Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অস্তিত্ব সঙ্কটে খাল-বিল

নোয়াখালী অঞ্চলে নদ-নদীর চিত্র

| প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

লাখ লাখ পরিবারের রুটিরুজির পথ রুদ্ধ
আনোয়ারুল হক আনোয়ার : অভিন্ন নদীগুলোর উপর ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুপ প্রভাব দেশজুড়ে। শুধু পদ্মা তিস্তাই নয়। মেঘনা উপকূলবর্তী নোয়াখালী অঞ্চলে নদী, সংযোগ খাল, জলাধার, ডোবানালায় পলি জমে ভরাট হচ্ছে। ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার এতদ্বঞ্চলে নদ নদী প্রবাহ ও নাব্যতা সংকট চলছে। গত এক দশক মেঘনার ৫টি শাখা খাল অস্তিত্ব হারিয়ে সেখানে এখন জনবসতি গড়ে উঠেছে।
মেঘনার বুক চিরে অসংখ্য ডুবো চর জেগে ওঠায় নৌ-যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি পানি সরবরাহ পথ বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ পরিবারের জীবন জীবিকার পথ রুদ্ব হবার উপক্রম হয়েছে। মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে এক সময়ের খর¯্রােতা খাল বিল ডোবা নালা। শুস্ক মৌসুমে পানি সেচের মাধ্যমে হাজার হাজার মেট্রিক টন ইরিবোরো এবং রবিশস্য চাষ মারাতœক ব্যহত হচ্ছে। গত তিন দশকে নোয়াখালী অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খালের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। বিশেষ করে পলিমাটি জমে এগুলোর নাম নিশানা বিলীন হয়েছে। এক সময় এতদ্বঞ্চলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নৌপথ ছিল প্রধান মাধ্যম । কিন্তু এখন সেটা অতীত ।
ছোট ফেনী নদী ও ভাবনী নদীর সাথে যুক্ত কোম্পানীগঞ্জের শংকর বংশী খাল, চর এলাহী খাল, ভাবনী খাল, মাছুয়াদনা খাল, চর হাজারী খাল, চর পার্বতী খাল, কদমতলা খাল, বাংলাবাজার খাল, নোয়াখালী সদরের নোয়াখালী খাল ও ছাগলমারা খালের বিভিন্ন অংশে পলি জমে পানির প্রবাহ রুদ্ব হয়েছে। এরমধ্যে ৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নোয়াখালী খাল পলিমাটি ভরাট হয়ে এখন ড্রেনে উপনীত হয়েছে। উল্লেখ্য, নোয়াখালী অঞ্চলে মেঘনার ১৫টি সংযোগ খাল ও শাখা খালের মধ্যে নোয়াখালী খালটি কোনক্রমে অস্তিত্ব টিকে আছে। অবশিষ্ট কয়েকটি শাখা খালের নাম চিহ্ন পর্যন্ত নেই। নোয়াখালী সদরের দত্তের হাট ছাগলমারা খাল দিয়ে পশ্চিমে ওদার হাট ও খলিফার রুটে অসংখ্য নৌ-যান চলাচল করত। চৌমুহনী খালের মাধ্যমে সেনবাগ যাত্রী ও পণ্য পারাপার হত। মেঘনার আরেকটি সংযোগ খাল সোনাগাজী, ছিলোনিয়া, সেনবাগ হয়ে নাঙ্গলকোর্ট উপজেলার পর্য্যন্ত বিস্মৃত। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এক সময় উক্ত খালের মাধ্যমে নৌ-যোগাযোগ হলেও সোনাগাজীর দক্ষিনে খালের মুখে পলিজমে এখন এটি নালায় পরিণত হয়েছে ।
মেঘনার বিভিন্ন অংশে পলিমাটি জমে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা হুমকির সন্মুখীন। মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলার পশ্চিমে হাতিয়া নদীতে কমপক্ষে ১৫টি চর ও ডুবোচর জেগে ওঠায় তমরদ্দি ঘাট থেকে ঢাকাগামী নৌ-যান ১৫ কিলোমিটার গতিপথ পরিবর্তন করে চলাচল করছে । এরমধ্যে ঢালচর, মৌলভীরচর, গাসিয়ার চর, বদনার চর ও তেল্লার চর জেগে উঠায় অচিরেই নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলীয় বিশাল মেঘনা অতিক্রম করে বন্দর নগরী চট্রগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ও পন্য পরিবহন এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে সন্ধীপ, হাতিয়া ও রামগতি চ্যানেলে নৌ-পরিবহন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব নৌ-চ্যানেলে অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হওয়ায় গত এক বছর ২০টি নৌ-যান দূর্ঘটনার শিকার হয় । এছাড়া চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া নলচিরা পর্য্যন্ত ২০ কিলোমিটার নৌ-পথের মধ্যে অন্তত ১৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত হয়েছে ।
চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর সংযোগকারী চাটখিল-ডল্টা-হাজীগঞ্জ-মহেন্দ্র খালের অবস্থান। চাটখিলের দেলিয়াই থেকে পূর্ব দিকে মহেন্দ্রখাল প্রবাহিত । অপরদিকে পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে কচুয়া খাল। চাটখিল-ডল্টা রুটে বীরেন্দ্র খাল রয়েছে। কিন্তু ডাকাতিয়া নদী থেকে পানি প্রবাহ বন্ধু হওয়ায় এখানকার মহেন্দ্র খাল ও বীরেন্দ্র খাল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে । ফলে চারটি উপজেলার লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে এক ফলস উৎপাদন সম্ভব।
ভারত পদ্মা তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে এক তরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালী অঞ্চলে। গুরুত্বপূর্ণ নোয়াখালী খাল ছিল এতদ্বঞ্চলের লাখ লাখ অধিবাসীর ভরসাস্থল। নোয়াখালী খাল দক্ষিণে মেঘনা নদীর সাথে যুক্ত হবার সুবাদে এক সময় হাজার হাজার মানুেেষর কর্মস্থল ছিল নোয়াখালী খাল ঘিরে। চৌমুহনী বাজার থেকে চৌমুহনী খালের মাধ্যমে পণ্যবাহী শত শত নৌকা রায়পুর, রামগঞ্জ, চাটখিল, সোনাইমুড়ীতে চলাচল করত। তেমনিভাবে চৌমুহনী বাজার থেকে পালতোলা সাম্পান গ্রাম বাংলার হাট বাজারে পণ্য সামগ্রী পৌছে দিত।
এক সময় মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল নোয়াখালী অঞ্চল । খাল, বিল, ডোবা, নালায় শতাধিক প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত । অপরদিকে নোয়াখালী অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্বতা । গত দুই দশকে বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে লাখ লাখ অধিবাসী। বর্ষা মৌসুমে জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে উল্লেখিত সব ক’টি খালের সাথে সংযোগ রয়েছে দক্ষিণের মেঘনা নদী। সূবর্ণচর উপজেলার সাথে সংযোগকারী নোয়াখালী খালের চরমজিদ অংশে তিন দশক পূর্বে পলি জমে নদীর গতি পরিবর্তন ঘটে । এতে করে এতদ্বঞ্চলের শাখাখালগুলোর সাথে মেঘনার গতিপথ রুদ্ব হয়। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাল-বিল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ