পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল, বরগুনা থেকে ফিরে : বরগুনা জেলা সদরের হেউলিবুনিয়া গ্রামের নারগিস আক্তার নুপুর। গ্রামে হাঁস-মুরগি ও মাছ চাষ করে সাফল্যের নজির গড়েছেন তিনি। নিজের অবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দিয়েছেন এলাকার অনেকের। এসএসসি পাস করার পর পরই মা-বাবা বিয়ে দিয়েছেন। তার স্বামীর নাম হারিছ মৃধা। রায়হান (৪) নামে তাদের একটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর প্রথম দিকে অবস্থা বেগতিক ছিলো। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর এলাকার অন্যান্যদের মতো তাদেরও সবকিছু শেষ করে দেয়। মাছের ঘের থেকে শুরু করে সবকিছু নষ্ট করে দেয় সিডর জানান নুপুর। একই সঙ্গে মাছেরও দাম কমে যায়। পরিবারের পথে বসার উপক্রম হয়। সবকিছু হারিয়ে বিপাকে পড়েন নূপুর। পরবর্তীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের মাইক্রো এন্টারপ্রেইনার প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ নেন।
প্রথম ২টি ঘেরে মাছ চাষ ও ঘেরের উপরে হাঁস-মুরগির খামার দিয়ে শুরু হয় তার ব্যবসা। পরে ৪টি এবং নতুন করে আরও একটি পুকুরে মাছের ঘের করেছেন। পাশাপাশি ঘেরে হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। তার খামারে হাঁস ২০০টি। কয়েকদিন আগেও ৭০০টি ছিল। সম্প্রতি বিক্রি করেছেন। বয়লার মুরগি আছে ৪০০টি। একই সঙ্গে মাছের ঘের ৫টি। এর মধ্যে সম্প্রতি একটি ঘেরের মাছ বিক্রি করেছেন।
এখন আরও গভীরতার জন্য মাটি কাটছেন। মাছ, হাঁস-মুরগির খামারের পাশপাশি ঘেরের পাশে কলা, নারকেল, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, বরবটি, সিম ইত্যাদি কৃষি পণ্য চাষ করছেন। পরিবারের চাহিদা পূরণ করে এসব পণ্য থেকেও ভালো আয় করছেন নূপুর।
তিনি বলেন, সুদে টাকা নিলে শতকার ১০ টাকা দিতে হয়। আহ্ছানিয়া মিশন থেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে আস্তে আস্তে পরিশোধ করি। এমনকি সপ্তাহে সপ্তাহে হাঁস-মুরগি, ডিম ও মাছ বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করছি। শেষ বার নিয়ে চারবার ঋণ গ্রহণ করেছেন। সর্বশেষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন এ বছরের জানুযারি মাসে। এর আগে ৩০ হাজার এবং ২০ হাজার করে ঋণ নিয়েছেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন থেকে। নূপুর বলেন, বর্তমানে তিনি ১২০ শতাংশ জমির উপর গড়ে তুলেছেন হাঁস-মুরগি ও মাছের খামার। প্রথম বছরে মাছ ও হাঁস-মুরগি বিক্রি করে লাভ পেয়ে বাড়াতে থাকেন খামার ও ঘেরের পরিধি। এখন ৪টি পুকুরে চাষ হচ্ছে ভিয়েতনামী কৈ, তেলাপিয়া, রুই, কাতল ও পাঙ্গাশ মাছ। ১টিতে মাগুর মাছের চাষ করছেন। এছাড়া আরও একটি মাছের ঘের বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
নারগিস আক্তার নূপুর জানান, এখন অনেক ভালো আছেন। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। নিজে এবং পরিবারকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলে এলাকার মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন। এলাকার সবাই এবারই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার জন্যও বলেছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে একজন নিকাটাত্মীয় নির্বাচন করায় তিনি এবার নির্বাচন করেননি। তিনি জানান, অন্যদের চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম বলে এলাকার সবাই তাকে অনেক পছন্দ করে। এদিকে নূপুর শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন; তা নয়। নিজের সফলতার বিষয় এবং এভাবে যে অন্যরাও স্বাবলম্বী হতে পারে সে বিষয়ে এলাকার সবাইকে বলছেন নূপুর। তারই অনুপ্রেরণায় এলাকায় প্রায় ১০০টি ঘের তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়। নারগিস আক্তার নূপুর বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মাছের পোনা এবং খাবার দেয়া হয়েছিল। ওই সময়ে মৎস্য অফিস থেকে ৩ বার মাছের খাবার পান তিনি। তিনি বলেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে মাছ, হাঁস-মুরগরি অসুখ হলে সহায়তা পেলে আরো উপকৃত হতেন।
ব্যবসায় ভালো করলেও কিছু সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেন নূপুর। তিনি জানান, মাছ ও হাঁস-মুরগরি খাবারের দাম কম হলে খামার করে আরো বেশী আয় করা সম্ভব। তিনি জানান, আগের দিনে মাছ চাষ করে যে কেউ অনেক বেশি লাভবান হতেন। অথচ এখন আর কিছুতেই সেটা সম্ভব নয়। আগের তুলনায় লাভ নেমে এসেছে অর্ধেকে। সবকিছু দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছ কয়েকগুণ। নূপুর জানান, মাছের খাবারের দাম বেশি অথচ সে হারে বাজারে মাছের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। নুপুর জানান, বরগুনা থেকে এক বস্তা খাবার আনতে খরচ পড়ে ২৫শ’ টাকা। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগও মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
মাছ ও হাঁস-মুরগির খামাড় নিয়ে পরামর্শ নিতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ তার কাছে আসেন, তিনি তাদেরকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও নূপুর যখন কোনো বিষয়ে সমস্যায় পড়েন তখন দ্রুত উপজেলা মৎস্য অফিসে গিয়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেন বলে উল্লেখ করেন।
বর্তমান সফলতার বিষয়ে নুপুর বলেন, ব্যবসা করতে মূলধন লাগে না, স্বপ্ন ও সাহস লাগে। আমিই এর বড় প্রমাণ। যখন ব্যবসা শুরু করি তখন সাহস, সততা আর পরিশ্রম করার মানসিকতা ছাড়া আর কোন মূলধনই ছিল না আমার।
বর্তমান অবস্থানের জন্য আহ্ছানিয়া মিশনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে আমি এবং আমার পরিবার অনেক ভালো আছি। এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি আমাদের পরিশ্রম এবং আহ্ছানিয়া মিশনের সহযোগিতা। মিশনের সহায়তা না পেলে এ পর্যন্ত আসা সম্ভব হতো না। আহ্ছানিয়া মিশনের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের বরগুনা জেলা সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন জানান, নুপুর শুরু থেকেই তার ব্যবসার বিষয়ে আত্মপ্রত্যয়ী ছিল। বিষয়টি মাথায় রেখেই তাকে ঋণ দেয়া হয়েছে। সে এখন এলাকার সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমরাও এক্ষেত্রে সফল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।