পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : দেড় সহ¯্রাধীক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভোলা কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশনটি চালু করার ছয় মাসের মধ্যেই গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২ সেপ্টেম্বর ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন থেকে বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও গ্যাস পাইপ লাইনে পানি ও বালু চলে আসায় ইউনিটটির উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তীতে সীমিত গ্যাস সরবরাহ শুরু করে ৬৫ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট চালু করা হলেও অপর দুটি ইউনিটই এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। ফলে জাতীয় গ্রীডে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম সরবরাহ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের পশ্চিম জোনের ২১টি জেলায়ও বিদ্যুৎ ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে। লোড শেডিং বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার ইতোমধ্যেই নিয়মিত বিড়ম্বনায় পরিণত হয়েছে।
অথচ ভোলার গ্যাসের মজুদের উপর নির্ভর করেই জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নে প্রায় ২০ একর জমির উপর ১ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৩-এর জুন মাসে। প্রকল্পটির জন্য ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১শ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করেছে। বাংলাদেশের সরকারি কোষাগার থেকেও শতাধীক কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে প্রকল্পটির জন্য। গতবছর জুলাই মাসের শুরুতেই প্ল্যান্টটির নির্মাণ কাজ শেষ করে তা উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হলেও শুধু গ্যাস সরবরাহের অভাবে ৩ মাস বিলম্বিত হয় তা চালু করতে। গতবছর ২৪ সেপ্টেম্বর ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। তবে ‘জিই-ফ্রান্স’-এর এ প্ল্যান্টটির ৩টি ইউনিট-এর মেশিনারীর উৎপাদন ক্ষমতা কারিগরিভাবে ১০% কম থাকায় ২২৫ মেগাওয়াটের পরিবর্তে ৬৫ মেগাওয়াট করে ১৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। এর মধ্যে ৬৫ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে প্রতিদিন ৩৫ এমএমসিএফটি গ্যাস ব্যবহারের কথা। দুটি ইউনিটে ব্যবহৃত গ্যাসের তাপের সাহায্যেই অতিরিক্ত কোনো গ্যাস ছাড়াই কম্বাইন্ড সাইকেল ভিত্তিতে সাফল্যজনকভাবে তৃতীয় ইউনিটটিও চালু করা সম্ভব হয়।
এমনকি ভোলায় স্থাপিত এ পাওয়ার স্টেশনটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির লক্ষ্যে ভোলা-বরিশাল ৬৫ কিলোমিটার ২২৫ কেভি ডবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইনসহ দুই প্রান্তে গ্রীড সাব-স্টেশন নির্মাণেও ৩ শতাধীক কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির পেছনে ব্যয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু অনেকটা রাজনৈতিক বিচেনায় নির্মিত এত বড় কারিগরি প্রকল্পটি নিয়ে ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষের দুঃশ্চিন্তার মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। ভোলা গ্যাস ফিল্ডের ৩ ও ৪ নম্বর কূপ দুটি থেকে পাওয়ার স্টেশনটিতে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ৪ নম্বর কূপ থেকে প্রথমে পানি ও পরে বালু আসতে শুরু করায় ইতোমধ্যে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ৩ নম্বর কূপের সীমিত গ্যাস দিয়ে পাওয়ার স্টেশনটির ১টি মাত্র ইউনিট থেকে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পাওয়ার স্টেশনটির দায়িত্বশীল মহলে আলাপ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপরোক্ত বিষয়সমূহ স্বীকার করে যত দ্রুত সম্ভব বিকল্প ব্যবস্থায় গ্যাস সরবরাহ করে স্টেশনটির ৩টি ইউনিটই চালু করার চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়। তবে ঠিক কবে নাগাদ তা সম্ভব হবে সে ব্যাপারে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দায়িত্বশীল মহল কিছু বলতে পারেননি। তাদের মতে, পুরো বিষয়টি গ্যাস সরবরাহের উপর নির্ভরশীল, যা পিডিবির হাতে নেই।
তবে এ ব্যাপারে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘সুন্দরবন গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড’-এর দায়িত্বশীল মহল নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৪ নম্বর কূপটি থেকে গ্যাসের সাথে পানি ও বালু উঠতে শুরু করায় কূপ খননকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স তা আপাততঃ বন্ধ করে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বাপেক্স দুই নম্বর কূপটি চালু করে ৪ নম্বর কূপটি টিটমেন্ট করবে বলে জানানো হয়েছে। গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মতে, ‘যত দ্রুত সম্ভব বাপেক্স এসব কাজ করবে’ বলে জানালেও ঠিক কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা তাদের বলতে পারেনি বলে জানান ঐ কর্মকর্তা। তবে এ ব্যাপারে বাপেক্সর দায়িত্বশীল মহলে যোগাযোগ করেও কারো কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৯২-৯৩ সালে সরকার ভোলার শাহবাজপুরে প্রথম পরিক্ষামূলক কূপ খননের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সরকারি খনিজ অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠান বাপেক্স খনন কাজ শুরু করে প্রথম কূপেই গ্যাসের সন্ধান লাভ করে ১৯৯৫ সালের ৮ নভেম্বর। কিন্তু এর পরে দীর্ঘদিন ঐ গ্যাস ফিল্ডটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পরে ২০০২-০৩ অর্থবছরে দ্বিতীয় এ প্রাইজাল কূপ খনন কাজ শুরু করে সেখানেও সাফল্যজনকভাবে গ্যাসের সন্ধান লাভ করে বাপেক্স। এর পরেও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয় ভোলায় প্রাপ্ত গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে। বিগত মহাজোট সরকারের সময় গ্যাজপ্রম-এর সাথে চুক্তির আওতায় ৩ ও ৪ নম্বর কূপ খনন করে সেখান থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়।
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল ভোলার গ্যাস বরিশালে এনে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত করার। সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী সিরাজগঞ্জে জাতীয় গ্রীড থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে তা কুষ্টিয়াÑযশোরÑখুলনা হয়ে বাগেরহাট পর্যন্ত নিয়ে আসছে। অথচ ভোলার গ্যাস বরিশাল-পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত করা সহজসাধ্য হলেও ভোলার মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা লাভ করতে না পারার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে পেট্রো বাংলা কর্তৃপক্ষ। তবে ভোলার বর্তমান পাওয়ার প্ল্যান্টটির মধ্যেই ২২৫ মেগাওয়াটের আরও একটি অনুরুপ প্ল্যান্ট নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব সম্প্রতি একনেক-এর চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে।
তবে বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের মতে ভোলার মতো সাইক্লোন জোনে এত বড় মাপের পাওয়ার স্টেশন করার ঝুঁকি না নিয়ে তা বরিশালের মতো ‘পাওয়ার লোড সেন্টারে’ করলে ফ্রিকোয়েন্সিতে সমতা আনতে সহায়ক হতো, যা গোটা পশ্চিম জোনের ২১টি জেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে যথেষ্ট টেকশই করতো বলেও মনে করছেন মহলটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।