Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অপহরণের ৯ মাস পর লাশ হয়ে ফিরল রুনা!

প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা : ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের সাহেবালী মোল্লার মেয়ে স্কুল ছাত্রী রুনা আক্তার (১৫) অপহরণের ৯ মাস পর সোমবার রাতে পিতার বাড়িতে ফিরল লাশ হয়ে।
ঢাকার আশুলিয়া থানার অধীনে কাইচাবাড়ি এলাকার একটি টিনসেড ভাড়া বাসার ভিতর থেকে রোববার রাতে আশুলিয়া থানা পুলিশ ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় রুনার লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় রুনার অপহরণকারী আহাদকে (২৫) পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের জাঙ্গালপাসা হাজী আব্দুল মজিদ একাডেমীর ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী রুনা আক্তার ৯ মাস পূর্বে নিজ স্কুল থেকে অপহরণ হয়। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারে একই উপজেলাধীন আজিমনগর ইউনিয়নের কর্নিকান্দা গ্রামের মামুন হাওলাদারের ছেলে আহাদ হাওলাদার (২৫) রুনাকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে গেছে। এই আহাদ এলাকার কুখ্যাত বখাটে ও মোবাইল প্রতারণা চক্র ওয়েলকাম পার্টির সদস্য।
রুনার পিতা সাহেবালী জানান, লোকলজ্জার ভয়ে আমরা এই ঘটনাকে নিয়ে থানা পুলিশ না করে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকি। অপহরণের কয়েকমাস পর আমাদের বাড়ির মোবাইলে একটি অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে আমার মেয়ের কয়েকটি কথা শুনার পর ফোনটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরূপ কয়েকবার ভিন্ন ভিন্ন সিম থেকে মোবাইল আসে। আমরা আমার মেয়ের সাথে ভালভাবে কথাও বলতে পারি নাই। শুধু বুঝতে পারি আমার মেয়ে বেঁচে আছে। রোববার দুপুরে একটি অচেনা মোবাইল থেকে ফোন করে রুনা তার মাকে বলে মা আমি ভাল নাই, আমাকে বাঁচাও। ফোন চলাকালে মনে হল কেউ আমার মেয়ের কাছ থেকে ফোনটি কেড়ে নিয়েছে যাতে আর কোন কথা বলতে না পারে। রোববার রাতে বখাটে আহাদের কথিত এক খালু আমাদের বাড়ির মোবাইলে জানায় রুনার অবস্থা ভাল না। ঢাকার আশুলিয়া এলাকার একটি হাসপাতালে সে ভর্তি আছে।
তার কথামত রুনার পরিবারের লোকজন ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় গিয়ে জানতে পারে রুনার লাশ আশুলিয়া থানায় রয়েছে। গভীর রাতে তারা থানায় গিয়ে রুনার লাশ শনাক্ত করেন। সোমবার সকালে থানা থেকে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে আশুলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় রুনার লাশ সোমবার রাতে নিজ বাড়ী ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মিয়াপাড়া গ্রামে নেয়া হয়।
রুনার লাশ তার গ্রামে নিয়ে আসলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। সুন্দরী ও মেধাবী ছাত্রী রুনা দীর্ঘদিন অপহৃত থেকে অবশেষে ফিরে আসে লাশ হয়ে। এ ঘটনায় পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি সহপাঠী ও এলাকাসীর মধ্যেও কান্নার রোল পড়ে যায়।
নিহতের মা তাসলিমা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, বখাটে আহাদ অপহরণ করে নিয়ে আমার মেয়েকে দিনের পর দিন আটকে রেখে নির্যাতন করেছে। আমাদের সাথে কোন খোঁজ-খবর নিতে দেয়নি। ঢাকার ওই ভাড়া বাসায় আহাদ তার বাবা-মা ও আমার মেয়েকে নিয়ে থাকত। আমার মেয়েকে তারা নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমার মেয়েকে হত্যা করে আহাদের পরিবারের লোকজন ওই বাসা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পুলিশ অপহরণকারী আহাদকে গ্রেফতার করেছে।
এ ব্যাপারে লাশ উদ্ধারকারী আশুলিয়া থানার এসআই কামরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এই খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি ঘরের ভিতর থেকে রুনার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের সময় রুনার স্বামী পরিচয়কারী আহাদ পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক অবস্থায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করে লাশের ময়নাতদন্ত করে পরিবারের লোকজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Sazzadur Rahman Sajib ৩১ মার্চ, ২০১৬, ১০:২৮ এএম says : 0
    আর কত লাশের খবর শুনব
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অপহরণের ৯ মাস পর লাশ হয়ে ফিরল রুনা!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ