Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আজ খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করবেন বিএনপি নেতারা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৮, ৯:৩৪ এএম

দীর্ঘ ২৮ দিন ধরে কারাবাসে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা। আজ বিকেল ৩টায় নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে দলের নেতারা দেখা করতে যাবেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার। তিনি জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান, মীর্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে যাবেন। খালেদা জিয়ার সাথে দলের নেতাদের এই সাক্ষাতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এই সাক্ষাতের পর বিএনপির নতুন কর্মসূচি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নীতিনির্ধারনী অনেক কিছুই আসবে।
দীর্ঘ এই কারাবাসের সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যরা কয়েকদফা দেখা করেছেন। দেখা করেছেন দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও আইনজীবী। তবে ফলমূলসহ বেগম জিয়াকে দেখার জন্য কারাগারে যেতে চাইলেও অনেককে ফেরত পাঠানো হয়। ফেরত দেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষক, চিকিৎসক, পেশাজীবী ও বিভিন্ন প্রতিনিধি দলকেও। এই দীর্ঘ সময়ে পরিবার ও আইনজীবীরা দেখা করলেও দলের কোন নেতাই এখনো বিএনপি প্রধানের সাথে দেখা করতে পারেননি। কারাগারে যাওয়ার আগে দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করে দলকে নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেই নির্দেশনা মেনেই এখনো আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করছেন নেতারা। খালেদা জিয়া ২৮দিন কারাগারে থাকার পর বিএনপি প্রধানের সাথে সাক্ষাত করার জন্য আবেদন করে বিএনপি। দলের সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে সাক্ষাত করার জন্য গত রোববার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কারা মহাপরিদর্শককে উদ্ধৃতি করে এক চিঠিতে বিএনপিকে জানানো হয়েছে কারাবিধি অনুযায়ী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কারাবাসে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়। প্রথমে দলের ৫জন সিনিয়র নেতার জন্য দেখা করার অনুমতি চাওয়া হলেও পরবর্তীতে বিএনপি মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির ৮ সদস্য এবং খালেদা জিয়ার একান্ত সচিবসহ ১০জনকে অনুমতি দেয়া হয়। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিএনপির সিনিয়র ৫ জন নেতা কারাগারে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার অনুমতির জন্য আইজি প্রিজনের কাছে আবেদন করেন। তবে সিনিয়র ৫ নেতার কোনো নাম সেই আবেদনে দেয়া হয়নি।
এর আগে খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তার সাথে দেখা পরিবারের সদস্যরা কয়েকদফা সাক্ষাত করেছেন। গত ১৫ ফেব্রæয়ারি নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন খালেদা জিয়ার বোনের ছেলে শাহরিয়ার আক্তার ডন, সাজিদ ইসলাম ও ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর শ্বাশুরি মুখলেমা রাজা সহ আরো একজন। তারা কিছু শুকনা খাবার ও ফলমূল সঙ্গে নিয়ে কারাগারে ঢুকেন। কারা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে অনুমতি দিলে বেগম জিয়ার সাথে দেখা করেন। পরিবারের সদস্যরা কারাগারে বেগম জিয়ার সাথে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় কাটান। এসময় তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ওইদিনই সকাল ১১ টার দিকে সাবেক এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ কিছু ফলমূল ও শুকনা খাবার নিয়ে বেগম জিয়ার সাথে দেখা করতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় তারা ফিরে যান। কারাফটকের কিছুদূর আগেই পুলিশ তাদেরকে আটকে দেয়। এসময় মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, নিলোফার চৌধুরী মনি, হেলেন জেরিন খান, রাশেদা বেগম হীরা, বিথিকা বিনতে হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৩ ফেব্রæয়ারি দুপুরে খালেদা জিয়াকে কারাগারে দেখা করতে যান ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান সহ কয়েকজন। কিন্তু অনুমতি না থাকায় তারাও খালেদা জিয়ার সাক্ষাত পাননি। ১০ ফেব্রæয়ারি খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে দেখা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী ও জয়নাল আবেদিন। গত রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকরাও খালেদা জিয়াকে দেখতে কারাগারে যান। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও তাতে সাড়া না পেয়ে তাদেরকে ফিরে যেতে হয়েছে।
সর্বশেষ গত সোমবার বিকেলে বেগম জিয়ার ভাবী কানিজ ফাতেমা, ভাই শামীম এস্কান্দার ও তার ছেলে সহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য খালেদা জিয়ার সাক্ষাত করেছেন। একইদিন দুপুরে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে কারাগারে যেতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে অনুমতি দেয়নি। এরপর সেখান থেকে ফিরে তারা সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও খালেদা জিয়াকে দেখতে কারাগারে যেতে চাইলে অনুমতি দেয়া হয়নি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল­াহ মিয়া বলেন, আমরা দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সিনিয়র আইনজীবী ও নেতৃবৃন্দ দেখা করার জন্য গত রোববার কারা মহাপরিদর্শকের কাছে আবেদন করেছি। তারা আমাদের আবেদন গ্রহণ করেছেন তবে দেখা করার বিষয়ে কিছুই বলেননি। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, প্রায় একমাস ধরে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। অন্যায়ভাবে তাকে বন্দি রাখা হয়েছে। তবে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কারামুক্ত করা হবে ইনশাআল্লাহ।
গত ৮ ফেব্রæয়ারি ঢাকার বিশেষ আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দিলে সেদিনই তিনি কারাবন্দী হন। তার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এসব কর্মসূচির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ এবং প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এর বাইরে বাংলাদেশে অংশগ্রহণম‚লক নির্বাচন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ ও ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার ঘটনাটিও অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া কারাবন্দী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১২ মার্চ ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও ১০ মার্চ খুলনায় জনসভার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও সমাবেশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ