Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

১,৪৮,৩৮১ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন

বরাদ্দের দেড় হাজার কোটি টাকা বেশি চেয়েছে বিদ্যুত বিভাগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কাঁটছাট করা হয়েছে চার হাজার ৯৫০ কোটি টাকা
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে চার হাজার ৯৫০ কোটি টাকা কাঁটছাট করে এক লাখ ৪৮ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আসবে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। বাকি ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা আসবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে। মূল এডিপিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে একটাকাও কমানো হয়নি। অপরদিকে চার হাজার ৯৫০ কোটি টাকা পুরোটাই উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ ফেরত গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। এনইসি বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংশোধিত এডিপিতে যা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বেশি চেয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বাড়তি টাকা চেয়েছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় চেয়েছে ২৬ কোটি টাকা। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় বাড়তি টাকা চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সবার দাবি শুনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেনÑ ‘যার যে দাবি সব মানা হবে। যে সব মন্ত্রণালয়ের বাড়তি টাকার দাবি আছে, তাদেরকে চাহিদা মাফিক বরাদ্দ দিতে পরিকল্পনামন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।’
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, গতবার মূল এডিপিতে যা বরাদ্দ ছিল, সংশোধিত এডিপি তাই রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবছর সরাসরি তা করা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন থেকে এক লাখ ৪৮ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার যে প্রস্তাব এনইসি সভায় উঠানো হয়েছে, তাই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদিও সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, যে সব মন্ত্রণালয়ের বাড়তি চাহিদা আছে, তাদেরকে তা পূরণ করা হবে। কিন্তু সেটা কত হতে পারে, তা তিনি উল্লেখ করেন নি। শুধু জানিয়েছেন, ‘আমি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। হিসাব ভালো বুঝি। কাকে কত টাকা দেব, সেটা আমার কাছে’।
সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুত খাত। এরপরে যথাক্রমে আছে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন শিক্ষা ও ধর্ম খাত। অন্যদিকে সংশোধিত এডিপিতে বেড়েছে প্রকল্প সংখ্যাও। মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৩০৮টি। সংশোধিত এডিপিতে এসে মোট প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৫৮টিতে। ফলে মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প বেড়েছে ৩৫০টি।
প্রধানমন্ত্রীর উধ্বৃতি দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে প্রধানমন্ত্রী একজন পিডিকে (প্রজেক্ট ডিরেক্টর) একটি প্রকল্পে নিয়োগ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এক পিডিকে একাধিক প্রকল্পে না নিয়োগ দিতে বলেছেন। পিডি যাতে প্রকল্প এলাকায় থাকেন, সেটি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে পিডি যাতে ওই বিষয়ে অভিজ্ঞ হন, সেটি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। যদিও আমরা এসব বিষয় পূরণ করতে পারিনি। তবে ভবিষ্যতে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন রাস্তার গুণগত মান বাড়াতে। প্রকল্পে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছেন। আমরা সেগুলো নিশ্চিত করবো। তিনি দাবি করেন, সামষ্টিক অর্থনীতি শক্ত অবস্থানে আছে। যদিও উনারা সেসব ভালো খবর দেখেন না। উনারা বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে, সেটি মন্ত্রী উল্লেখ করেন নি। তিনি বলেন, চলতি অর্থ বছরটি অর্থনীতির জন্য অনেক সুখকর। সর্বত্রই অর্থনীতিতে আজ চাঙ্গা ভাব। সার্বিক বিবেচনায় আমরা প্রত্যাশা করছি আমাদের জিডিপি’তেও প্রবৃদ্ধি গত বছরের চাইতে এ বছর আরো ভালো হবে।
গত বছর আমাদের যে যে খাতগুলি একটু খারাপ অবস্থানে ছিল যেমনÑ রপ্তানি বাণিজ্য, আবাসন খাত, রেমিটেন্স এই সকল খাতগুলি এ বছরে অনেক শক্তিশালী। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতিও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি’র মাধ্যমে আমরা সরকারি বিনিয়োগ করে থাকি। এই এডিপি বাস্তবায়নে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এজেন্সিগুলো আন্তরিকভাবে কাজ করছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ এডিপি আমরা চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। চলতি অর্থ বছরে এডিপি’র বাস্তবায়নের পরিমাণ ৬২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। শতাংশে তা ৩৮ শতাংশ। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর ছিল ৪৫ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। বাকি ৪ মাস এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারলে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত খাতগুলোতে যথাযথ বরাদ্দ প্রদান করলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, হলি আর্টিজান হামলার কারণে অনেকটা সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই বৈদেশিক সহায়তা থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বাদ দিতে হয়েছে। যদি কোন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয় তাহলে সেটি আমি বিবেচনা করে বরাদ্দ দেব। এই দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুত বিভাগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ