পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে ঃ পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা ফরেস্ট ক্যাম্প সংলগ্ন বন থেকে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বগী-শরণখোলা নদী সাঁতরে সোনাতলা গ্রামে চলে আসে। এরপর একই দিন ভোর ৬টা দিকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ’র নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্প সংলগ্ন বন থেকে অপর একটি বাঘ মরা ভোলা নদী সাঁতরে শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে ও ভোরের ঘটনা এ দুটি।
আবার, বাগেরহাটের মংলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বরইতলা গ্রামে সম্প্রতি প্রতি রাতেই বাঘ হানা দিচ্ছে। সর্বশেষ গত ৪ ও ৫ ডিসেম্বর রাতে সুন্দরবনের খাল পেরিয়ে একটি বাঘ লোকালয়ে ঢুকে বসতবাড়িতে হানা দেয়। একজন ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢুকে গোয়ালে থাকা গরু হত্যা করে। বাঘের হামলায় আহত হয় কয়েকটি গরু। এ সময় আশপাশের লোকজন মশাল জ্বালিয়ে জড়ো হয়ে এবং কাঠ-টিন পিটিয়ে শব্দ সৃষ্টি করেও বাঘটি তাড়াতে ব্যর্থ হয়। পরে বনবিভাগ, সিপিপি, টাইগার টিমের সদস্যরা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বাঘটিকে বনে তাড়িয়ে দেয়।
উপরোক্ত দুটি কেস স্ট্যাডিতে সহজেই বোঝা যায়, সুন্দরবনে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার’র খাদ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের অভাব দেখা দিয়েছে। তবুও সুন্দরবনে বাঘের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করতে বনবিভাগের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। এ বিভাগের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ শহরকেন্দ্রিক সভা-সমাবেশ-সেমিনার-র্যালিসহ অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে। অথচ বাঘের টিকে থাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা বিচরণস্থল, খাদ্যের যোগান, মানুষের উপদ্রব আর চোরা শিকার বা গুপ্তহত্যা প্রতিরোধে কার্যত্ব কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ফলে ভয়াবহ অস্তিত্ব সংকটের মধ্য থেকে মুক্তি মিলছে না বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের।
সর্বশেষ চলতি বছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সমাপ্ত জরিপে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বাংলাদেশের সুন্দরবনে। বাঘের অস্তিত্ব সংকটে পড়লেও সুন্দরবন ঘিরে করপোরেট যন্ত্রণাগুলো থামছে না। সুন্দরবনে শেল কোম্পানিকে খননের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে বিপজ্জনক নৌপথ চালু রয়েছে। সুন্দরবনের পাশে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। সুন্দরবনের আশপাশে লাগাতার বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘের আছে। বনবিভাগ, প্রশাসন, রাজনৈতিক খবরদারি সব কিছুর সামনেই চলছে বিচারহীন বাঘ বাণিজ্য। বাঘের অস্তিত্ব সংকটের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে অনিরাপদ বিচরণস্থল, খাদ্যাভাব, মানুষের উপদ্রব আর চোরা শিকার বা গুপ্তহত্যা। বাঘের বনভূমি লুটপাট, বাঘ ও বনজীবীর খাদ্য নিশ্চিহ্ন করে এবং বাস্তুসংস্থান উল্টেপাল্টে দিয়ে সুন্দরবনের খাদ্যহীন বাঘ-বনজীবীর পরস্পর বিরোধী অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
একাধিক জরিপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ হাজার ৮৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাঘ বিচরণ করে। এদের বিচরণের প্রধান ক্ষেত্র বাগেরহাটের কটকা, কচিখালী ও সুপতি; সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ, দোবেকি ও কৈখালী এবং খুলনার নীলকমল, পাটকোষ্টা ও গেওয়াখালী। এই তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে ওই জরিপটি চালানো হয়। এরমধ্যে বাগেরহাটে ১৭টি, সাতক্ষীরায় ১৩টি ও খুলনায় আটটি বাঘের ছবি ধারণ করা হয়েছিল। যদিও এ পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে পরে জানিয়েছে বনবিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিন পরিস্থিতিতে বাঘ লোকালয়ে এসে হত্যার শিকার হয়। পশ্চিম বন বিভাগে বাঘ লোকালয়ে আসার ঘটনা বেশি ঘটে। প্রথমত, বাঘ যে এলাকায় থাকে সে এলাকায় খাবারের অভাব। দ্বিতীয়ত, দুই আড়াই বছর বয়সে বাঘ তার মাকে ছেড়ে আলাদা হয়ে যায়। এসময় বাঘ তার নিজস্ব জায়গা নির্ধারণ করার জন্য এলাকা খুঁজতে খুঁজতে বনের বাইরে আসতে পারে। তৃতীয়ত, বৃদ্ধ হয়ে গেলে বা অসুস্থ হলে বাঘ তার নিজ এলাকা হারিয়ে ফেলে। আরেকটি বাঘ তার এলাকা দখল করে নেয়। তখন ওই বাঘ সহজেই খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ হচ্ছে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক রক্ষক। বাঘ কমলে সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্যের ওপর হুমকি বাড়বে। তাই শুধু বাঘ নয় বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষায় এবং সকল জীববৈচিত্র রক্ষায় আরো উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে। আর তা না হলে বিপন্ন হবে বাংলাদের গৌরব বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০১০ সালে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণি হিসেবে ঘোষণা করে। সুন্দরবন একাডেমি খুলনার নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ২০০৪ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের দেখা গেছে, দেশে বাঘ কমে দাঁঁড়িয়েছে ১০৬টিতে। সে হিসেবে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা মাত্র কয়েক বছরেই এক-চতুর্থাশ কমেছে। আর কবে বনবিভাগ এই বিশ্বঐতিহ্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন? সুন্দরবন বাঘ শূন্য হলে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।