমানে চানন্দী ইউনিয়ন একটি উপজেলার আয়তনের সমান। চানন্দী ইউনিয়নের পূর্ব ও দক্ষিণ পার্শ্বে প্রতি বছর গড়ে ২০/৩০ বর্গকিলোমিটার ভূমি জাগছে। মেঘনার তীরবর্তী অঞ্চলটিতে একাধিক নৌ-বন্দর স্থাপনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। নোয়াখালীতে মেডিকেল কলেজ, পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্বাস্থ্য সহকারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বৃহদাকারের একটি পাটকল, ৩টি বৃহৎ বিস্কুট ফ্যাক্টরী, ওষুধ ও সফট ড্রিংকস শিল্প প্রতিষ্ঠান, ২টি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা ছাড়াও চৌমুহনী ও সোনাপুরে অবস্থিত বিসিক শিল্প নগরীতে বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান ব্যবসা-বাণিজ্য নগরী চৌমুহনী বাজারের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিন শত কোটি টাকার লেনদেন হয় ঐতিহ্যবাহী বাজারটিতে। শিক্ষা, সাংস্কৃতি, শিল্প, ঐতিহ্য সব দিকে এগিয়ে আছে বৃহত্তর নোয়াখালীবাসী।
বন্দর নগরী চট্রগ্রামের সাথে দেশের অবশিষ্ট অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের সেতুবন্ধন ফেনী জেলা। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা হচ্ছে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়ী অঞ্চল। সোনাগাজীতে রয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, মুহুরী প্রজেক্ট, বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প, সোনাপুর-জোরালগঞ্জ সড়ক সংযোগস্থল। এছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিমানবন্দর নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সোনাগাজীর দক্ষিণে বিশাল চর জেগে উঠায় জেলাবাসীর মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তেমনিভাবে ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মীপুর জেলার মজু চৌধুরীর ঘাট এবং রায়পুর উপজেলার মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৫টি জেলার যোগাযোগ বজায় রয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা ধান, পাট, সুপারী, নারিকেল ও মৎস্য সম্পদের জন্য বিখ্যাত। বৃহত্তর নোয়াখালীর অনেক কৃতী সন্তান শিল্পায়নের ক্ষেত্রে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তেমনিভাবে এতদ্বঞ্চলের ১৫ লক্ষাধিক অধিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতেও বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর গুরুত্ব অপরিসীম। এ যাবৎ বিভিন্ন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছে এখানকার অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদগণ। জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বৃহত্তর নোয়াখালীর অনেক গুণীজনের অবদান দেশবাসী কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে।
নোয়াখালী বিভাগ প্রতিষ্ঠানের দাবি দীর্ঘদিনের। বর্তমান সরকার দেশে নতুন একাধিক বিভাগ ঘোষণার প্রেক্ষিতে এ দাবি আরো বেগবান হচ্ছে। নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার দাবিতে গত ৮ নভেম্বর নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটারের মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং নোয়াখালী সদর-সূবর্ণচর আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী চৌধুরীর সভাপতিত্বে মাইজদী টাউন হল মোড় সড়কে অনুষ্ঠিত বিশাল সভায় সকল রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। একই সময় লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা এবং উপজেলাসমূহে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামেও পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মূলতঃ নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর অধিবাসী একাট্রা। নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি ইনকিলাবকে জানান, অপার সম্ভাবনাময় বৃহত্তর নোয়াখালীর সার্বিক উন্নয়নে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণা এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ। নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণা করা হলে ৩টি জেলার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে। এতে করে এতদ্বঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। তাই বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার জন্য আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।