Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পেয়ারে পাকিস্তানের প্রেম থেকেই পাটের প্রতি বিএনপির ক্ষোভ

জাতীয় পাট দিবসে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ৭ মার্চ, ২০১৮

পুরো পাটখাতের যান্ত্রিকীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে দেশের সরকারি খাতের পাটকলগুলোকে লাভজনক করে তুলতে আন্তরিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটি বড় সমস্যা রয়েছে যন্ত্রপাতিগুলো অত্যন্ত পুরনো। কাজেই এই মেশিনারিজগুলো সব বদলাতে হবে। নতুন মেশিনারিজের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা সবরকম চেষ্টা করছি। আমরা পাটকে আরো আধুনিকিকরণের মাধ্যমে পাট উৎপাদন, পাট সংগ্রহ, পাট সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
বিএনপির শাসনামলে দেশের পাটকলগুলো একের পর এক বন্ধ করে দেয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট শিল্পটাকে বিএনপি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। এর ওপর ক্ষোভ তো পাকিস্তানীদের ছিল। বিএনপিদের ক্ষোভ আসল কেন, জামায়াতীদের ক্ষোভ আসল কেন? আপনারা বুঝতেই পারছেন কেন। তাদের হৃদয়ে আছে পেয়ারে পাকিস্তান, বাংলাদেশ নাই। পেয়ারে পাকিস্তান করতে করতে তারা শেষ। পেয়ারা পাকিস্তান গড়ে উঠুক, আর বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক, এটাই তারা চায়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পাট দিবসের অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে পাটের আঁশের শাড়ি, সান্ডেল এমনকি হাতব্যাগ নিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, মঞ্চে থাকা সবাই পাটের বেøজার পড়েই এসেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে পাটের ভূমিকা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের বৈদেশিক মূদ্রার দুই তৃতীয়াংশই আসত পাট থেকে। কিন্তু এই টাকায় পশ্চিম পাকিস্তানীরা তাদের উন্নতি করেছে। তিনবার রাজধানী পাল্টেছে। এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের পরে আসে ৭০ এর নির্বাচন। আর এই পথ ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর পাটের উন্নয়নে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা জানান, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পাট নিয়ে নানা সংস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার পাটকলগুলো বন্ধ করে শ্রমিকদেরকে টাকা দিয়ে বিদায় করে দিতে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী ৯৩ সাল থেকে পাটকলগুলো একে এক বন্ধ করবে। এর ফলাফলটা ছিল আড়াই লক্ষাধিক বেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। আর একই মেমোয়ারে ভারতের সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চুক্তি হলো, তারা টাকা পেল ভারতে পাটকল তৈরি করবে আর এই আড়াই লক্ষ বেল পাট রপ্তানির সুযোগ তারা পাবে।
তিনি বলেন, আপনারা একটু চিন্তা করেন, বাংলাদেশে পাটকল বন্ধ করবে, সে শর্তে টাকা নিল বিএনপি সরকার। আর ভারতকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক টাকা দিল পাটকল নির্মাণ করার। আর যে বাজারটা ছিল বাংলাদেশের হাতে, সে বাজারটা সম্পূর্ণ চলে গেল ভারতের হাতে। আমরা তখন পার্লামেন্টে বিরোধীদলে ছিলাম। তখন প্রতিবাদ করেছিলাম, বলেছিলাম আমাদের দেশে পাটকল কেন বন্ধ হবে। আমরা তো পাট উৎপাদনকারী দেশ। আবার এত হাজার হাজার কৃষক, তাদের কেন বঞ্চিত করা হবে, হাজার হাজার শ্রমিকের কেন চাকরি যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে আমি যখন সরকারে এলাম, তখন আমরা আবার পাটকলগুলো চালু করার ব্যবস্থা নিলাম। এমনকি আদমজী জুট মিলে কত জমি আছে, সেটা আমরা বের করলাম। পাটের ওপর গবেষণাকে আমরা গুরুত্ব দিলাম। গবেষণা করে সে সময় ১১টা পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল আদমজীটাকে আমরা পাট শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তুলে ছোট ছোট প্লট করে ব্যক্তিখাতকে দেবো, বিভিন্ন পণ্যে তারা উৎপাদন করবে। তিনি বলেন, বিএনপি ২০০১ সালে যখনই সরকারে আসল, তারা আজমজী জুটমিল বন্ধ করে দিল। সেখানে ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করত। আর ওই জুটমিলকে ঘিরে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছিল। তারা সেটা বন্ধ করে দিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা যখনই ক্ষমতায় এসেছে যুদ্ধাপরাধীদের হাতেই তো পতাকা তুলে দিয়েছে। তাদের মন্ত্রী বানিয়েছে। শিল্প মন্ত্রী বানিয়েছে জামায়াত নেতাকে। একবার শিল্পমন্ত্রী, একবার কৃষি মন্ত্রী। কৃষিও ধ্বংস, শিল্পও ধ্বংস। তারা তো ধ্বংস করবেই। তারা তো এই দেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করেনি। তারা পাকিস্তানীদের পদলেহন করতেই ব্যস্ত ছিল।
শেখ হাসিনা জানান, ২০০৯ সালে তিনি সরকারে আসার পর পাটকলগুলোর তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ মওকুফ করা হয়েছে। পাঁচটি পাটকল চালু হয়েছে। বিশ্বে এক সময় কৃত্রিম তন্তুর চাহিদা বাড়ায় পাটের চাহিদা কমে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে মানুষ পরিবেশ বিষয়ে যখেষ্ট সচেতন, পরিবেশবান্ধব পণ্য তারা পায়। তিনি বলেন, আমরা পাটের ওপর গবেষণার সুযোগ করে দিয়েছি। আমাদের দেশের একজন আমেরিকায় থাকতেন, তিনি সেখানে গবেষণা করতেন। তাকে আমরা নিয়ে এলাম বাংলাদেশে, তাকে গবেষণা করতে দিলাম এবং গবেষণা করে তিনি পাটের জন্ম রহস্য আবিষ্কার করলেন। এই গবেষণার ফলে আমাদের অনেক ধরনের পাট পণ্য উৎপন্ন ও গবেষণা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে বিদেশেও আমরা রপ্তানি শুরু করে দিয়েছি। পাটপণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি কারখানার আধুনিকায়নেও সরকার উদ্যোগী হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা
অনুষ্ঠানে পাট ও পাটপণ্য উৎপাদনে ১১টি শাখায় ১২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং শিশু কিশোর চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছয় জন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মো. ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম।



 

Show all comments
  • নাঈম ৭ মার্চ, ২০১৮, ১১:৫৮ এএম says : 1
    সরকারের উন্নয়নের কথা শুনলে বেশি খুশি হবো।
    Total Reply(0) Reply
  • রশিদ ৭ মার্চ, ২০১৮, ১১:৫৯ এএম says : 1
    পাট শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ